উপস্থাপনা
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ছাড়া জীবন থাকে অপূর্ণ । কিন্তু যে শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগে না, সে শিক্ষা অর্থহীন। এ ধরনের শিক্ষায় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা বাড়ে। তাই জীবনভিত্তিক শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। আর জীবনের সাথে সম্পৃক্ত যে শিক্ষা সেটিই কর্মমুখী শিক্ষা। একমাত্র কর্মমুখী শিক্ষাই হচ্ছে আমাদের বাস্তব জীবনের জন্য সহায়ক ৷
কর্মমুখী শিক্ষা কী
কর্মমুখী শিক্ষা হচ্ছে একজন ব্যক্তিকে তার আত্মপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার লক্ষ্যে বিশেষ কোনো কর্মে প্রশিক্ষিত করে তোলা । অর্থাৎ যে শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ কোনো একটি বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ করে এবং শিক্ষা শেষে জীবিকার্জনের যোগ্যতা অর্জন করে, তাকেই কর্মমুখী শিক্ষা বলে । কর্মমুখী শিক্ষাকে কারিগরি শিক্ষাও বলা হয়ে থাকে ।
কর্মমুখী বৃত্তিমূলক শিক্ষা কী :
কর্মমুখী বৃত্তিমূলক শিক্ষা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যার সঙ্গে জীবন ও জীবিকার সম্পর্কটা নিবিড়। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের এমন এক বিশেষ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে, যা একটা নির্দিষ্ট পর্যায় অতিক্রম করার পরই জীবিকার পথকে প্রশস্ত করে তুলবে। ব্যক্তি বেকারত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে দেশের বোঝা হয়ে থাকবে না। আর এটিই কর্মমুখী বৃত্তিমূলক শিক্ষা ।
কর্মমুখী শিক্ষার প্রকারভেদ
কর্মমুখী শিক্ষা যান্ত্ৰিক শিক্ষা নয়। জীবনমুখী শিক্ষার পরিমণ্ডলেই তার অবস্থান। তাই পরিপূর্ণ ও সামগ্রিক জীবনবোধের আলোকে কর্মমুখী শিক্ষা দুই ভাগে বিভক্ত। এদের মধ্যে একটি হলো- উচ্চতর কর্মমুখী শিক্ষা । এটিতে যারা বিজ্ঞান বিষয়ে পারদর্শী তারা বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ ইত্যাদি স্বাধীন পেশা গ্রহণ করতে পারে। চাকরির আশায় বসে থাকতে হয় না। আরেকটি হলো- সাধারণ কর্মমুখী শিক্ষা।
এর জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার দরকার হয় না। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষাই যথেষ্ট। সাধারণ কর্মমুখী শিক্ষার মধ্যে পড়ে কামার, কুমার, তাঁতি, দর্জি, কলকারখানার কারিগর, মোটরগাড়ি মেরামত, ঘড়ি-রেডিও-টিভি-ফ্রিজ মেরামত, ছাপাখানা ও বাঁধাইয়ের কাজ, চামড়ার কাজ, গ্রাফিক্স আর্টস, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি পালন, নার্সারি, ধাত্রীবিদ্যা ইত্যাদি। এ শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হলেও স্বাচ্ছন্দ্যভাবে বেঁচে থাকা যায় ।
আরও পড়ুন :- কর্মমুখী শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা -রচনা [Class – 6, 7, 8 ,9 ,10]
কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
শিক্ষাকে কেবল আত্মিক উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, সামাজিক প্রয়োজনের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান বিশ্বে কর্মের যে মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাতে আমাদেরকেও অংশগ্রহণ করতে হবে। কৃষিকাজ, কামারের কাজ, কুমারের কাজ, ছুতোরের কাজ, চামড়ার কাজ, বাঁশ ও বেতের কাজ, প্লাস্টিকের কাজ, তাঁতের কাজ, ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ, রেডিও-টেলিভিশন মেরামতের কাজ ছাড়াও আরও অনেক বৃত্তিমূলক কাজ রয়েছে।
এসব কাজ শারীরিক যোগ্যতা থাকার পরও যদি আমরা করতে কুণ্ঠিত হই, তাহলে আমাদের শিক্ষাই যে কেবল নিরর্থক হবে তা নয়, আমাদের দারিদ্র্য কোনো কালেই ঘুচবে না। তাই কর্মমুখী শিক্ষা বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যাতে এদিকে এগিয়ে আসে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে দেশ জোড়া যে বেকার সমস্যা বিরাজমান, তাও অনেকাংশে কমে আসবে। দেশ এগিয়ে যাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা
যুগের সাথে সাথে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয় নি। যদিও শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে ‘স্যাডলার কমিশন’, ‘কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন’, ‘বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা কমিশন’, ‘কাজী জাফর/বাতেন কমিশন’ এবং ‘মজিদ খানের শিক্ষানীতি’ ইত্যাদি কমিশন গঠন করা হয়— কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি সাধিত হয় নি।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে শুধু ডিগ্রি দেয় কিন্তু চাকরি বা কাজ দেয় না। তাই বেকারত্বের অভিশাপ মাথায় নিয়ে হতাশাগ্রস্ত তরুণ যুবসমাজ আজ দিশেহারা। তারা আজ অন্যের হাতের ক্রীড়নক । বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত যুবসমাজ আজ অভিশপ্ত জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থা
বিশ্বের উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে দেখা যায় যে, তাদের পরিকল্পিত এবং কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার বাস্তব কর্মকাণ্ড। উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থায় কেরানি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আছে বিজ্ঞানী হওয়ার এবং কর্মের মন্ত্রে দীক্ষা নেওয়ার। ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশ উৎপাদনমুখী বা কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যকে প্রসন্ন করেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষা চালু করে তারা আজ উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছে।
আরও পড়ুন :- বৃত্তিমূলক শিক্ষা : বাংলা রচনা । Sikkhagar
কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্ব
প্রচলিত কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা :
আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার সম্ভাবনা
কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি
সাধারণ শিক্ষার চেয়ে বৃত্তিমূলক কর্মমুখী শিক্ষা যে বেশি উপকারী এই চেতনা সৃষ্টি করতে না পারলে আমাদের ব্যক্তি বা জাতীয় জীবনে উন্নতি ও অগ্রগতি সম্ভব নয় । রেডিও, টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা বা অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে মানুষের মধ্যে এই চেতনাবোধ সৃষ্টি করতে হবে।
আরও পড়ুন :- বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার : বাংলা প্রবন্ধ রচনা
কর্মমুখী শিক্ষার উপকারিতা
কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার
বৃত্তিমূলক /কর্মমুখী শিক্ষার শ্রেণিবিভাগ :
সাধারণ শিক্ষা ও কর্মমুখী শিক্ষা :
কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র :
তথ্য যোগাযোগ সঞ্জাত কাল, কম্পিউটার অপারেটিং, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, রঙের কাজসহ আরও অসংখ্য ক্ষেত্র আছে যেখানে বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতার সাহায্যে সহজেই কর্মসংস্থান করে নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে পেশাগত উৎকর্ষ অর্জন ও সম্মানের সাথে কর্ম পরিচালনার যথেষ্ট সুযোগ বিদ্যমান। তাছাড়া সাধারণ শ্রমিকের চেয়ে এসব ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক যেমন বেশি তেমনি কর্মের নিশ্চয়তাও বিদ্যমান। আজকাল মৎস্যচাষ, হাঁস- মুরগি পালন, পৰাদি পশু বর্ধন, ডেইরি প্রভৃতিও কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
প্রচলিত শিক্ষার ত্রুটি :
কর্মমুখী/বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ :
কর্মমুখী শিক্ষার জন্য আনুষ্ঠানিক ও সরকারি উদ্যোগ :
এর পরবর্তী পর্যায়ে আছে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে চারটি প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়। বস্ত্র ও চর্মজাত শিয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী দুটো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার একাডেমিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে। ডিপ্লোমা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সংখ্যা ২৩টি। এর মধ্যে বহুমুখী ২০টি ও বাকি ৩টি একমুখী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
উপসংহার
বাংলাদেশ বিপুল জনসংখ্যার দেশ। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে এ জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব। দক্ষ জনশক্তি দেশের সম্পদ, উন্নয়নের চাবিকাঠি। তাই আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ব্যাপকভাবে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটানো দরকার।
আপনার জন্য রয়েছে এমন আরো পোস্ট