ভূমিকা
খেলাধুলা মানবজীবনে আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টিতে অত্যন্ত সহায়ক। খেলাধুলা বিনোদনের উত্তম মাধ্যম। জাতীয় জীবনে বিনোদন হিসেবে খেলাধুলার বিকল্প নেই। এর প্রয়োজনীয়তা ব্যক্তি থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সকল স্তরেই সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।
খেলাধুলার ধরন
খেলাধুলা সাধারণত দু'ধরনের। একটি হচ্ছে ঘরোয়া খেলাধুলা এবং অন্যটি হচ্ছে মাঠের খেলাধুলা। এই দু'শ্রেণির খেলার মাঝে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক খেলাও হতে পারে। আমাদের দেশীয় খেলার মধ্যে হা-ডু-ডু বা কাবাডি, কানামাছি, বৌছি, গোল্লাছুট ইত্যাদি প্রধান ৷ আন্তর্জাতিক খেলার মাঝে রয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, টেনিস, দাবা, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ইত্যাদি। জাতীয় জীবনে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এ দু'প্রকার খেলারই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ।
খেলাধুলার প্রভাব
খেলাধুলা মানুষকে নিয়মানুবর্তী হতে ও চরিত্র গঠন করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের অবশ্যই মাঠ কর্তৃপক্ষ ও রেফারির সকল সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়। এছাড়া পরিমিত খেলাধুলা মানুষের মনকে সুন্দর ও প্রফুল্ল রেখে চরিত্র গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে । খেলাধুলার কারণে পরোক্ষভাবে হলেও গোটা মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটে ।
আরও পড়ুন :- আমার প্রিয় খেলা : ক্রিকেট - রচনা
খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষা
উন্নত বিশ্বে ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যাশিক্ষাকে চিত্তাকর্ষক করতে এবং পাঠ্যবিষয়ের চাপ লাঘব করতে শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। খেলার ছলে শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার নিয়মও আজকাল অনেক স্কুলে দেখা যায়।
উদাহরণস্বরূপ— বার্লিনের একটি স্কুলের কথা বলা যায়, সেখানে ক্লাস করতে করতে শিক্ষিকা হঠাৎ করে ছাত্রছাত্রীদের ব্যায়াম করার নির্দেশ দিলেন। এতে অঙ্ক কষার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের একঘেয়েমি কেটে যায় ৷ আজকাল ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলায় উৎসাহী করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে ।
জাতীয় জীবনে খেলাধুলা
শরীর ভালো থাকলে মন ভালো থাকে । শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম । খেলাধুলার আয়োজন করা হয় মনের খাদ্য জোগানোর জন্য। খেলাধুলার মাধ্যমে মনের প্রফুল্লতা রক্ষা করা যায়। তাই জাতীয় জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । খেলার রাজ্য জাতিকে কর্মের বন্ধন, সংসারের দৈনন্দিন ক্ষুদ্রতা, তুচ্ছতা এবং দুঃখ-গ্লানি থেকে মুক্ত করার বাণী বহন করে আনে ।
পরাধীন মনোবৃত্তি, কর্মক্লান্তি, আশাহীন-আনন্দহীন জাতির জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য । অকাল বার্ধক্যের হাত থেকে জাতিকে তারুণ্যের প্রাণচাঞ্চল্যে উজ্জীবিত করে খেলাধুলা। যে জাতির মধ্যে সুস্থ ও সবল লোকের অভাব রয়েছে, সে জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না। খেলাধুলা জাতিকে উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। এছাড়া খেলাধুলার মাধ্যমে উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব- ও ছোটো-বড়ো ভেদাভেদ অনেকাংশে দূরীভূত হয়।
আরও পড়ুন :- আমার প্রিয় খেলা ফুটবল - বাংলা রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10
জাতীয় জীবনে খেলার প্রচলন
জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে খেলাধুলার প্রচলন করতে হবে। খেলাধুলায় শরীর সুস্থ থাকে, কর্মের প্রেরণা বাড়ে। তাই প্রত্যেক নর-নারীর ক্ষেত্রে সুস্থ বিনোদনের জন্য সর্বত্র খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরোয়া খেলার জন্য ক্লাব, সমিতি বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। বাইরের খেলার জন্য মাঠ এবং খেলার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
খেলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকতা লাভ
আজকাল খেলাধুলা জাতীয় জীবনে সীমাবদ্ধ না থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই বিশ্বকাপ ফুটবল, বিশ্বকাপ ক্রিকেট, অলিম্পিক গেমস, কমনওয়েলথ গেমস এবং অন্যান্য খেলা বিশ্বব্যাপী মানুষ উপভোগ করছে। এতে এক দেশের সাথে অন্য দেশের মানুষের পরিচয় ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। বিশ্ব মানবগোষ্ঠী একই আসনে বসে আনন্দ উপভোগ করছে। তাই বলা যায়, খেলাধুলা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন।
উপসংহার
ক্রীড়াই জাতির শক্তি। জাতির সুস্থতা, জাতির আন্তর্জাতিক পরিচিতি এবং জাতির আনন্দের উৎস খেলাধুলায় নিহিত। তাই সর্বস্তরে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে পারলে যেমন সুস্থ-সবল জাতি গড়ে উঠবে, তেমনি জাতির উন্নতিও ত্বরান্বিত হবে। খেলার মাধ্যমে গড়ে উঠবে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধ জাতি ৷
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা