বাংলাদেশের ক্রিকেট - প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা  

বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন একটি জাতীয় আবেগ। বাংলাদেশ দলের খেলা থাকলে দেশের মানুষ যেন সব ভুলে যায়, পরিণত হয় ক্রিকেট পাগলে। ক্রিকেট দলের কোনো ভালো খবর পুরো জাতিকে যেমন উদ্‌বলিত করে তেমনি খারাপ খবরে মুষড়ে পড়েন দেশের মানুষ। ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান বেশ আশাব্যঞ্জক ।

ক্রিকেটে বাংলাদেশের আবির্ভাব  

বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদী, ক্রীড়াসংগঠক এবং খেলোয়াড়দের উৎসাহে গড়ে ওঠা ক্রিকেটে পরিমণ্ডলের সাফল্যের প্রাথমিক স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৭ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থার সহযোগী সদস্যপদ লাভ করে । তৎকালীন বাংলাদেশ ক্রিকেট সংস্থার প্রচেষ্টায় ক্রমে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক স্তরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। 

দুইদিন, তিনদিন ও চারদিনের খেলার স্তর পার হয়ে অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আইসিসি চ্যাম্পিয়নশীপ এ বিজয়ী হবার মধ্য দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের বৃহত্তম আসর “আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট ১৯৯৯” এ খেলার সুযোগ পায় । প্রথমবারের অংশগ্রহণ বাংলাদেশকে এনে দেয় শক্তিশালী পাকিস্তান এর বিপক্ষে ঐতিহাসিক বিজয়।

বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় সাফল্য  

১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েই বাংলাদেশ বিশ্ববাসীকে চমকে দেয়। এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। এরপর ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে বিস্ময় সৃষ্টি করে। ২০০০ সালে ওয়ানডে স্ট্যাটাসের পাশাপাশি বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করে। 

আরও পড়ুন :আমার প্রিয় খেলা : ক্রিকেট - রচনা 

অভিষেক টেস্টে ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ খেলা উপহার দেয় বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে ও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য দেখে হতবাক হয় ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত দেশগুলো। তারপর থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। 

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট  

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দর্শকনন্দিত ক্রিকেট উপহার দিচ্ছে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ সাফল্যের পর ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে অবতীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। 

বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন আরও শানিত হয়েছে। পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ, সাউথ আফ্রিকা ও ভারতকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে যে, ক্রিকেট বিশ্বে তারা আর ‘আন্ডার ডগ’ নেই। তারা এখন শুধু জয়ের জন্যই ক্রিকেট খেলে ।

বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট  

ঘরোয়া ক্রিকেটেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থেমে নেই। প্রিমিয়ার ডিভিশন, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটের পাশাপাশি এখন স্কুল ক্রিকেট জনপ্রিয় হচ্ছে। এছাড়া ভারতের আইপিএলের আদলে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে বিপিএল, যাতে বিশ্বের নানা দেশের ক্রিকেটাররা অংশ নিচ্ছেন। ফলে দেশীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের একটি তুলনামূলক সুস্থ প্রতিযোগিতা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাদেরও খ্যাতি বাড়ছে।

আরও পড়ুন :- আমার প্রিয় খেলা ফুটবল - বাংলা রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10

বাংলাদেশের ক্রিকেটার  

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পরিচিতি এখন বিশ্বব্যাপী। অলরাউন্ডার হিসেবে টেস্ট, ওয়ান ডে, টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান ১ নম্বর স্থান দখল করে বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছেন। মাশরাফির অসাধারণ নেতৃত্ব, তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের ব্যাটিং দক্ষতা, মুশফিকের বিচক্ষণতা, রুবেল ও মুস্তাফিজের অদম্য বোলিং বাংলাদেশকে ক্রিকেটের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। 

তবে এ ইতিহাসের ভিত গড়েছেন অলোক কাপালি, শাহরিয়ার নাফিস, শাহাদাত হোসেন ও আশরাফুলের মতো ক্রিকেটাররা। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এখন ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ও আগ্রহ এত বেশি যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক নতুন প্রতিভার আগমন ঘটবে বলে আশা করা যায় ।

উপসংহার  

ক্রিকেটকে বলা হয় গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। বর্তমানে ক্রিকেট বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছে। দল মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাফল্যে আনন্দ উদযাপনের মাধ্যমে এক ধরনের উৎসবের আমেজ তৈরি করে। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে ক্রিকেট হতে পারে এক অনন্য হাতিয়ার

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad