শিশুশ্রম – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা  

আজকের শিশু জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই শিশুকে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যোগ্য নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। উন্নত বিশ্বে শিশুদের কল্যাণ ও বিকাশের জন্য নানা রকম পরিচর্যার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের কারণে অধিকাংশ শিশুরই উপযুক্ত কোনো পরিচর্যা করা হয় না। 

বরং জীবনের শুরুতে তাদের জীবিকার তাড়নায় নিয়োজিত হতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে। শিশুশ্রম তাই এদেশে খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। অথচ শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুদের সর্বনাশা ভবিষ্যৎ পরিণামের কথা কেউ ভাবেন না ।

শিশুশ্রমের প্রকৃতি  

অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের খুব ছোটোবেলা থেকেই উপার্জনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। জীবিকার তাগিদ এমনই যে, ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য বাধ্য হয়ে তাদের যেতে হয় কাজের সন্ধানে। দরিদ্র পরিবারে অধিক ছেলেমেয়ে হওয়ার কারণে অসচ্ছল বাবা-মা সন্তানদের ঠিকমতো খাবার দিতে পারে না। আর্থিক দুরবস্থার কারণে শিশুরা অল্পবয়সেই শ্রম বিক্রিতে বাধ্য হয়। 

আরও পড়ুন শ্রমের মর্যাদা- বাংলা রচনা[ Class – 6, 7, 8 ,9 ,10]- PDF ৩টি 

যেকোনো কাজে যৎসামান্য মজুরিতে শিশুরা শ্রম দেয়। শিশুশ্রমের ক্ষেত্র আমাদের দেশে বেশ প্রসারিত। বাসাবাড়ির কাজ, হোটেলে ধোয়ামোছার কাজ, গ্যারেজে গাড়ি মেরামত, গ্যাস ওয়েল্ডিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, নালা-নর্দমা পরিষ্কারের কাজ, ইট ভাঙা, পাথর ভাঙা থেকে শুরু করে এমন কোনো কাজ নেই যা শিশুদের দ্বারা করানো হয় না ।

শিশুশ্রম ও আন্তর্জাতিক আইন  

বিশ্বের প্রতিটি দেশেই শিশু অধিকার একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। জাতিসংঘ সনদে শিশু-অধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও এই সনদে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। তাই এদেশের শিশুদের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। 

শিশু অধিকারের আওতায় আঠারো বছরের নিচের বয়সি সকলকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। শিশু অধিকার আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, অর্থনৈতিকভাবে শোষণ শিশুদের অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। শিশুর সামাজিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করবে যেসব, সেসব বিপদ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হবে (ধারা ৩২)। শিশুদের সকল প্রকার হয়রানি, নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে হবে (ধারা ৩৪)। শিশুর শিক্ষা লাভের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে (ধারা ২৮)।

আরও পড়ুন কর্মমুখী শিক্ষা – রচনা ( ১২ পয়েন্ট ) 

শিশুশ্রম বন্ধে কতিপয় পদক্ষেপ  

এদেশে জনসংখ্যার প্রায় ৪৪ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। আর্থিক টানাপড়েনে পরিবারের অমানবিক চাপে পড়ে শিশুরা কঠিন শ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে। দরিদ্র পরিবারে অধিক জন্মহার শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ সরকার শিশুশ্রম প্রতিরোধে সীমিত আকারে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন-

Advertisement Advertisement

১. শিশুদের জন্য শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি প্রণয়ন ।

২. মেয়েদের জন্য এইচএসসি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা প্রবর্তন।

৩. বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা এবং বিনামূল্যে শিক্ষাসামগ্রী প্রদান ।

৪. উপবৃত্তি কার্যক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ।

৫. পোশাকশিল্পে শিশু শ্রমিকদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা।

উপসংহার  

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিশুশ্রম একটি সহজলভ্য পণ্যে পরিণত হয়েছে। শিশুশ্রম বন্ধ করা না গেলে দেশ প্রকৃত মানবসম্পদ সৃষ্টির সুযোগ হারাতে থাকবে। তাই এখনই এর জন্য বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করার আগে দেখা প্রয়োজন, শিশুরা কেন শ্রম দিতে বাধ্য হয়। 

এর কারণগুলো চিহ্নিত করে বাস্তবমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুশ্রম হ্রাস করতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। সে হিসেবে সরকারের যেমন যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি জনগণকেও শিশুশ্রমের ভবিষ্যৎ পরিণতি ও ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে অবগত করতে হবে। তবেই বাংলাদেশে শিশুশ্রম প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment

Advertisement Advertisement
error: Content is protected !!