সংজ্ঞা :- দ্বি-স্তরবিশিষ্ট আবরণী ঝিল্লি দ্বারা সীমিত সাইটোপ্লাজমস্থ যে অঙ্গাণু তে ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট প্রক্রিয়া, ফ্যাটি এসিড প্রক্রিয়া ইত্যাদি ঘটে থাকে এবং শক্তি উৎপন্ন হয় সেই অঙ্গানুকে মাইটোকন্ড্রিয়া (Mitochondria) বলে।
মাইটোকন্ড্রিয়ার চিত্র:-
মাইটোকন্ড্রিয়া আবিষ্কার :
১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে অল্টম্যান ( Altman ) মাইটোকন্ড্রিয়ন এর উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। কিন্তু ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে বেন্ডা (Benda) মাইটোকন্ড্রিয়ন এর নামকরণ করেন।
মাইটোকন্ড্রিয়ার আকার ও আয়তন :
আকার ভেদে মাইটোকন্ড্রিয়ার আয়তন বিভিন্ন রকম। বৃত্তাকার মাইটোকন্ড্রিয়ন এর ব্যাস ০.২ মাইক্রন থেকে ২ মাইক্রন। দন্ডাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার দৈর্ঘ্য ৭০ মাইক্রন পর্যন্ত হতে পারে।
মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যা :
কোষ ভেদে মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যা বিভিন্ন রকম। ব্যাকটেরিয়া ও নীলাভ সবুজ শৈবালে মাইটোকন্ড্রিয়ন দেখা যায় না। কোন কোন শৈবালের প্রতি কোষে মাত্র ১টি মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে । সাধারণত উদ্ভিদের প্রতি কোষে মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০টি। প্রাণির যকৃত কোষে সহস্রাধিক মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে । সীঅর্চিন এর ডিম্বাণুতে চৌদ্দ হাজার থেকে লক্ষাধিক মাইটোকন্ড্রিয়া দেখা গেছে ।
আরও পড়ুন :- ক্লোরোপ্লাস্ট এর সংজ্ঞা, গঠন, কাজ -ক্লোরো, ক্রোমো ও লিউকো পার্থক্য
মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন :-
মাইটোকন্ড্রিয়ার দেহ প্রোটিন ও লিপিড নির্মিত দুটি একক আবরণী দিয়ে বেষ্টিত। বাইরের আবরণ মসৃণ কিন্তু ভেতরেরটি অনিয়ত ভাঁজ হয়ে আঙ্গুলের মতো কতকগুলো অভিক্ষেপ সৃষ্টি করে, এদের নাম ক্রিস্টি (Cristae; একবচনে - ক্রিস্টা)।
প্রত্যেক ক্রিস্টার গায়ে অক্সিসোম নামে কয়েকটি সুবৃন্তক গোল বস্তু থাকে। শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন এনজাইম অক্সিসোম সুবিন্যস্ত থাকে। এতে প্রায় ৭০ রকম এনজাইম এবং ১৪ রকম কো-এনজাইম আছে। প্রত্যেক অক্সিসোম এর তিনটি অংশ থাকে, যথা-ভিত্তি (Base), বৃন্ত (Stalk) ও মাথা (Head)। শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম অক্সিাসোম এর মাথা থেকেই বেরিয়ে আসে। মাইটোকন্ড্রিয়নের কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি দানাময় ম্যাট্রিক্সে পূর্ণ ।
মাইটোকন্ড্রিয়ার রাসায়নিক গঠনে প্রোটিন, লিপিড, RNA ও সামান্য পরিমাণ DNA থাকে।
মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের পাওয়ার হাউজ বলা হয় কেন ?
মাইটোকন্ড্রিয়ার গুরুত্ব :-
মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ
- কোষের সকল কাজের জন্য শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করা এর কাজ ।
- শ্বসনের বিভিন্ন পর্যায় যেমন- ক্রেবস্ চক্র, ইলেক্ট্রন ট্রান্সপোর্ট, অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন সম্পন্ন করা।
- কিছু পরিমান DNA, RNA উৎপন্ন করা করাও এর কাজ ।
- স্নেহ বিপাক ও প্রোটিন সংশ্লেষে অংশগ্রহণ করাও এর কাজ ।
- শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনে অংশগ্রহণ করা।
- কোষের পূর্বনির্ধারিত মৃত্যু (apoptosis) নিয়ন্ত্রণ করা।
- হরমোন ও রক্ত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করা ।
- এতে বিভিন্ন ধরনের ক্যাটায়ন, যেমন- Ca2+, S2+, Fe2+, Mn 2+ ইত্যাদি সঞ্চিত রাখা ।
আরও পড়ুন :- এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম কাকে বলে?গঠন,কাজ,পার্থক্য গলজিবস্তু সাথে
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি
★★ মাইটোকন্ড্রিয়া:-
- Altman সর্বপ্রথম পর্যবেক্ষণ করেন ।
- Kolliker সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন ।
- Benda সর্বপ্রথম নামকরণ করেন ।
- প্রজাতি ভেদে কোষে এদের সংখ্যা 200-400 বা 300-400 হয়।
- কোষের শক্তি উৎপাদনকারী সকল বিক্রিয়া এতে হয় । একে Power house বলা হয় । Mitochondria কোষের প্রধান শ্বসন অঙ্গ । সাইটোপ্লাজমে গ্রাইকোলাইসিস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
★★ Mitochondria এর অঙ্গাণু-
- বাইরের মেমব্রেন বা আবরণী
- DNA অণু
- ম্যাট্রিক্স (কো এনজাইম A পূর্ণ, DNA, কিছু রাইবোজোম ও ফসফেট দানা থাকে)
- ক্রিস্ট
- ATP-Syntheses theses
- রাইবোসোম
- ঝিল্পী লিপো-প্রোটিন সমৃদ্ধ
- 70S রাইবোসোম পাওয়া যায় যা এনজাইম সংশ্লেষণ করে ।
★★ Mitochondria এর উপাদান:
- ৬৫% প্রোটিন, লিপিড (২৫-৩০%, ফসফোলিপিড ৯০% ও কোলেস্টেরল ৫%)
- ৫% RNA ও সামান্য DNA ।
- খনিজ ধাতুর আয়ন (Ca, Mg, Mn Ag) ও ভিটামিন (B6, B12, K, E), ১০০ প্রকার এনজাইম ও ৭০ প্রকার কো এনজাইম ।