ভূমিকা :
প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশ মানুষের জীবন ও অস্তিত্বের পক্ষে সহায়ক। নির্মল বাতাস, বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত খাদ্য সুস্থ ও সুন্দরভাবে মানুষকে বাঁচতে সহায়তা করে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ও ভোগবিলাসের জন্যে উপকরণ তৈরি করতে গিয়ে মানুষ মেতে উঠেছে ইচ্ছেমত প্রকৃতি ধ্বংসে। মানুষের হাতে দূষিত হচ্ছে জীবনের অপরিহার্য উপাদান পানি ও বায়ু।
পরিবেশ দূষণের কারণ :
পরিবেশ দূষণের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। পরিবেশ দূষণের একটি বড় কারণ পৃথিবীর বুকে জনবসতি বৃদ্ধি । এর ফলে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাহিদার চাপ পড়েছে প্রচণ্ডভাবে। ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ভূমিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষের তীব্রতা, বাড়ছে কৃত্রিম সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। এতে বিনষ্ট হচ্ছে চাষযোগ্য ভূমির সঞ্জীবনী শক্তি।
রাসায়নিক শিল্প-কারখানা থেকে প্রতিদিন নদী, হ্রদ, সমুদ্রে মিশছে বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত বর্জ্যদ্রব্য । নির্মল জল হয়ে পড়ছে দূষিত। শিল্প-কারখানার বর্জ্য, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসের সাথে মিশে সৃষ্টি করছে বায়ু দূষণ। এর ফলে জীবজগতের জন্যে অতি প্রয়োজনীয় ওজোন স্তরে ধরেছে ফাটল, ফলে পৃথিবী ক্রমেই হয়ে উঠছে উত্তপ্ত।
মানুষ ঘর-বাড়ি তৈরি শিল্প-কারখানার কাঁচামাল ও জ্বালানি কাঠের প্রয়োজনে প্রতিদিন উজাড় করছে বনভূমি। এতে বাতাসে অক্সিজেন কমছে। বাড়ছে কার্বন ডাইঅক্সাইড। ফলে বৃষ্টিপাত হ্রাস পাচ্ছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে উত্তর সাগরের বরফ গলে উঁচু হয়ে উঠছে সাগরের পানি
আরও পড়ুন :- বাংলা প্রবন্ধ রচনা : বৃক্ষরোপণ অভিযান
পরিবেশ দূষণ সমস্যা ও বাংলাদেশ :
সীমিত ভূখণ্ড ও সম্পদ এবং তুলনামূলকভাবে অতি ঘন জনবসতি ও দুর্যোগপ্রবণ ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশের মানুষকে পরিণত করেছে পরিবেশের শিকারে। বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন কারণের মধ্যে রয়েছে
১. জনবিস্ফোরণ :
জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে বাংলাদেশে মুক্তাঞ্চল, জলাভূমি ও বনভূমির পরিমাণ কমছে। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ।
২. সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার :
জনসংখ্যার চাপে উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে জমিতে ব্যাপক হারে সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে মাটির দূষণ ঘটছে। রাসায়নিক উপাদান বৃষ্টিতে ধুয়ে নদী ও জলাশয়ের পানিতে মিশে গিয়ে পানি দূষিত হচ্ছে।
৩. শিল্প দূষণ :
নদীর তীরে অবস্থিত কলকারখানা থেকে নিঃসৃত তরল রাসায়নিক বর্জ্য পানিকে দূষিত করছে। তা মাছের বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কলকারখানার নির্গত ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করছে। তা জনস্বাস্থ্যের জন্যেও হুমকি স্বরূপ।
৪. বন উজাড়করণ :
জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে প্রতি বছর বনভূমি উজাড় হচ্ছে। ফলে ভূমিক্ষয়ের মাত্রা বাড়ছে, বন্যা প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে এবং দেশের গড় তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।
৫. ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন :
ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন ও ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট বাড়ছে। প্রকট হচ্ছে পানিতে আর্সেনিক দূষণের সমস্যা ।
আরও পড়ুন :- সংবাদপত্র - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] - PDF ৩টি
৬. ভূমির অপর্যাপ্ততা :
ভূমির অপর্যাপ্ততার কারণে পাহাড় কেটে বসতবাড়ি তৈরি করায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। শহরের ভাসমান মানুষ ও বিপুল বস্তিবাসীর চাপেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
পরিবেশ দূষণের প্রতিক্রিয়া :
পরিবেশ দূষণের প্রতিক্রিয়া মারাত্মক। বায়ু ও পানি দূষণের ফলে মানুষের শ্বাস রোগ ও আন্ত্রিক রোগ বাড়ছে। তা মানুষের সুস্থ জীবনের জন্যে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাপমাত্রা ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বহু এলাকায় মানব বসতির জন্যে হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রতিকার :
এই অবস্থার প্রতিকারের জন্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে এবং গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। বনভূমি ধ্বংস কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। দেশের মোট আয়তনের নূন্যতম ৫০% এলাকায় বনায়ন করতে হবে। বর্তমান জ্বালানি পরিবর্তন করে বাতাস, সৌর ও পানি বিদ্যুতের মতো পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির প্রচলন করতে হবে।
শিল্প-কারখানা ও গৃহস্থালির বর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। কৃষিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার কমিয়ে জৈবসারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের আন্দোলনকে সামাজিক আন্দালনে রূপ দিতে হবে।
উপসংহার :
পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্ব কেবল সরকার বা কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি-বিশেষের নয়, এ দায়িত্ব প্রতিটি ব্যক্তির। তাই পরিবেশ দূষণের বিপদ সম্পর্কে প্রতিটি মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। এ পৃথিবী, এদেশকে সব দিক থেকে বাসযোগ্য রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব আমরা প্রত্যেকে যদি পালন না করি তা হলে এ পৃথিবীকে বাঁচানো কঠিন হয় পড়বে।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা