হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

রচনা: শ্রমের মর্যাদা(১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩০পয়েন্ট)

পোস্ট সূচিপত্র সমূহ

উপস্থাপনা : 

Industry is the mother of good luck. অর্থাৎ, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। মানবজীবনের উন্নতি-অগ্রগতি, সভ্যতা- সংস্কৃতি, এমনকি অস্তিত্বও শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। ক্ষুদ্র পিপীলিকা থেকে শুরু করে মানব-মহামানব পর্যন্ত সকলকেই পরিশ্রম করতে হয়। তাই সকলকেই শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।

শ্রমের প্রয়োজনীয়তা :

মানবজীবনে শ্রমের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কারণ শ্রম ব্যতীত পৃথিবীতে কোনোকিছুই অর্জন করা যায় না। শ্রম মানুষকে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করে। বিশ্বে যে জাতি শ্রমকে উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে সে জাতি দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে । আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করতে হলে শ্রমই একমাত্র সফলতার চাবিকাঠি।

আরও শিখুন: অধ্যবসায় – রচনা : ২০, ২৫, ৩০পয়েন্ট – pdf

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি : 

সংস্কৃত প্রবাদে আছে- “দৈব নং দেয় মিতি কাপুরুষংবদন্তি।” অর্থাৎ, দৈবলব্ধ অর্থের কল্পকাহিনী অলস কাপুরুষের স্বল্পবিলাস মাত্র। কোনো অলস ব্যক্তি নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে না। সৌভাগ্য কোথাও থেকে ধার পাওয়া যায় না। কঠোর শ্রমসাধনা দ্বারাই সৌভাগ্য অর্জন করতে হয়। পৃথিবীর সফল ব্যক্তিদের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নিরন্তর প্রচেষ্টা ও কঠোর শ্রমের দ্বারাই তারা নিজের ভাগ্য নির্মাণ করেছেন।

শ্রম সম্পর্কে ধারণা : 

শ্রম দু’প্রকার। শারীরিক শ্রম ও মানসিক শ্রম । আমরা অনেকেই শারীরিক শ্রমকে অমর্যাদাকর ও অসম্মানজনক মনে করি। আমাদের অনেকের ধারণা, শ্রমজীবী মানুষ যেমন চাষী, কুলি-মজুর, শ্রমিক- এরা ছোট জাতের মানুষ, কিন্তু তা ঠিক নয়। জাতীয় উন্নয়নে এদের অবদানই বেশি।

পরিশ্রমভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ :

মানুষ এ পৃথিবীতে সমাজ রচনা করেছে। সমাজের উন্নতির জন্য সবারই পরিশ্রম করা উচিত। কিন্তু সবার পক্ষে সমাজের সব কাজ করা সম্ভব নয়, তাতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা পরিহার করার জন্য মানুষ সমাজের শ্রেণিবিভাগ করেছে। শ্রম সাধারণত দু’প্রকার। যথা- ক. মানসিক শ্রম। খ. শারীরিক বা কায়িক শ্রম।

আরও শিখুন: স্বদেশ প্রেম রচনা ( ২০ পয়েন্ট ) – pdf

শ্রমের আবশ্যকতা : 

পার্থিব জীবনে মানুষ হিসেবে মর্যাদা নিয়ে সাফল্যজনকভাবে বাঁচতে হলে প্রয়োজন কঠোর শ্রম সাধনা। মানবজীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। কেউ কারো অন্নের সংস্থান করে দেবে না। নিজের অন্ন নিজেকেই জোটাতে হয়। এজন্য বেঁচে থাকার তাগিদে পরিশ্রম করতে হবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রমের গুরুত্ব : 

পবিত্র কুরআন ও হাদীসে শ্রমের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করা হয়েছে । রাসূল (স) বলেছেন, “যে মানুষ যত বেশি কর্তব্যনিষ্ঠ তার সফলতা তত বেশি হয়।” মহানবী (স) শৈশবকাল থেকেই শ্রমপ্রিয় ছিলেন। তিনি শৈশবে চাচার ব্যবসায় পরিচালনার জন্য সিরিয়া যেতেন। 

