স্বদেশ প্রেম রচনা ১৫ পয়েন্ট [ SSC এবং HSC ]

উপস্থাপনা : 

Patriotism is a great virtue. অর্থাৎ, দেশপ্রেম একটি মহৎ গুণ। দেশের প্রতি ভালোবাসা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। দেশকে ভালোবাসে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। যে মানুষের মধ্যে স্বদেশপ্রেম নেই, সে মানুষ প্রকৃত অর্থে মানুষ নয়। 

স্বদেশপ্রেমের সংজ্ঞা : 

কোনো মানবশিশু যে দেশে জন্মগ্রহণ করে দিনে দিনে বেড়ে ওঠে, আলো-বাতাসে বেঁচে থাকে, ফল-ফসল, খাদ্য-পানীয় খেয়ে জীবনযাপন করার সুযোগ-সুবিধা লাভ করে সেটিই তার স্বদেশ। স্বদেশপ্রেম অর্থ হচ্ছে নিজ দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, ভাষার প্রতি সুতীব্র আকর্ষণ অনুভব করা। দেশের প্রতি গভীর অনুরাগ, নিবিড় ভালোবাসা ও যথার্থ আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলা হয়। মাতৃভূমির সত্যিকার উন্নতিকল্পে সর্বস্ব ত্যাগের সাধনাই স্বদেশপ্রেম।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ : 

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ হলো দেশের মাটি ও মানুষকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসা, দেশের প্রত্যেকটি বস্তু এবং দেশীয় সংস্কৃতিকে মনে-প্রাণে ভালোবাসা। মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আপসহীন মনোবৃত্তি লালন করতে হবে।

আরও পড়ুন :- স্বদেশ প্রেম - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]

ধর্মীয় দৃষ্টিতে স্বদেশপ্রেম : 

প্রত্যেক ধর্মেই স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইসলামেও ঈমান আকিদা রক্ষা করার জন্য স্বদেশপ্রেমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। মহানবী (স) বলেন, “স্বদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।” তাইতো তিনি বিশেষ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে মক্কা ছেড়ে মদিনায় যাওয়ার সময় বারবার জন্মভূমির দিকে ফিরে ফিরে অশ্রু বিসর্জন করেছেন। হিন্দু ধর্ম বলে, স্বদেশ স্বর্গের চেয়েও পবিত্র । এভাবে স্বদেশপ্রেম ধর্মীয় দৃষ্টিতেও স্বীকৃত।

স্বদেশপ্রেমের ভিন্নরূপ : 

স্বদেশপ্রেম আপসহীন হতে হবে। তবে অবশ্যই তা অন্ধ বা সংকীর্ণ হতে পারবে না। কারণ এটি অন্য দেশকে ঘৃণা করতে শেখায় । ফলে জাতিতে জাতিতে দ্বন্দু অনিবার্য হয়ে ওঠে। অন্ধ ও উগ্র দেশপ্রেম দেশের জন্য ক্ষতিকর।

দেশপ্রেমিকের আদর্শ : 

দেশপ্রেমিক হবে দেশের গৌরব ও মর্যাদার নমুনা। তার চরিত্র ও আদর্শ দিয়েই প্রমাণ করতে হবে, সে কোন দেশের নাগরিক এবং দেশের প্রতি তার মমত্ববোধ কতটুকু।

আরও পড়ুন :-  বাংলা প্রবন্ধ রচনা - স্বদেশ প্রেম : ১০ পয়েন্ট 

দেশপ্রেমের গুরুত্ব : 

ইসলাম স্বদেশপ্রেমকে ঈমানের অঙ্গ বলে ঘোষণা করেছে। নিজ দেশের প্রতি যার ভালোবাসা নেই, সে পূর্ণাঙ্গ মুমিন নয়। রাসূল (স) ইরশাদ করেছেন, “যারা দেশ রক্ষার জন্য বিনিদ্র রাত কাটায়, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।” অতএব দেশকে ভালোবাসা প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব।

স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ও উন্মেষ : 

প্রকৃতপক্ষে স্বদেশপ্রেমের উদ্ভব আত্মসম্মানবোধ থেকে। যে জাতির আত্মসম্মানবোধ যত প্রখর, সে জাতির স্বদেশপ্রেম তত প্রবল। স্বদেশপ্রেম এক প্রকার পরিশুদ্ধ ভাবাবেগ। নিঃস্বার্থ হিংসাহীন দেশপ্রেমই প্রকৃত স্বদেশপ্রেম । ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র স্বার্থের গণ্ডি উপেক্ষা করে বৃহত্তর স্বার্থের দিকে মন যখন পরিচালিত হয়; যখন আত্মকল্যাণ অপেক্ষা বৃহত্তর কল্যাণবোধ সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন জ্বলে ওঠে স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার নিষ্কলুষ প্রদীপ শিখা ।

স্বদেশপ্রেমিকের দেশ সেবার পথে বাধা অনেক, অত্যাচার সীমাহীন। কিন্তু পথের ঝড় ঝঞ্ঝা, প্রতিবন্ধকতা তাদের দৃঢ় বলিষ্ঠ পদক্ষেপের নিকট মিথ্যে প্রমাণিত হয়। ইতিহাসের পানে তাকালে এর ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত মেলে। পরদেশি কিংবা স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু কিংবা উদ্যত অস্ত্র দেশপ্রেমিকদের নিবৃত্ত করতে পারে না। আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাস ও স্বদেশ প্রেমের গর্বে গর্বিত। ১৯৫২ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং সর্বশেষে ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান আমাদের অনন্য স্বদেশপ্রেমের প্রমাণ দেয়। 

আরও পড়ুন :-  দেশ ভ্রমণ - বাংলা রচনা | ক্লাস 6, 7, 8, 9, 10

অন্ধ স্বদেশপ্রেমের পরিণতি : 

দেশ ও জাতির গৌরবের বস্তু স্বদেশপ্রেম। কিন্তু অন্ধ স্বদেশপ্রেম ধারণ করে ভয়ংকর রূপ। অন্ধ স্বদেশপ্রেম জাতিতে জাতিতে সংঘাত ও সংঘর্ষ অনিবার্য করে তোলে। আমরা স্বদেশের জয়গান গাইতে গিয়ে যদি অপরের স্বদেশপ্রেমকে আহত করি, তবে সেই স্বদেশপ্রেম বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে ডেকে আনে ভয়াবহ রক্তাক্ত দ্বন্দ্ব-সংঘাত । হিটলারের ইউরোপ দখল কিংবা মুসোলিনির ইতালি উগ্র-জাতীয়তাবাদের নগ্নরূপ। 

চলমান বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র কর্তৃক দুর্বল রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আগ্রাসী মনোভাব অন্ধ স্বদেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। অন্ধ স্বদেশপ্রেমাসক্ত নীতি বিশ্বকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে এবং মানবতার বিপর্যয় ঘটাতে পারে।

স্বদেশপ্রেমের বৈশিষ্ট্য : 

স্বদেশপ্রেম মানবচরিত্রের এক স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ যেমন দেশপ্রেমের পরিচয় বহন করে, তেমনি সাহিত্য, শিল্পকলা বা অন্যান্য জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে কাজ করাও দেশপ্রেমের লক্ষণ। তাই প্রত্যেকের কাজ হবে যার যার ক্ষেত্রে দেশের কল্যাণের কথা চিন্তা করে দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদন করা—যাতে স্বদেশের সবরকম উন্নতি সাধিত হয়। দেশপ্রেম নিজের দেশকে জানতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায়। স্বদেশপ্রেমের মাধ্যমেই বিশ্বপ্রেমে এগিয়ে যাওয়া যায়। ফলে মানবতার মহান আদর্শের সম্প্রসারণ ঘটে।

স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত : 

প্রত্যেক দেশই তার মাটিতে কিছু শ্রেষ্ঠ সন্তান জন্ম দেয়, যারা তাদের কর্মের জন্য অমরত্ব লাভ করে। আমাদের দেশে দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রেখেছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা, মীর কাসিম, সৈয়দ আহমদ, তিতুমীরসহ ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী লাখ লাখ বীর সেনানী।

আরও পড়ুন :- আমাদের গ্রাম রচনা ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ এবং HSC - PDF

দেশপ্রেম ও রাজনীতি : 

রাজনীতির আলোচ্য বিষয় হলো দেশপ্রেম। স্বদেশপ্রেমের পবিত্র বেদীমূলেই রাজনীতির পাঠ। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাজনীতিবিদ দেশের সদাজাগ্রত প্রহরী। আর প্রচ্ছন্ন রাজনীতির অবদানেই আজ দেশ স্বাধীন। দেশ ও জাতির স্বার্থই দেশপ্রেমের অঙ্গীকার ও সার্থকতা। তবে রাজনীতির নামে যারা চাঁদাবাজি, হরতাল, অবরোধ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লুণ্ঠনসহ নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার মাধ্যমে জাতীয় সম্পদের ক্ষতি সাধন করে তাদেরকে দেশপ্রেমিক বলা চলে না; বরং তারা দেশ ও জাতির শত্রু।

দেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম : 

স্বদেশ চেতনা তো বিশ্ববোধের প্রাথমিক শর্ত। দেশের পানি-মাটি, অরণ্য, পশুপাখি, মানুষ, সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে পারলে পৃথিবীর প্রকৃতিকেও ভালোবাসা যায় । তখনই তার মধ্যে জন্ম নেয় বিশ্ববোধ ।

দেশপ্রেমের মহিমা : 

দেশপ্রেমের ফলে মানুষের মন উদার ও মহৎ হয়, অপরের কল্যাণবোধ জাগ্রত হয় এবং দেশপ্রেমিকের খ্যাতি বিশ্বজনীন রূপলাভ করে। সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের বন্দনা করতে গিয়ে কবি বলেছেন-

নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই

উপসংহার : 

দেশপ্রেম মানব ধর্ম। যার মধ্যে এ গুণ নেই সে অমানুষ। আমাদের সকলকে স্বার্থহীন দেশপ্রেমিক হতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে স্বদেশপ্রেমকে। তবেই স্বাধীন জাতির মর্যাদা নিয়ে আনন্দের সাথে বেঁচে থাকা যাবে ।

Post a Comment

0 Comments