সংজ্ঞা :- অল্প কথায় কোষের সকল কাজ নিয়ন্ত্রণকারী কেন্দ্রে অবস্থিত সুস্পষ্ট অঙ্গটি হলো নিউক্লিয়াস । একে এভাবেও বলা যায় যে, প্রতিটি জীবকোষের প্রোটোপ্লাজমে যে অধিকতর ঘন ও অপেক্ষাকৃত স্পষ্ট অঙ্গটি বিদ্যমান তাকে কোষের নিউক্লিয়াস (Nucleous) বলে।
নিউক্লিয়াস এর চিত্র:-
নিউক্লিয়াসের গঠন :-
নিউক্লিয়াস চারটি অংশ নিয়ে গঠিত।
⧉ অংশগুলো হলো:-
- (ক) নিউক্লিয়ার মেমব্রেন (Neucleor Membrane)
- (খ) নিউক্লিওপ্লাজম (Neucleoplasm)
- (গ) নিউক্লিওলাস (Neucleolus) এবং
- (ঘ) ক্রোমোসোম (Chromosome) ।
নিম্নে এদের গঠন ও কাজ বর্ণনা করা হলো :-
গঠন :-
১। দ্বি-স্তর বিশিষ্ট কোষের স্বচ্ছ ঝিল্লীবৎ বহিরাবরণীই হলো নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ।
২। উপরের স্তরটি ছিদ্রযুক্ত এবং ভিতরের স্তরটি ছিদ্রবিহীন এবং
৩। রাসায়নিকভাবে ইহা প্রোটিন ও লিপিড দিয়ে গঠিত ।
কাজ :-
১। এর প্রধান কাজ হচ্ছে সাইটোপ্লাজম হতে নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস ও ক্রোমাটিন জালিকাকে পৃথক করা ও সংরক্ষণ করা ।
২। এটি এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর সাথে যুক্ত হয় নিউক্লিয়াস এর অবস্থানটিকে মজবুত করে।
আরও পড়ুন :- নিউক্লিওলাস সংজ্ঞা, গঠন, কাজ। নিউক্লিয়াস ও নিউক্লিওলাসের পার্থক্য
(খ) নিউক্লিওপ্লাজম (Neucleoplasm)
গঠন :
১। রাসায়নিকভাবে ইহা প্রোটিন, নিউক্লিয়িক অ্যাসিড ও কিছু এনজাইম দিয়ে গঠিত ।
২। এরা নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরস্থ প্রোটোপ্লাজমিক রস। নিউক্লিয়াস, নিউক্লিওলাস ও ক্রোমোসোম এতে অবস্থান করে।
কাজ :
১। ক্রোমোসোম ধারণ করা।
২। নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন জৈবিক কাজে সাহায্য করা।
৩। নিউক্লিয়াসের প্রয়োজনীয় এনজাইমের আধার হিসেবে কাজ করা।
(গ) নিউক্লিওলাস (Neucleolus)
গঠন :
১। নিউক্লিয়াসের মধ্যে যে ছোট ও অধিকতর ঘন গোলাকার বস্তু দেখতে পাওয়া যায় তাকেই বলা হয় নিউক্লিওলাস।
২। নিউক্লিওলাস সাধারণত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- (i) তন্তুময় (ii) দানাদার (iii) ম্যাট্রিক্স ।
৩। রাসায়নিকভাবে প্রোটিন, RNA এবং DNA দ্বারা গঠিত ।
কাজ :
১। এরা বিভিন্ন প্রকার RNA সংশ্লেষণ করে।
2। বিভিন্ন সময়ে প্রোটিন সংশ্লেষণ ও সংরক্ষণ করে থাকে।
(ঘ) ক্রোমোসোম : (Chromosome)
গঠন :
১। প্রত্যেক নিউক্লিয়াসেই সাধারণত প্রজাতির বৈশিষ্ট্য অনুসারে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোসোম থাকে ।
২। প্রতিটি ক্রোমোসোমে এক বা একাধিক সেন্ট্রোমিয়ার, ক্রোমোনেমা, পেলিক্যাল, ধাত্র এবং কখনও স্যাটেলাইট ও গৌণকুঞ্জন থাকে । এবং
৩। রাসায়নিকভাবে ইহা DNA, RNA, হিস্টোন ও ননহিস্টোন প্রোটিন দ্বারা গঠিত ।
কাজ :
১। ক্রোমোসোম বংশগতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ ও বহন করে ।
২। DNA-এর মাধ্যমে প্রোটিন সংশ্লেষণ করে ।
৩। কোষ বিভাজনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে ।
আরও পড়ুন :- মাইটোকন্ড্রিয়া কাকে বলে? মাইটোকন্ড্রিয়ার, গঠন, কাজ,ও গুরুত্ব
নিউক্লিয়াসকে কেন কোষের প্রাণ কেন্দ্র বলা হয় ?
নিউক্লিয়াসকে কোষের প্রাণ বলা হয়। কারণ :-
১। ইহা কোষের যাবতীয় বিপাকীয় কার্য নিয়ন্ত্রণ করে।
২। এর অপসারণে কোষের মৃত্যু ঘটে ।
৩। ইহা কোষ বিভাজনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ।
৪। নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ক্রোমোসোমের মাধ্যমেই জীবের বৈশিষ্ট্যাবলি বংশ পরস্পরায় সঞ্চারিত হয়। এ কারণেই নিউক্লিয়াসকে কোষের প্রাণ কেন্দ্র বলা হয়।
নিউক্লিয়াস এর কাজ :-
- ১। নিউক্লিয়াস একটি কোষের সকল জৈবনিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে কোষকে সজীব রাখে। এজন্য একে কোষের প্রাণকেন্দ্র বলে আখ্যায়িত করা হয়।
- ২। এটি মাইটোসিস ও মিয়োসিস বিভাজনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।
- ৩। জীবের বংশগতি নিয়ন্ত্রণ নিউক্লিয়াসের মাধ্যমেই ঘটে।
- ৪। এতে ক্রোমোসোম থাকে যার দ্বারা বংশ পরম্পরায় জীবের বৈশিষ্ট্য রক্ষা পায়।
- ৫। এরা RNA ও প্রোটিন সংশ্লেষণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
FAQs
২। কোন কোষে নিউক্লিয়াস থাকে না?
উত্তরঃ লোহিত রক্তকণিকা।
৪। কোন কোষে একাধিক নিউক্লিয়াস থাকে?
উত্তরঃ পেশি কোষে।