পরে তিনি শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শ্রমের মাধ্যমে জগতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রমিকের মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী (স) বলেছেন, “শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।” 

ভাগ্য নির্মাণ ও প্রতিভা বিকাশে পরিশ্রম : 

মানুষ একদিকে যেমন সভ্যতার স্রষ্টা, অন্যদিকে সে আপন ভাগ্যেরও কারিগর। মানুষ নিজের ভাগ্য নিজেই নির্মাণ করতে পারে শ্রমের মাধ্যমে। কারণ ভাগ্য নির্মাণের হাতিয়ার হলো পরিশ্রম। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- God helps those who help themselves. অর্থাৎ, “যে ব্যক্তি পরিশ্রম করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করবে না, আল্লাহও তাকে সাহায্য করবে না।” অন্যদিকে প্রত্যেক মানুষের মাঝে প্রতিভা লুকিয়ে থাকে। মানুষ পরিশ্রমের মাধ্যমেই তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে।

জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব :

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে দক্ষকর্মীর হাতে পরিণত করতে পারলে তা সমস্যা না হয়ে বরং জনশক্তিতে রূপান্তরিত হবে। যেমন- ১৪১ কোটি জনসংখ্যার দেশ চীন তার বিপুল জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করেছে। তাই পৃথিবীর বুকে তারা আজ এত উন্নত।

বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন, “ a hard working street cleaner is better man than a lazy scholar. অর্থাৎ একজন পরিশ্রমী পরিচ্ছন্ন-কর্মী একজন অলস পণ্ডিতের চেয়েও ভালো। জাতীয় উন্নয়নে শ্রমের কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্বকে অস্বীকার করে বর্তমান প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় সভ্য ও আধুনিক মানুষ হয়ে গড়ে ওঠা সম্ভব নয় ।

আরও শিখুন: চরিত্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা ( ২০ পয়েন্ট )

ব্যক্তিগত শ্রম ও জাতীয় উন্নয়ন : 

ব্যক্তির উন্নয়নের ওপর জাতীয় উন্নয়ন নির্ভরশীল। আবার ব্যক্তির উন্নয়ন পরিশ্রমের ওপর নির্ভরশীল। শ্রমবিমুখ ব্যক্তি জাতির বোঝা। অলস ব্যক্তি নিজে যেমন সমস্যায় জর্জরিত থাকে, তেমনি জাতীয় উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত করে। তাই ব্যক্তি, জাতি ও শ্রম একসূত্রে গাঁথা।

শ্রম ও সভ্যতা : 

পরিশ্রম শুধু সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রক নয়; বরং সভ্যতা বিকাশেরও সহায়ক। মানব সভ্যতার উন্নতি অগ্রগতিতে শ্রমের অবদান অনস্বীকার্য। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি সভ্য। সভ্যতার উন্নতির জন্য প্রয়োজন শারীরিক ও মানসিক শ্রমের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ।

শ্রম ও সভ্যতার বিকাশ :

যুগে যুগে মানবসভ্যতার দিকে তাকালে আমরা যে ক্রমবিকাশ দেখতে পাই , তা লক্ষ-কোটি মানুষের তিল তিল শ্রমে সম্ভব হয়েছে। মূলত এ সভ্যতার মূলে রয়েছে মানুষের নিরলস শ্রম-সাধনা। এ শ্রমজীবী মানুষই পত্তন করেছে নতুন নতুন সাম্রাজ্যের । তাদের এই শ্রমের ওপরই সভ্যতার বিজয় স্তম্ভ গড়ে উঠেছে । শ্রমের বিজয় রথে চড়েই মানুষ এক সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতার সিংহদ্বারে পৌঁছে গেছে।

প্রতিভা বিকাশে শ্রমের ভূমিকা :

