কীর্তিমানের মৃত্যু নেই:ভাবসম্প্রসারণ (৩ বই থেকে ৩টি)

প্রিয় শিক্ষার্থী বৃন্দ, তোমাদের শেখার সুবিধার্থে "কীর্তিমানের মৃত্যু নেই অথবা মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে বয়সের মধ্যে নয়" ভাবসম্প্রসারণটি ৩টি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো। তোমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে সহজ মনে হয় সেটাই শিখে নেবে। 

ভাবসম্প্রসারণ - ১

মূলভাব : মানুষ নশ্বর কিন্তু তার সৎ কর্মগুলো অবিনশ্বর। মানুষ মরে গেলে মাটিতে মিশে যায় কিন্তু তার কর্মগুলো উজ্জ্বল হয়ে পৃথিবীর মানুষকে আলোর পথ দেখায়।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের জীবনকে বয়সের সীমায় আবদ্ধ করা যায় না। কর্ম মানুষকে হাজার হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখে। বিশ্ববাসী তার কর্মের জন্যই প্রতিক্ষণে তাকে স্মরণ করে। যেমন: শেক্সপিয়র, সক্রেটিস, আব্রাহাম লিংকন, মাদার তেরেসা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন কিন্তু তাঁদের আদর্শ, কীর্তি সবই চিরকাল স্মরণীয়। 

তাঁদের সকল কীর্তিই আমাদের আদর্শস্বরূপ। পক্ষান্তরে, এমন অনেক মানুষ আছে যারা পৃথিবীতে অনেক সুখে দিনাতিপাত করলেও মৃত্যুর ঠিক পর দিনই তাদেরকে পৃথিবীর মানুষ ভুলে যায়। তারা সময়ের বিবর্তে ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু কীর্তিমান মানুষের কীর্তির জ্যোতি পৃথিবীর সর্বত্রই আলো ছড়ায়। 

পৃথিবীতে বহু লোক অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেও অমর হয়ে আছেন। কবি সুকান্ত মাত্র একুশ বছর সাধনা করে অমরত্বের আস্বাদ গ্রহণ করেছেন। বয়সের হিসাব করে মানুষের বেঁচে থাকাকে মূল্যায়ন করা হয় না। তাই মানুষের দৈহিক মৃত্যুই প্রকৃত মৃত্যু নয়। তাইতো জনৈক মনীষী বলেছেন, “মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার একমাত্র পথ তার কর্ম। ”

মন্তব্য : মানবহৃদয়ে স্থান নিতে হলে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে নিজেকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত করতে হবে। সৎকর্মই মানুষকে সুন্দর, সার্থক এবং আনন্দময় জীবন দান করতে পারে।

আরও পড়ুন :- ভাবসম্প্রসারণ : ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ 

ভাবসম্প্রসারণ - ২

মূলভাব : মানুষ মরণশীল। এটি একটি চিরন্তন সত্য। কিন্তু কোন কোন মানুষ তাদের মহৎ কর্মের মাধ্যমে অমর থাকেন। তারা মরেও জীবিত ।

সম্প্রসারিত ভাব : কেবলমাত্র প্রাত্যহিক জীবন ধারণের জন্য বেঁচে থাকাটাই মানব জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। সাংসারিক ভোগ-বিলাস, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্যে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য নিয়েই যাদের জীবন পরিচালিত হয় তাদের দ্বারা কোন মহৎ কর্ম সাধিত হয় না। পৃথিবীতে এ ধরনের লোকের বেঁচে থাকার মধ্যে কোন স্বার্থকতা নেই । তাই জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার সাথে সাথে লোকস্মৃতি থেকে এদের নামও মুছে যায় । কিন্তু যথার্থ কীর্তিমান মানুষের মহান কীর্তি পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকে। 

যারা সংসারের প্রাত্যহিকতা স্বীকার করে নিয়েও মানব কল্যাণে নিজের সমগ্র কর্ম-প্রচেষ্টাকে নিয়োজিত করেন তাদের নাম বেঁচে থাকতে যেমন, মৃত্যুর পরও লোকমুখে তার নিজস্ব কীর্তির মহিমায় লাভ করেন অমরত্ব । সমাজে তিনি মহৎরূপে নন্দিত। তার মহৎ কাজ, অম্লান কীর্তি পৃথিবীর মানুষের কাছে তাঁকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখে । তাঁর মৃত্যুর শত শত বছর পরেও মানুষ তাকে স্মরণ করবেই।

কবির ভাষায় বলতে হয়, “তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ।” কালস্রোতে সবার নামই একদিন হারিয়ে যাবে কিন্তু আপন কৃতিত্বের দ্বারা সমাজ -সভ্যতাকে যারা এগিয়ে নিয়ে গেছেন, দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, শিল্প, সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান রেখে গেছেন, সেই সব কীর্তিমানদের নাম কখনো হারিয়ে যাবে না। তারা চিরকাল বেঁচে থাকবেন ।

মন্তব্য : মানব দেহ নশ্বর কিন্তু কীর্তি অবিনশ্বর। মানব কল্যাণে সে যদি অবিরাম কাজ করে প্রতিষ্ঠা করে অমর কীর্তি, তবে মৃত্যুর পরেও তার এ কীর্তির মধ্য দিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ের মণি কোঠায় ।

আরও পড়ুন :- ভাবসম্প্রসারন : মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন বিলাস ধন নহে (২টি) 

ভাবসম্প্রসারণ - ৩

মূলভাব : এ পৃথিবীতে সুন্দর কর্মের জন্যই মানুষ মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে। অক্ষয় হয়ে থাকে তার কীর্তি।

সম্প্রসারিত ভাব : একথা চিরন্তন সত্য যে, আমরা মরণশীল। আমাদের দেহ একদিন মাটির সাথে বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু এ নশ্বর পৃথিবীতে সে আপন কীর্তির মহিমায় অমরত্ব লাভ করতে পারে। মানুষ শুধু আহার-নিদ্রায়, ভোগ-বিলাসে মগ্ন থাকার জন্য পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে না। তার জন্মের মূলে নিশ্চয় স্রষ্টার একটা মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। নইলে মানুষকে বুদ্ধি না দিয়ে পশুর মতো করেই পৃথিবীতে পাঠানো হতো। 

মানুষের বুদ্ধিমত্তা আছে বলেই সে শুধু আত্মকল্যাণে জীবন কাটিয়ে দিয়ে তৃপ্ত হতে পারে না, জনকল্যাণের মাঝে নিয়োজিত রেখেই সে তার মানুষ নামের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। ফলে এই জনকল্যাণের মাপকাঠি দিয়েই মানুষের জীবনের মূল্য পরিমাপ করা হয়ে থাকে। যে স্বার্থপর লোক শুধু নিজের সুখের জন্য কাজ করে এবং তার চারপাশের যেসব অসহায় নর-নারী রয়েছে তাদের দুঃখ মোচনের জন্য কোনো কিছুই করে না। 

মৃত্যুর সাথে সাথেই তার স্মৃতি চিরদিনের জন্য পৃথিবীর বুক থেকে মুছে যায়। তার জন্য কেউ শোক করে না এবং তার কথা কেউ কোনো দিন মনে রাখে না। পক্ষান্তরে, অন্যের জন্য যারা অকাতরে নিজেকে বিলিয়ে দেয়, মৃত্যু তার মরদেহ কেড়ে নিলেও তার কীর্তির কথা, তার মহত্ত্বের কথা কেউ ভোলে না। সে সকলের নিকট স্মরণীয়, বরণীয় হয়ে থাকে। মানুষ তার কর্মকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রতিনিয়ত।

Post a Comment

0 Comments