ভাব সম্প্রসারণ : শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির (২টি)

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগণ, তোমাদের শেখার সুবিধার্থে "শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির লিখে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির" ভাবসম্প্রসারণটি ২টি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো। তোমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে সহজ মনে হয় সেটাই শিখে নিতে পারো। 

 শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির ভাব সম্প্রসারণ - ১

মূলভাব : সংকীর্ণচেতা ব্যক্তি সর্বদা অন্যের উপকারকে তুচ্ছ জ্ঞান করে নিজের সামান্য উপকারকে বৃহৎ করে অকৃতজ্ঞতার প্রমাণ দেয় ।

সম্প্রসারিত ভাব : এই অকৃতজ্ঞতা বোধ শৈবালের জীবনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পুকুরের বিশাল জলরাশির দানেই শৈবালের আবির্ভাব। এখানেই তার জন্ম, তার অবস্থান। অথচ শৈবাল কোনো কোনো পর্যায়ে তার অস্তিত্বকে ভুলে যায়। তার উচিত দিঘির পানির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কিন্তু সে তা না করে অকৃতজ্ঞ মানসিকতার পরিচয় দেয় নিজের বাহাদুরি প্রকাশের মাধ্যমে। 

শীতের ভোরে শৈবালের গায়ে যে দু-এক ফোঁটা শিশির জমা হয়, তা এক পর্যায়ে দিঘির পানিতে বিলীন হয়। এই সামান্য এক ফোঁটা শিশির দানের দাম্ভিকতা তাকে তার অস্তিত্ব ভুলিয়ে দেয়। তারা কখনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে জানে না। সে কেবল নিজের তুচ্ছ দানের কথাই বার বার মনে করিয়ে দেয়। 

এই শৈবালের দান যে দিঘির জন্য কিছুই না তা সে ভুলে যায়। মানবজীবনের ক্ষেত্রেও অনেক সময় এমন ঘটে। এক শ্রেণির লোক আছে যারা- যার অনুগ্রহে অনেক বড় হয়, যাদের দ্বারা উন্নতির সোপান পায়, ঠিক তাদেরই সামান্য উপকার করে দাম্ভিকতার সাথে তা প্রচার করে। স্বার্থান্ধ মানুষ কখনো অন্যের প্রশংসা করতে পারে না।

মন্তব্য : প্রকৃতপক্ষে উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। নিজের তুচ্ছ উপকারকে কখনো মানুষের সামনে উত্থাপন করা উচিত নয়। এতে সংকীর্ণতার পরিচয় প্রকাশ পায়।

আরও পড়ুন :- স্বদেশের উপকারে নাই যার মন : ভাবসম্প্রসারণ - (৩টি)

 শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির ভাব সম্প্রসারণ - ২

মূলভাব : সামান্য উপকার করে দাম্ভিকতা প্রকাশ করা এবং সেই উপকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া ধৃষ্টতা।

সম্প্রসারিত ভাব : এ পৃথিবীতে কারো শক্তি ও সামর্থ্য সমান নয়। এখানে শক্তি, সামর্থ্য ও কর্মক্ষমতায় মানুষে মানুষে বিরাট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। কেউ কেউ বিরাট ক্ষমতা বা শক্তির অধিকারী। তাঁরা বিপুল অবদানের দ্বারা এ পৃথিবীর অশেষ কল্যাণ সাধন করে যাচ্ছে। কারো আবার সে ক্ষমতা নেই, তারা ক্ষমতাশীলদের দানে ধন্য হয়ে কালাতিপাত করে আসছে। দীঘির জলেই শৈবালের জন্ম। 

দীঘির জল পান করে দীঘির জলে অবগাহন করেই সে বেঁচে থাকে। অথচ শৈবালের পত্রপুটে আটকে থাকা রাতের আকাশের এক ফোঁটা শিশির যখন দিনের আলো-বাতাসের আঘাতে দীঘির জলে ঝরে পড়ে, তখন মাথা উঁচিয়ে শৈবাল দীঘিকে সেই এক ফোঁটা শিশিরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। শৈবাল দীঘিকে বোঝাতে চায়, দীঘি যেন এক ফোঁটা শিশিরের জন্য শৈবালের কাছে ঋণী হয়ে থাকে।

পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে শুরু করে আজও সেকালের ন্যায় ক্ষুদ্র ও নীচু প্রকৃতির মানুষ এ বিশ্বসমাজের আনাচে-কানাচে বিরাজমান । তারা সর্বদাই নিজেদের ক্ষুদ্রতাকে বৃহৎ করে জাহির করার লক্ষ্যে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বেড়ায়। তাদের সঙ্গ থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত নতুবা মানহানি অনিবার্য। 

এ বিশ্ব সংসারে এমন কিছু লোক আছে যারা উপকারীর উপকার স্বীকার করে না; বরং তারা যার উপকার বা দয়ার দানে পরিপুষ্ট, তার অতি সামান্য উপকার করতে পারলেই খোটাস্বরূপ তা প্রচার করতে থাকে। এই দাম্ভিকতা পরিহার করা উচিত। এতে জীবন কখনো মহৎ হয় না, বরং নীচুতার পরিচয় বহন করে৷

Post a Comment

0 Comments