সংজ্ঞা : বাংলাদেশের জনগণ যে অর্থবহ ধ্বনিময় সংকেতের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে ভাব বা ইচ্ছা আদান-প্রদান করে থাকে, তাকে বাংলা ভাষা বলে ।
সাধারণত দেশ বা জাতির নাম অনুসারে ভাষার নাম দেয়া হয়ে থাকে, যেমন— বাংলাদেশীদের ভাষাকে বাংলা ভাষা; আরবদের আরবি ভাষা; জাপানিদের জাপানি ভাষা; ইংল্যান্ডে ইংরেজি ভাষা; চীনাদের ভাষাকে চীনা ভাষা বলে ।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি :-
আমাদের মাতৃভাষার উৎপত্তি কোথায়, কখন কিভাবে তা জানা অবশ্য প্রয়োজন। বাংলা ভাষার মূল উৎস হল বৈদিক সংস্কৃতি, এটি প্রাচীন আর্য জাতির ভাষা। আর্যদের আগমনের আগে ভারত-বাংলাদেশে দ্রাবিড় ও কোল এ দুটি অনার্য জাতির ভাষা প্রচলিত ছিল।
ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, খ্রিস্টপূর্ব পনের শতকের পূর্বে ইরানের (পূর্ব পারস্যের) মধ্য দিয়ে আর্য জাতি এ দেশে আগমন করেন। যারা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আসে তারা ভারতীয় আর্য নামে খ্যাত। এই নব্য ভারতীয় আর্যদের ভাষা মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার স্তর অতিক্রম করে প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা হতে বিবর্তিত হতে হতে বর্তমান রূপ লাভ করেছে।
বাংলা আজ স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত একটি ভাষা। ইহা পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার মত নানা ভাষা থেকে শব্দ চয়ন করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে। সংস্কৃত, ফরাসি, তুর্কি, উর্দু, আরবি, ইংরেজি প্রভৃতি নানা ভাষার শব্দ বাংলা ভাষা গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন :- ভাষা কাকে বলে-কত প্রকার এবং ভাষার বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা
বাংলা ভাষার বিবর্তনকে তিনটি যুগে বিভক্ত করা যায়; যথা :
১। প্রাচীন যুগ ৷
২। মধ্য যুগ ।
৩। আধুনিক যুগ ।
১. প্রাচীন যুগ : এ যুগ খ্রিস্টীয় ৬৫০ সাল থেকে ১২০০ সাল পর্যন্ত। এ যুগের সাহিত্যের আদি নিদর্শন হলো চর্যাপদ। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজকীয় গ্রন্থাগার থেকে দুর্লভ এ বইটি আবিষ্কার করেন। এ ছাড়া শূন্যপুরাণ এ যুগের উল্লেখযোগ্য রচনা ৷
উদাহরণ : “আলি এঁ কালি-এঁ বাট রূন্ধেলা । ”
২. মধ্য যুগ : এ যুগ খ্রিস্টীয় ১২০০ সাল থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত। এ যুগের আদি কবি বড়ু চন্ডীদাস এবং তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তন'। এ যুগের আদি মুসলমান কবি ছিলেন শাহ মুহম্মদ সগীর। তাঁর কাব্যের নাম ‘ইউসুফ জুলেখা’। পনেরো শতকে মুকুন্দ দাস, সতেরো শতকে সৈয়দ আলাওল মধ্যযুগের উল্লেখযোগ্য কবি।
উদাহরণ : “কে না বাঁশি বাএ বড়ায়ি কালিনী নই কূলে।”
৩. আধুনিক যুগ : ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত আধুনিক যুগ বিস্তৃত। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ও মধ্যযুগ ছিল মূলত কাব্যনির্ভর। বাংলা গদ্যের সূচনা হয় আধুনিক কালে। বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস প্যারীচাঁদ মিত্রের ‘আলালের ঘরের দুলাল'। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র, মীর মশাররফ হোসেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাস, তারাশংকর, বুদ্ধদেব বসু, শামসুর রাহমান, শওকত ওসমান, হুমায়ূন আহমেদ প্রমুখ আধুনিক যুগের শ্রেষ্ঠ কবি ও সাহিত্যিক।
উদাহরণ : “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।”
আরও পড়ুন :- সাধু, চলিত ও আঞ্চলিক ভাষা কাকে বলে? এদের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ
👉বাংলা ভাষার উৎপত্তি ছক আকারে নিচে দেখানো হল :
পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিম বঙ্গের জনসাধারণ এবং আসাম, ত্রিপুরা, বিহার ও উড়িষ্যার এবং মায়ানমারের আরাকান অঞ্চলের কিছু লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় আড়াই হাজার রকমের ভাষা প্রচলিত রয়েছে। মোটামুটি হিসাবে পৃথিবীতে বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ত্রিশ কোটিরও বেশি। জনসংখ্যার দিক থেকে ব্যবহারের ভিত্তিতে বাংলা ভাষার স্থান এখন চতুর্থ।
বাংলা ভাষার রূপ :-
বাংলা ভাষার রূপ প্রধানত দুটি। যথা-
১. সাধু ভাষা।
২। চলিত ভাষা ।
👉নিচের ছকে এ দুটি রূপ দেখানো হলো :-
১। সাধু ভাষা : যে ভাষা রীতিতে ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ পূর্ণরূপে বর্তমান থাকে, তাকে সাধু ভাষা বলে। যেমন-তাহারা পড়িতেছে। ছেলেগুলি খেলিতেছে ইত্যাদি।
২। চলিত ভাষা : যে ভাষা রীতিতে ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যবহৃত হয়, তাকে চলিত ভাষা বলে। যেমন-তারা পড়ছে। ছেলেরা খেলছে ইত্যাদি।