রচনা : জাতীয় জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব

ভূমিকা  

আমাদের মহানবি (স.) বলেছেন, 'স্বদেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ।' দেশের প্রতি ভালোবাসা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। দেশকে ভালোবাসে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। যে মানুষের মধ্যে স্বদেশপ্রেম নেই সে মানুষ পদবাচ্য নয় ।

স্বদেশপ্রেমের সংজ্ঞা  

মহান প্রভু যাকে যে দেশ বা যে অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছেন, সেটিই তার স্বদেশ। স্বদেশপ্রেম অর্থ হচ্ছে নিজ দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, ভাষার প্রতি সুতীব্র আকর্ষণ এবং ভালোবাসা অনুভব করা। দেশের প্রতি গভীর অনুরাগ, নিবিড ভালোবাসা ও যথার্থ আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলা হয়। মাতৃভূমির মঙ্গলের জন্য ত্যাগ বা আত্মত্যাগের যে সাধনা তাই স্বদেশপ্রেম বা দেশপ্রেম।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ  

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ হলো, দেশের প্রত্যেকটি মানুষ, প্রত্যেকটি বস্তু এবং দেশীয় সংস্কৃতিকে মনে-প্রাণে ভালোবাসা। মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আপসহীন মনোবৃত্তি লালন করতে হবে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে, বিশেষত দেশ যখন বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হবে তখন জাতিকে দেশের জন্য জীবন বাজি রাখতে হবে। সর্বশক্তি দিয়ে বিদেশি দখলদার শক্তিকে রুখতে হবে। এজন্য জাতিকে প্রচুর রক্ত ও মহামূল্য জীবন দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। তবেই দেশের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা প্রকাশ পাবে।

আরও পড়ুন :- স্বদেশ প্রেম রচনা ১৫ পয়েন্ট [ SSC এবং HSC ]

ধর্মীয় দৃষ্টিতে স্বদেশপ্রেম  

দেশ নামক ভৌগোলিক যে সীমারেখা তা একটি জাতির জন্য আশ্রয়স্বরূপ। এ কারণেই প্রত্যেক ধর্মেই স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের মহানবি (স.) স্বদেশপ্রেমকে ইমানের অঙ্গ বলেছেন। হিন্দুধর্ম বলে, ‘স্বদেশ স্বর্গের চেয়েও পবিত্র'। যে ব্যক্তি দেশকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে না, দেশের গৌরবে গৌরবান্বিত হয় না, দেশবাসীর দুঃখ অনুভব করে না, সে ব্যক্তি খাঁটি মুমিন হতে পারে না। অর্থাৎ মুমিন হতে গেলেও স্বদেশপ্রেম থাকতে হবে। এভাবে স্বদেশপ্রেম ধর্মীয় দৃষ্টিতেও স্বীকৃত । 

স্বদেশপ্রেমের ভিন্নরূপ  

স্বদেশপ্রেম আপসহীন হতে হবে। তবে অবশ্যই তা অন্ধ বা সংকীর্ণ হতে পারবে না। কারণ এটি অন্য দেশকে ঘৃণা করতে শেখায়। ফলে জাতিতে দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে ওঠে। উগ্র জাতীয়তাবোধের কারণে পৃথিবীতে অনেক দেশেই জাতিতে জাতিতে প্রাণঘাতী সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। ঝরে পড়েছে অনেক প্রাণ, বিপন্ন হয়েছে দেশের স্বাধীনতা। তাই স্বদেশপ্রেম বা দেশপ্রেম থাকতে হবে স্বাভাবিক, যা কখনোই উগ্র হবে না ।

দেশপ্রেমীর আদর্শ  

দেশপ্রেমী হবে দেশের গৌরব ও মর্যাদার নমুনা। তার চরিত্র ও আদর্শ দিয়েই প্রমাণ করতে হবে, সে কোন দেশের নাগরিক এবং সে দেশের প্রতি তার মমত্ববোধের দৃষ্টান্ত ।

আরও পড়ুন :-  স্বদেশ প্রেম - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] hsc

স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত  

প্রত্যেক দেশই তার মাটিতে কিছু শ্রেষ্ঠ সন্তান জন্ম দেয়, যারা তাদের কর্মের জন্য অমরত্ব লাভ করে। পৃথিবীতে এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে যে সকল দেশপ্রেমী বীরদের নাম পাওয়া যায় তারা হলেন এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু, তিতুমীর, জিয়াউর রহমান, সূর্যসেন প্রমুখ। তাছাড়া চীনের মাও সে-তুং, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, রাশিয়ার লেনিন, উত্তর কোরিয়ার কিম ইল সুং প্রমুখ বিশ্বের ইতিহাসে দেশপ্রেমী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।

উপসংহার  

দেশপ্রেম মানবধর্ম। যার মধ্যে এ গুণ নেই সে অমানুষ। স্বদেশপ্রীতির চরম লক্ষ্য হওয়া উচিত মানবপ্রীতি ও বিশ্বপ্রীতি।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad