সংজ্ঞা :- মানুষ যা বলে বা লিখে মনের ভাব প্রকাশ করে তাকে ভাষা বলে।
আমরা এভাবেও বলতে পারি,
মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে ভাষা বলা হয়। যেমন : বাংলা ভাষা, ইংরেজি ভাষা, আরবি ভাষা ইত্যাদি।
ভাষার প্রকারভেদ :-
ভাষা প্রধানত দুই প্রকার : যথা—
১. কথ্য বা মুখের ভাষা ।
২. লেখ্য বা লিখিত ভাষা ।
১. কথ্য ভাষা : সাধারণত আমরা যে ভাষায় কথা বলি, তাকে কথ্য ভাষা বলে।
২. লেখ্য ভাষা : আমরা যা লিখে বই পুস্তক বা পত্র পত্রিকার মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে মনের ভাব প্রকাশ করে থাকি, তাকে লেখ্য ভাষা বলে ।
কথ্য ভাষা আবার দুই প্রকার : যথা-
১. আঞ্চলিক ভাষা ।
২. সার্বজনীন ভাষা ।
১. আঞ্চলিক ভাষা : আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কথ্য ভাষার উচ্চারণ ও প্রকাশ ভঙ্গি বিভিন্ন। তাই অঞ্চল ভিত্তিক কথ্য ভাষাকে আঞ্চলিক ভাষা বলে।
২. সার্বজনীন ভাষা : সব অঞ্চলের সব লোক বোঝে এমন ভাষায় যখন আমরা কথা বলি, তখন তাে সার্বজনীন ভাষা বলে।
আরও পড়ুন :- বাংলা ভাষা কাকে বলে ও রূপ কয়টি কি কি। বাংলা ভাষার উৎপত্তি
লেখ্য ভাষা আবার দুই প্রকার : যথা -
১. সাধু ভাষা ।
২. চলিত ভাষা ।
১. সাধু ভাষা : যে ভাষা ব্যাকরণের যথাযথ নিয়ম-কানুন মেনে চলে, তাকে সাধু ভাষা বলে। সাধু ভাষা প্রাচীন সাহিত্যের মার্জিত ভাষা।
২. চলিত ভাষা : আমরা বক্তৃতা, সামাজিক কথা বার্তায় যে ভাষা ব্যবহার করে থাকি, তাকে চলিত ভাষ বলে। অবশ্য বর্তমানে চলিত ভাষাকে সাহিত্যে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
ভাষার বৈশিষ্ট্য :-
- কতকগুলো মৌলিক উপাদান নিয়ে ভাষা গঠিত; সেগুলো হলো : ধ্বনি, শব্দ ও বাক্য।
- মানুষের বাগযন্ত্রের উচ্চারিত ধ্বনি সমষ্টি দ্বারা ভাষা গঠিত।বাগযন্ত্রের ব্যতীত অন্য কোনোভাবে সৃষ্ট ধ্বনি ভাষা সৃষ্টি করছে পারে না।
- উচ্চারিত ধ্বনি সমষ্টি অবশ্যই অর্থ প্রকাশক হতে হবে।
- উচ্চারিত ধ্বনি বা শব্দ শোনা না গেলে তা ভাষা হিসেবে গণ্য হয় না ।
- ভাষা একই এলাকার বহুজনবোধ্য এবং পরিবর্তনশীল ।
- ভাষা পরস্পরের মাঝে যোগাযোগ সৃষ্টি করে ও ভাব বিনিময়ের মাধ্যম বা সেতুবন্ধ রূপে কাজ করে।
- ভাষা একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যা তার নিজস্ব ক্ষেত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম ।
- ভাষা যতই কঠিন শব্দ দিয়েই শুরু হোক না কেন, মানুষের ব্যবহারের ফলে ক্রমে ক্রমে এসে তা সহজ ও সরল হয়ে ওঠে।
- মানুষের মুখে ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষা স্থায়িত্ব লাভ করে।
- ভাষার দুটি প্রধান রূপ থাকে। লিখিত আর কথ্য। লিখিত অবস্থা ভাষার স্থায়ী রূপ হলেও ভাষার প্রকৃত অবয়ব ফুটে ওঠে কথ্য ভাষার মধ্যে।
ভাষার প্রয়োজনীয়তা :-
ভাষা শেখার প্রধান মাধ্যম হলো পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। ধরা যাক, একটি মানবশিশু জন্মগ্রহণ করল। জন্মের পর তাকে বনে রেখে আসা হলো। বনেই সে বড় হলো। তার কথা বলার মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকলেও সে কথা বলতে পারবে না। কারণ, তাকে ভাষা রপ্ত করতে হলে অনেক মানুষের সাথে জীবন কাটাতে হবে। তাকে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে হবে।
ভাষা ব্যাপারটি এমন যে, সমাজের মধ্যেই কেবল তা দেখা দিতে পারে এবং একসঙ্গে বসবাসকারী অনেক প্রাণীর মধ্যে এর ব্যবহার সম্ভব। মানব সমাজে বসবাস করতে হলে এবং তার মনোভাব প্রকাশ করতে হলে ভাষা জানা প্রয়োজন। সমাজ ছাড়া ভাষার কোনো প্রয়োজন নেই। বিচ্ছিন্ন একটি মানুষের কোনো ভাষা না হলেও চলে।
FAQs
১। ভাষার মূল উপকরণ কি?
উত্তরঃ বাক্য।