উপস্থাপনা :
বর্তমান বিশ্বে চা একটি জনপ্রিয় পানীয় । গরিবের পর্ণ কুটির থেকে ধনীর প্রাসাদে পর্যন্ত এর পরম আদর। দিন দিন এর ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। চীন দেশে চায়ের ব্যবহার শুরু হয়ে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আমদানি হয়েছে। আধুনিককালে ইতর, ভদ্র, কুলি, মজুর, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক সকল শ্রেণীর লোকই চা পান করে ।
বাংলাদেশের চা উৎপাদিত অঞ্চল :
বাংলাদেশের সিলেট, শ্রীমঙ্গল, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামে চা উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশে গড়ে প্রায় ছয় কোটি পাউন্ড চা উৎপন্ন হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়েও এ চা বিদেশে রপ্তানি করা হয় ।
চা উৎপাদন পদ্ধতি :
চা উৎপাদনের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত প্রয়োজন । পাহাড়ি বা উঁচু ঢালু জায়গা যেখানে পানি জমে না, সে সব জায়গায় চা ভালো জন্মে। চৈত্র-বৈশাখ মাসে জমি চাষ করে সারিবদ্ধভাবে চায়ের চারা রোপণ করতে হয়। চায়ের ক্ষেতে বড় ছায়া বহুল গাছ লাগানো দরকার হয়। কারণ, চায়ের গাছ কড়া রোদ সহ্য করতে পারে না।
আরও পড়ুন :- পাট - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
চায়ের গাছ যখন তিন-চার ফুট লম্বা হয় তখন চায়ের পাতা তোলার মতো হয়। চায়ের দুটি কচি পাতা আর একটি কুঁড়ি পাতা তোলা হয়। চায়ের গাছ উঁচু হতে দেয়া হয় না পাতা আহরণে অসুবিধা হয় বলে । পাতা তুলে মেশিনের সাহায্যে শুকানো এবং গুড়া করা হয় ।
প্রচলন :
চীন দেশে প্রথম চায়ের প্রচলন শুরু হয় । কিন্তু ইউরোপীয়রা চায়ের ব্যবহার সর্বত্র প্রচলন করে। বর্তমানে সারা বিশ্বে চায়ের ব্যবহার রয়েছে। আগে এদেশে চা-পান বিলাসিতা বলে গণ্য হতো। আজকাল এ চা অতি সহজলভ্য পানীয়। প্রত্যেক দেশে ঘরে ঘরে চায়ের প্রচলন দেখা যায়। বাংলাদেশের সিলেটের এবং ভারতের দার্জিলিং-এর চা সবচেয়ে দামী ও সুগন্ধিযুক্ত ।
চা প্রস্তুত প্রণালি :
চা প্রস্তুত প্রণালি অত্যন্ত সহজ । পানি গরম করে তাতে চা পাতা ঢেলে দেয়া হয় । অনুমানে এক কাপ চায়ের জন্য এক চামচ চা পাতা লাগে । চা গরম পানিতে ঢেলে দেয়ার পর এক মিনিট গরম করে ছেকে নিতে হয় । তারপর রুচিমতো চিনি ও দুধ দিয়ে পান করা যায়। বিদেশিরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিনা চিনি ও দুধে চা খায় ।
আরও পড়ুন :- ধান - বাংলা রচনা [ ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০]
উপকারিতা :
প্রবাদ আছে- ইহাতে নাহিক কোন মাদকতা দোষ । ইহাতে করে শুধু চিত্ত পরিতোষ চা পানে শরীরের জড়তা কেটে যায় । এতে ক্যাফিন বলে এক রকমের উপাদান আছে। এটা স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে উত্তেজনা আনে এবং কর্ম শক্তি বাড়ায়। ম্যালেরিয়া রোগ নাশক । যারা নিয়মিত চা পান করে তারা সর্দি কাশিতে ভোগে না। সাময়িক কর্ম-ক্লান্তি দূর করে। স্বস্তিবোধ হয়। এ জন্য কারখানার শ্রমিকরা ঘন ঘন চা পানে অভ্যস্ত । আজ চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, চা নাকি ক্যানসার প্রতিরোধক।
অপকারিতা :
অধিক চা পান ক্ষতি করে। ক্ষুধা নাশ করে । বিশেষ করে খালি পেটে চা পানে গ্যাসট্রিক আলসার হতে পারে। অনেকের অধিক চা পানে অনিদ্রা হয়। পেটে বায়ু জন্মে এবং দেহের লালিত্য নষ্ট হয় । বদহজমও দেখা দিতে পারে। অগ্নিমান্দ্য দেখা দেয়া অস্বাভাবিক নয় । শীতপ্রধান দেশে উহা পানে উপকার হলেও গ্রীষ্মপ্রধান দেশে খুবই অনিষ্টকর।
উপসংহার :
চা আমাদের অর্থকরী ফসলের মধ্যে একটি। বাংলাদেশী চায়ের সুনাম আছে সারা বিশ্বে। চা মান অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ করা হয় । তারপর বিক্রেতারা প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন নামে চা বিক্রয় করে। যেমন- লিপটন, ডানক্যান, মির্জাপুর, এ্যারোমা প্রভৃতি । চা যেহেতু আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আনয়ন করে, সে জন্য চা উৎপাদন বৃদ্ধি করা উচিত । আরোও চা বাগান তৈরিতে উৎসাহ প্রদান করা আবশ্যক ।