উপস্থাপনা :
নিরক্ষরতা একটি জাতির জন্য অভিশাপস্বরূপ। নিরক্ষর জাতি কখনো উন্নতি লাভ করতে পারে না। তাই দেশ ও জাতির উন্নতিকল্পে নিরক্ষরতা দূরীকরণ অত্যবশ্যক। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি অন্যতম দরিদ্র দেশ। এখানে নিরক্ষরতা একটা উল্লেখযোগ্য সমস্যা। এ সমস্যার আশু সমাধান করতে না পারলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা :
জাতীয় জীবনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড-জাতির আলোকবর্তিকা । বলা হয়, শিক্ষা হচ্ছে আমাদের জাতীয় জীবনের আলোর দিশারী । শিক্ষার আলো ব্যতিত মানুষ জোগে ওঠতে পারে না । মূর্খ মানুষ নিজের ভালো মন্দ বুঝে না ।
শিক্ষা সম্পর্কে মহানবী (সঃ) বলেন, “জ্ঞানর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে যাও।” আরো বলা হয় “মূর্খের উপাসনার চেয়ে জ্ঞানীর নিদ্রা উত্তম।” “জ্ঞান সাধকের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র।” অতএব বলা যায় শিক্ষা হচ্ছে জাতির দুর্জয় শক্তি, মুক্তির দিশারী, সভ্যতার ভিত্তিভূমি।
নিরক্ষরতার অভিশাপ :
যে কোন জাতির উন্নতির মূলে রয়েছে শিক্ষা। নিরক্ষরতার অভিশাপ জাতিকে নিয়ে যায় অন্ধকারের অতল গহ্বরে। নিরক্ষর লোকেরা নিজের উন্নতি ও জাতীয় উন্নতি কোনটিতেই ভূমিকা রাখতে পারে না। তারা দেশ ও জাতির বোঝাস্বরূপ। আমাদের বাংলাদেশও নিরক্ষরতার অভিশাপে অভিশপ্ত। কোন দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিরক্ষর রেখে জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন :- বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা :
নিরক্ষরতার ভয়াবহতা বিবেচনা করে এবং অতীতের প্রচেষ্টার অপ্রতুলতা লক্ষ্য করে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২ সাল নাগাদ সবার জন্য শিক্ষার যে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়েছে তার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে।
নিরক্ষরতা দূরীকরণে বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছেন। এতে আশাব্যঞ্জক সাড়া পড়েছে এবং ইবতেদায়ী মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রী অনেকগুণ বেড়েছে। এতদ্ব্যতীত দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক (Free) করা হয়েছে।
গণশিক্ষা কেন্দ্র :
গণশিক্ষার মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূর করা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষিত লোকদের সহায়তায় গণশিক্ষা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের পরিচালকগণ ইচ্ছে করলে নিরক্ষরতা দূরীকরণে সফল ভূমিকা রাখতে পারে । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ ও শিক্ষকবৃন্দ এগিয়ে আসলে এ ব্যাপারে অনেকাংশে সফলতা অর্জন সম্ভব ।
বেসরকারি উদ্যোগ :
নিরক্ষরতা দূরীকরণে বেসরকারি পর্যায়ে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বেসরকারি পর্যায়ে ছাত্র/শিক্ষকগণ নিরক্ষরতা দূরীকরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারে । তারা বয়স্ক ব্যক্তিদের শিক্ষাদানের জন্য গ্রামে নৈশ বিদ্যালয় গড়ে তুলতে পারে। নিরক্ষর লোকদের অক্ষর দান একটি অতীব মহৎ কাজ । এ ব্যাপারে ছাত্র/শিক্ষকসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এবং এন. জি. ও শিক্ষিত ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা কঠিন কিছু নয় ।
উপসংহার :
নিরক্ষরতা আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান করতে না পারলে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ত অর্থহীন হতে বাধ্য। তাই সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে নিরক্ষরতা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সকলে এগিয়ে আসলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা সম্ভব ।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা
- বৃত্তিমূলক শিক্ষা : বাংলা রচনা । Sikkhagar
- কর্মমুখী শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা -রচনা [Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]
- শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]