ধান - বাংলা রচনা [ ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০]

উপস্থাপনা ঃ

ধান গাছ এক প্রকার তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। উহা একবার মাত্র ফল উৎপাদন করে মরে যায়। তাই প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে ধানের চাষ করতে হয়। আমরা ধান হতে তৈরি চালের ভাত খেয়ে জীবন ধারণ করি। ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য। তাছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ অধিবাসীদেরই প্রধান খাদ্য ভাত ।

বর্ণনা : 

ধান তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। ধান গাছ সাধারণত ২/৩ হাত লম্বা হয় । নিচু ও সমতল ভূমিতে ধানের চাষ ভাল হয়ে থাকে। ধান গাছ ৬/৭ হাত লম্বা হতেও দেখা যায় । ধান পাকলেই গাছগুলো মরে যায় ।

উৎপত্তি স্থান : 

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কম-বেশি ধানের উৎপাদন হয়ে থাকে । তবে পৃথিবীর গ্রীষ্ম প্রধান দেশেই অর্থাৎ এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে ধানের উৎপাদন বেশি হয়। শীত প্রধান অঞ্চলে ধানের উৎপাদন খুব কম হয়ে থাকে। আমাদের বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেশি তবে লোক সংখ্যানুপাতে উৎপাদন আশানুরূপ নয় । আমাদের সরকার ধানের ফলন বাড়ানোর জন্য নানান উপায়ে আধুনিক বৈজ্ঞানিক চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করছে।

আরও পড়ুন :- বাংলা প্রবন্ধ রচনা : বৃক্ষরোপণ অভিযান

ধানের প্রকারভেদ :-

ধান নানা জাতের হয় । তবে আউশ, আমন, ইরি ও বোরোই আমাদের দেশে দেখা যায়। আউশ ধান ফাল্গুন- চৈত্র মাসে বপন করতে হয়। ধান বপনের পূর্বে জমিকে উত্তমরূপে চাষ দিতে হয়। আউশ ধান সাধারণত উঁচু জমিতেই হয়ে তাকে । আমন ধান নিচু জমিতে বপন করা হয়। বোরো ধানের চারা নিচু জমিতে লাগাতে হয় এবং ঐ সমস্ত জমিতে সব সময় পানি থাকতে হয়। অনুরূপ ইরি ধানের জন্যও সব সময় পানির প্রয়োজন ।

উৎপাদনের সময় : 

জমিতে উত্তমরূপে চাষ ও মই দিয়ে ধান বুনতে হয়। বৃষ্টি হলে জমিতে যাতে পানি জমতে না পারে সে জন্য সমতল ভূমি আউশ ধানের জন্য উপযোগী। ধানের চারাগুলো বড় হলে আগাছাগুলো বের করে ধান ক্ষেত পরিষ্কার করে দিতে হয়। সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাসে ধানের চারা বের হয় এবং আষাঢ়ের শেষ ভাগ বা শ্রাবণের প্রথম ভাগে ধান পেকে যায়, তখন কৃষকেরা মনের আনন্দে পাকা ধান কাটে।

আমন ধান সারা বর্ষাকালে পানির উপর মাথা ভাসিয়ে বাতাসের সঙ্গে খেলা করে। এ শ্যামল ধান গাছের উপর দিয়ে দক্ষিণা বাতাসের ঢেউ খেলে যায় । এ দৃশ্য বড়ই মনোরম । আশ্বিন মাসে এ ধানের শীষ বের হয় এবং অগ্রহায়ণ মাসে ধানগুলি পাকতে শুরু করে।

মাঠে সোনালী ধান দেখে কৃষকের আনন্দ আর ধরে না। বোরো ধান নিচু জমিতেই ফলে। নিছু জমিতে এ ধানের চারা লাগাতে হয়। চৈত্র মাসের শেষাংশে অথবা বৈশাখের প্রথম ভাগে বোরো ধান পাকে, তখন ধান কাটা হয়। সাম্প্রতিককালের ইরি ধান বৈজ্ঞানিকদের এক বিরাট অবদান। এ ধানের ফলন ৪/৫ গুণ হয় । ইহা প্রায় সব ঋতুতেই উৎপাদন হয়। আমাদের দেশে এর চাষ প্রধানত পৌষ-মাঘ মাসেই করা হয়। তবে এখন ব্যাপকভাবে এর চাষ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন :- অধিক খাদ্য ফলাও : প্রবন্ধ রচনা [ ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ]

ধান সংগ্রহ : 

আমাদের দেশে উঠানে অথবা শক্ত পরিষ্কার মাটিতে কাটা ধান গাছগুলোকে ছড়িয়ে গরু, মহিষ দিয়ে মাড়িয়ে গাছ হতে ধান পৃথক করে নেয়া হয়। ধান বের করে ফেললে যা থাকে তাকে খড় বলে । খড় গরুর প্রধান খাদ্য। আবার অনেকে কাটা ধান পিটিয়েও ধানগুলোকে পৃথক করে নেয় । ইদানিং মেশিনের সাহায্যে ধান মাড়াই করা হয় ।

প্রয়োজনীয়তা :

ধান হতে চাল হয় এবং চাল হতে ভাত হয়। ভাত বাঙালীর প্রধান খাদ্য । ধান হতে আরো নানা প্রকার মুখরোচক খাদ্য তৈরি করা হয়। ধান হতে খৈ, মুড়ি, চিড়া প্রভৃতি উৎপন্ন হয় । চাউল হতে মিষ্টান্ন, পিঠা প্রভৃতি প্রস্তুত হয়। ধানের তুষকে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা চলে। ধানের খড় গরুর প্রধান খাদ্য।

উপসংহার : 

ধান পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসীর প্রধান খাদ্য। খাদ্যগুণে ভাত সুস্বাদু ও মুখরোচক এবং সর্বত্র সমাদৃত। কিন্তু উৎপাদন ব্যয় অধিক । এককালে বাঙালী কৃষকের গোলা ভরা ধান ছিল। তাদের মুখে ছিল হাসি, হৃদয়ে ছিল বল। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এখানে খাদ্য শস্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ধানের ফলন বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রচেষ্টার সাথে আমাদের সকলের একাত্বতা করা উচিৎ।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad