প্রবন্ধ রচনা : বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব

ভূমিকা  

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া আধুনিক সভ্যতা অচল। বর্তমানে প্রতিমুহূর্তে আমরা বিজ্ঞানের কাছ থেকে বিভিন্ন রসদ আহরণ করছি। বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে আজ আমাদের অস্তিত্ব যেন কল্পনা করা যায় না। গত একশ বছরে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর, অকল্পনীয় ও ব্যাপক অগ্রগতির ফলে আমাদের সমাজজীবন থেকে রাষ্ট্রীয়জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভাব পড়েছে। 

একুশ শতকের পৃথিবীতে বিজ্ঞানের এই প্রভাব যে আরও ব্যাপক, বিস্তৃত, বহুমুখী ও সদূরপ্রসারী হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনের প্রায় সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞান ও তার প্রয়োগ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। 

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের গুরুত্ব  

আমাদের সমাজজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিদ্যমান । এমনকি আমাদের চলন-বলন পর্যন্ত অনেক সময় বিজ্ঞানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আমরা টেলিফোন, মোবাইল ফোনে কথা বলি, বাস-মোটর গাড়ি-ট্রেনে যাতায়াত করি; টেলিগ্রাম-টেলেক্স-ফ্যাক্স মারফত দূর-দূরান্তরে বার্তা পাঠাই। এছাড়া, চিঠিপত্র না লিখলে আমাদের চলে না, যানবাহন ও যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হলে আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মেও বিপর্যয় ঘনিয়ে আসে।

উপরন্তু পথেঘাটে, অফিস- আদালতে, স্কুল-কলেজে সর্বত্র বিজ্ঞানের প্রভাব। গ্রামের পথ ধরে চলা বাঁধানো রাস্তাটি থেকে শুরু করে দূরের টেলিগ্রাম পোস্টটি পর্যন্ত বিজ্ঞানের অবদান। শহরে যানবাহনের সারি, ঘরবাড়ির ভিড়, অদূরবর্তী দোকান-বাজার ইত্যাদি সবকিছুই যেন বিজ্ঞান-শিক্ষার আশীর্বাদে পরিপুষ্ট। বিজ্ঞানের এসব নিত্যনতুন সৃষ্টি ও উপযোগিতা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জনের জন্য এবং ব্যবহারিক জীবনে তা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য বিজ্ঞান শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই ।

আরও পড়ুন রচনা সহজ : দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান [ Class 6, 7, 8, 9, 10 ]

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা  

বিজ্ঞান শিক্ষার অগ্রগতির ফলেই মানবজীবন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। মানুষ দূরকে নিকট করেছে, জীবনকে করেছে সুন্দর। বৃদ্ধি পেয়েছে মানুষের পরমায়ুও। বিজ্ঞানের সাহায্যেই দূরের নক্ষত্রলোকের খবর পেয়েছে মানুষ, গ্রহলোক সম্বন্ধে আহরণ করছে নতুন তথ্য। এছাড়া, পারমাণবিক জগৎ সম্বন্ধে আমরা নিত্য-নতুন খবর সংগ্রহ করছি।

বিজ্ঞানশক্তির সাহায্যে অজানার রুদ্ধ দুয়ার উন্মুক্ত করে নিত্য-নতুন জ্ঞান লাভ করছি। বিজ্ঞানের আলোকোজ্জ্বল সম্ভাবনাকে আপন উদ্ভাবনা দিয়ে আরও নতুন নতুন আবিষ্কার দ্বারা রোগ ও দারিদ্র্যকে দূরীভূত করে একটি সুন্দর বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে। এজন্যে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। 

জীবনে বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক অবদান  

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মানুষের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিজ্ঞান জড়িত। মানবজীবন আর বিজ্ঞান একই সূত্রে গাঁথা। যাতায়াত, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশলসহ জীবনের হাজারো ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে বিজ্ঞান  

মুদ্রণযন্ত্র, ক্যালকুলেটর, কাগজ, জ্ঞান আহরণের জন্যে সংবাদপত্র ও পুস্তকাদি সবকিছুই বিজ্ঞানের দান । চলচ্চিত্র, বেতার যন্ত্র, টেলিভিশন প্রভৃতি যেমন মানুষকে অফুরন্ত আনন্দ দিচ্ছে, তেমনি শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে। কম্পিউটার বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করেছে এক নতুন দিগন্ত। 

Advertisement Advertisement

বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা এখন কম্পিউটারেই শিখতে পারছে অসংখ্য বিষয় । তাছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন বিখ্যাত লাইব্রেরির বই, বিখ্যাত শহর- বন্দর বাণিজ্য, দেশ ইত্যাদি সম্পর্কে মুহূর্তেই সংগ্রহ করতে পারছে বিভিন্ন উপাত্ত ৷

আরও পড়ুন মানব কল্যাণে বিজ্ঞান অথবা বিজ্ঞানের জয়যাত্রা – রচনা | PDF 

বিজ্ঞান শিক্ষার নানা পর্যায় ও নানা উপযোগিতা  

আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান শিক্ষা মোটামুটি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত। প্রাথমিক পর্যায়ে বিজ্ঞানের সাধারণ বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। 

উচ্চ পর্যায়ে চিকিৎসা, প্রকৌশলী, কারিগরি, কৃষিবিদ্যা, কম্পিউটার, রসায়নবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, ভূ-তত্ত্ববিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, সামুদ্রিক বিজ্ঞানসহ আরও অনেক বিষয় রয়েছে যা থেকে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানার্জন করে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে যেমন তাল মিলিয়ে চলতে পারছে তেমনি দেশের জন্যেও নানা বিষয় উদ্ভাবন ও কর্মক্ষেত্রে কাজ করে আমাদের জাতীয় অগ্রগতি ও উন্নয়নে অবদান রাখছে।

উপসংহার  

সত্যকে চিনে নেওয়াই বিজ্ঞানবোধের পরিচয়, আর এখানেই বিজ্ঞান শিক্ষার প্রকৃত গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিহিত। বিশ্ব পরিসরে সর্বত্র তাই জীবনঘনিষ্ঠ বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞানচর্চার গুরুত্ব বেড়েছে। বর্তমানে বিজ্ঞান শিক্ষা আরও বাস্তবমুখী হয়েছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি ।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment

Advertisement Advertisement
error: Content is protected !!