মানুষই তার নিজের ভাগ্যের স্থপতি। শ্রমের ভেতর দিয়েই মানুষ গড়ে তুলেছে তার অদৃষ্টকে। মানুষের জন্ম বিধাতার অধীন কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন। যারা কর্মকেই জীবনের একমাত্র ধ্রুবতারা করেছে, জীবনসংগ্রামে কেবল তারাই জয়ী। কর্মই মানুষের একমাত্র প্রধান সাফল্যের চাবিকাঠি। জগতে প্রত্যেক মানবের মধ্যেই রয়েছে সুপ্ত প্রতিভা। আর শ্রমের মাধ্যমেই একমাত্র তার বিকশিত ঘটেছে।

শ্রমের গুণ : 

শ্রমই পাহাড় ভেঙে রাস্তা তৈরি করে, বন কেটে তৈরি করে বসতি। শ্রম গরিবকে ধনী, অসভ্য বর্বর জাতিকে রূপান্ত রিত করে সভ্য জাতিতে । মানুষের ভাগ্য গঠনের প্রধান হাতিয়ার হলো পরিশ্রম। পরিশ্রমের ফলে মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্য গড়ে তুলতে পারে।

আরও শিখুন: মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য – রচনা ( ২০ পয়েন্ট )

শ্রম ও মর্যাদা : 

বিশিষ্ট ইংরেজ সাহিত্যিক কার্লাইল শারীরিক পরিশ্রমকে পবিত্র বলে অভিহিত করেছেন। কথায় বলে, বসে বসে খেলে রাজার রাজত্বেও কুলায় না; তখন রিক্তহস্ত হয়ে মর্যাদাহীন হয়ে পড়তে হবে। ফলে যে শ্রমের মর্যাদা দেবে সে সম্মানিত হবে। 

শ্রম ও স্বাস্থ্য :

পরিশ্রম করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নানারকম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পরিশ্রম না করলে ব্যায়াম করতে হয় আর ব্যায়াম হলো কৃত্রিম শ্রম । নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিশ্রম করলে ব্যায়ামের প্রয়োজন পড়ে না।

মানসিক উন্নতিতে শ্রম : 

কথায় বলে, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” পরিশ্রমী মানুষ সর্বদা নিজের কাজের চিন্তায় থাকে। ফলে তার মাথা নানা রকম কুচিন্তা থেকে মুক্ত থাকে। তাছাড়া পরিশ্রমের ফলে শরীর ভালো থাকে। আর শরীর ভালো থাকলে মনও ভালো থাকে ।

শ্রমের গুরুত্ব :

মানুষ একদিকে যেমন সভ্যতার স্রষ্টা, অন্যদিকে সে তেমনি আপন ভাগ্যের নির্মাতা। আর তার ভাগ্য নির্মাণের প্রধান হাতিয়ারই হলো পরিশ্রম। পরিশ্রমের দ্বারাই মানুষের অন্তরের সুপ্ত প্রতিভাগুলো বিকশিত হয়। মানুষের যত আবিষ্কার, যত উদ্ভাবন তার সবকিছুতেই রয়েছে পরিশ্রম। জীবনের সকল কর্মক্ষেত্রে তাই শ্রমের প্রয়োজনই অত্যধিক। প্রবাদে আছে, “পরিশ্রম ধন আনে, পুণ্যে আনে সুখ।”

সুতরাং বলা যায়, পৃথিবীতে যে ব্যক্তি শান্তিতে বসবাস করতে চায়, তার জন্য পরিশ্রম করা একান্ত প্রয়োজন। পরিশ্রমই মানুষের দৈহিক ও মানসিক তুষ্টি লাভের একমাত্র উপায়। আমাদের দেশ যে আজ বেকার সমস্যায় জর্জরিত, তার প্রধান কারণ শ্রমবিমুখতা ও অলসতা। কায়িক শ্রমকে এক শ্রেণির মানুষ হেয় মনে করে। ফলে দেশের কল্যাণকর কর্মকাণ্ডও বিঘ্নিত হয়। আর তাই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অবস্থান অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও মর্যাদাহীন।

আরও শিখুন: রচনা : শিষ্টাচার ( ২০ পয়েন্ট )। SSC, HSC

বাংলাদেশে শ্রমের মর্যাদা : 

আমাদের দরিদ্রতার অন্যতম কারণ শ্রমের অমর্যাদা। এখানে কায়িক শ্রমকে ঘৃণা করা হয়। শ্রমিককে তার প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হয়। রবি ঠাকুর বলেন-

বাঙালি মোরা ভদ্র অতি পোষমানা এ প্রাণ

বোতাম আঁটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান ।

শ্রমবিভাজন :

উন্নত জাতির কাছে কোনো কাজই ছোট নয়। প্রত্যেকের কাজের পরিশ্রম সম-মর্যাদার দাবিদার কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশে দেশে কর্মভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রচলিত হওয়ার ফলে পেশাগত দিক থেকে সৃষ্টি হয়েছে ভিন্নতা যার একটি কায়িক শ্রম ও অপরটি মানসিক শ্রম। তবে দৈহিক শ্রমের চেয়ে মানসিক শ্রমের মর্যাদাই বেশি। যারা অল্প পরিশ্রমে প্রায় বিনা আয়াসে বুদ্ধির জোরে উচ্চপদস্থ পেশায় নিয়োজিত, সমাজেও তারা হয় উচ্চ মর্যাদার দাবিদার।

আর যারা দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করে তাদের পেশাকেও দেখা হয় খাটো করে, সামাজিক মর্যাদাও তাদের নেই। অথচ দৈহিক শ্রমই পরোক্ষভাবে মানসিক শ্রমকে প্রভাবিত করে। কৃষক যদি জমি চাষ না করে, জেলেরা যদি মাছ না ধরে, ধোপারা যদি কাপড় না ধোয়, ঝাড়ুদার যদি ময়লা পরিষ্কার না করে, তবে আমাদের সব মানসিক শ্রমই বৃথা যাবে।

অপরদিকে একজন বৈজ্ঞানিককে হয়তো সারাদিন গবেষণাগারেই কাটিয়ে দিতে হয়। একজন কবিকে তার কল্পনার কথা সারারাত জেগে লিখতে হয়। একজন দার্শনিককে অসম্ভব পড়াশোনা করতে হয় এবং তার চিন্তাধারাকে লিপিবদ্ধ করতে হয়। আর তাই উভয় শ্রমকেই সমান মর্যাদা দেয়া উচিত।

আরও পড়ুন :- পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – রচনা [ Class – 6, 7, 8 ,9 ,10] 

উন্নত দেশে শ্রমের মর্যাদা : 

পৃথিবীর উন্নত জাতিগুলো শ্রমের মর্যাদা ও মূল্যায়নের ফলে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছেছে। তারা কোনো কাজকেই ছোট বা ঘৃণ্য মনে করে না। আমেরিকা, কানাডা, জাপান, চীন, জার্মান, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশ এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । 

শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ :

রাসূল (স) বলেছেন, “নিজ হাতে কাজ করার মতো পবিত্র জিনিস আর কিছুই নেই।” তিনি নিজের কাজ নিজে করতেন। ভিক্ষা না করে পরিশ্রম করতে বলতেন। আব্রাহাম লিংকন, জর্জ ওয়াশিংটন, আইনস্টাইন প্রমুখ শ্রমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট :

মানবসভ্যতা শ্রমেরই অবদান। কিন্তু শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাব সবসময় মানুষের একরকম ছিল না। আদিম সমাজে যৌথশ্রমের মূল্য ছিল। কিন্তু সমাজে শ্রেণিবিভেদ দেখা দিলে শ্রম মর্যাদা হারাতে থাকে। প্রাচীন রোমের শ্রমজীবী ও মিশরে শ্রমজীবীদের ছিল না সামাজিক মর্যাদা ।

তাদেরকে ক্রীতদাস হিসেবে গণ্য করা হতো। সামন্তযুগে শ্রমজীবীর ভূমিকা পালন করেছে কৃষকরাই । আর তারাও ছিল মর্যাদাহীন, বঞ্চিত ও শোষিত। শিল্পবিপ্লবের পর পুঁজিবাদী দুনিয়ার শ্রমিকরা শোষিত হলেও তারা গণতান্ত্রিক অধিকার লাভ করে। রুশবিপ্লবের পর শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হলে শ্রমিকরা মর্যাদা পায় সবচেয়ে বেশি।

শ্রমিক লাঞ্ছনা : 

সমাজের উঁচুস্তরের মানুষ যারা, তারা গ্রহণ করেছে সমাজের সম্মানের কাজ, গৌরবের কাজ। সমাজের সমস্ত সুখ- সুবিধা নিজেদের কুক্ষিগত করে তারা তথাকথিত নিম্নশ্রেণির মানুষদের নিক্ষেপ করেছে ঘৃণা ও বঞ্চনার নীরন্ধ্র অন্ধকারে। অথচ সেই শ্রমিকেরা চিরকাল মাঠে মাঠে বীজ বুনেছে, ফলিয়েছে সোনার ফসল, তাঁতি বসে তাঁত বুনেছে, জেলে ধরেছে মাছ। অথচ স্বার্থপর সমাজের কাছ থেকে তারাই পায়নি মানুষের মর্যাদা।

শ্রমের জয় : 

শ্রমিক সমাজ আজ বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানবিক শ্রমকে তার যোগ্য মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কালের যাত্রায় একমাত্র তারাই আজ সমাজের রথকে গতি দিতে পারে, একমাত্র তারাই পারে সমাজে কর্মমুখরতার ঢেউ আনতে। তাই আজ শ্রমের জয় বিঘোষিত হচ্ছে দিকে দিকে। 

আরও শিখুন: রচনা: বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প(২০ পয়েন্ট)- pdf

শ্রমিক দুনিয়ার প্রতি সকলের দৃষ্টি আজ আকৃষ্ট হয়েছে। দেশে দেশে আজ শ্রমিক সংঘ এবং শ্রমিক কল্যাণ স্বীকৃতি লাভ করেছে। সমাজ কাব্যে উপেক্ষিত এই শ্রমকে তার যোগ্য সম্মান না দিলে যে সমাজের উত্থান নেই, অগ্রগতি নেই— এ কথা আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কিন্তু শ্রমিক সমাজকেও মনে রাখতে হবে যে, শ্রেণিস্বার্থ নয়, সমবণ্টনই কাম্য। 

সমাজের সম্পদ, তার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সকল মানুষের জন্য সমভাবে বণ্টিত হওয়া উচিত। বুদ্ধিবল, বাহুবল, অর্থবল এবং শ্রমবল- সমাজের সবই প্রয়োজন। সমাজের বেদীমূলে সবাই যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী শ্রমদান করবে। তার বিনিময়ে প্রত্যেকে তার ন্যায়সংগত মূল্য পাবে। এটাই বর্তমান যুগের আদর্শ হওয়া উচিত ।

প্রাণীকূলে শ্রমের দৃষ্টান্ত : 

আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ অতি তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র প্রাণী থেকেও শ্রমশীলতার অনুপ্রেরণা লাভ করতে পারে । ক্ষুদ্র পিপীলিকা শীতের সঞ্চয়ের জন্য গ্রীষ্মকালে নিরলসভাবে খাদ্য সংগ্রহ করে। উঁই পোকা কঠোর পরিশ্রমে গড়ে তোলে বিশাল ঢিবি। মৌমাছি মধু সংগ্রহে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে। বন্য পশুপাখি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাদ্যের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরে। এমনকি অতিথি পাখিরা হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দেয় জীবন রক্ষার তাগিদে।

বাঙালির শ্রমবিমুখতা :

মধ্যবিত্ত বাঙালি শিক্ষিত সমাজ কায়িক পরিশ্রমকে অবহেলার চোখে দেখে। কেউ কেউ ভয়ও করে। যারা কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের যোগান দেয়, শিক্ষিত সমাজ তাদের অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে। ফলে সুদীর্ঘকাল ধরে এদেশের শ্রমজীবী মানুষ সমাজের উচ্চপদস্থদের দ্বারা অবহেলিত হচ্ছে। আমাদের শিক্ষিত সমাজের শ্রমবিমুখতা সম্পর্কে একটি মজার গল্প প্রচলিত আছে।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একবার স্টেশনে গিয়ে দেখতে পেলেন, ট্রেন থেকে নেমে এক যুবক কুলি খোঁজ করছে। বিদ্যাসাগর তার কাছে গিয়ে কুলি খোঁজার কারণ জানতে চাইলে যুবক হাতের ছোট্ট একটা ব্যাগ দেখিয়ে তা বহনের জন্য কুলির প্রয়োজনের কথা বলে। নিতান্ত ছোট এবং হালকা ব্যাগটি ঈশ্বরচন্দ্র নিজেই কুলি সেজে বহন করে নেন। পরে যুবক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিচয় পেয়ে ক্ষমাপ্রার্থী হয়। বিদ্যাসাগর তাকে বললেন-“একমাত্র নিজের কাজ নিজে করাই উত্তম, শ্রমের মধ্যে কোনো অগৌরব নাই।”

পাশ্চাত্যে শ্রমের মর্যাদা :

আমেরিকা, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশের উন্নতির মূলে রয়েছে তাদের পরিশ্রম। শ্রমকে তারা খুবই মূল্যায়ন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও জুতা কালি করাকে তারা ছোট মনে করে না। তাদের স্লোগান হচ্ছে “পরিশ্রমের দ্বারা উন্নতি করো অথবা নিপাত যাও।”

শ্রমবিমুখতার পরিণাম : 

যারা অদৃষ্টবাদী, অলস ও শ্রমবিমুখ তারা জীবনের প্রতি পদক্ষেপে ব্যর্থ হয়। অভাব-অনটন, জরা-ব্যাধি হয় তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। সম্পদ কিংবা সাফল্য এমনিতেই হস্তগত হয় না, নিরলস শ্রম আর সংগ্রাম করে অর্জন করতে হয়। যে জাতি অলস, কর্মবিমুখ তারা শিক্ষা ও সভ্যতায় অগ্রসর নয়। উন্নয়নের সোনার হরিণ তাদের কাছে কস্মিনকালেও ধরা দেয় না। 

বর্তমান সভ্য দুনিয়ায় যে দেশ, জাতি উন্নয়ন ও অগ্রগতির সোপান রচনা করেছে, তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিরন্তর শ্রম ও সাধনার ইতিহাস। আলস্যে কালক্ষেপণ করলে তাদের ইতিহাসও রচিত হতো উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বদলে দারিদ্র্য এবং ব্যর্থতার গ্লানিতে পরিপূর্ণ হয়ে ।

উপসংহার : 

ইংরেজি প্রবাদ – God helps them who help themselves. অর্থাৎ, যে নিজেকে সাহায্য করে, আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। তাই সকলকেই শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। বৃথা আভিজাত্যের ভাব পরিত্যাগ করে সকল পরিশ্রমকে মর্যাদার বস্তু বলে গণ্য করতে হবে। কোনো কাজই অগৌরবের নয়- এ শিক্ষা সকলকে গ্রহণ করে পরিশ্রমী হতে হবে। তবেই আমরা বিশ্বের দরবারে সভ্য জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি ।

3 thoughts on “রচনা: শ্রমের মর্যাদা(১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩০পয়েন্ট)”

Leave a Comment