একটি সড়ক দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বন্ধুর নিকট পত্র- খাম আঁকা সহ

আল্লাহ অসীম দয়ালু 

পানিসারা, চাঁদপুর
তারিখ : ০৪-০১-২৪

প্ৰিয় শিহাব, 

শুভেচ্ছা নিও। আশা করি ভালো আছ। আজ অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তোমাকে লিখছি। একটি দুর্ঘটনা কিভাবে আমাকে মর্মাহত করেছে তা তোমাকে জানালে হয়তো আমার মনের বেদনা কিছুটা লাঘব হবে। আজ সকালে আমি সাইকেলযোগে স্কুলে যাচ্ছিলাম। প্রতিদিনের মতো কর্মব্যস্ত পরিবেশ। স্টেশন রোডে ৪-৫ বছরের একটি মেয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল। 

হঠাৎ একটি দ্রুতগামী মাইক্রোবাস মেয়েটিকে চাপা দিয়ে চলে গেল। চারদিকে হৈচৈ পড়ে গেল। মেয়েটির তাজা রক্তে পিচঢালা কালো রাস্তা রঞ্জিত হলো। তার মায়ের আহাজারীতে কেউই চোখের পানি সংবরণ করতে পারেনি। আজ সারাদিন শুধু ঐ দৃশ্যটাই আমার চোখে ভাসছে। জীবনে কোনোদিন এ দুর্ঘটনার দৃশ্য ভুলতে পারব বলে মনে হয় না।

তুমি সাবধানে রাস্তায় চলাচল কর। আজ আর নয়। আমার ভালোবাসা নিও। তোমার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনায় শেষ করছি।

ইতি 
তোমার বন্ধু
জনি

প্রেরক
জনি
পানিসারা
চাঁদপুর
ডাকটিকেট
প্রাপক 
শিহাব
গোপালপুর
টাঙ্গাইল

এই পত্রের অন্য আর একটি প্রতিলিপন 

আল্লাহ ভরসা 

ঢাকা
মার্চ ১০, ২০২৪

প্রিয় আদনান,

প্রথমে আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। আশা করি ভালো আছ। আজ তোমাকে এমন একটা দুর্ঘটনার কথা বলব যা আমার চোখের সামনে ঘটেছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। খবরের কাগজে, রেডিওতে, লোকমুখে চারপাশে হররোজ দুর্ঘটনার খবর কানে এসে পৌঁছায়। সেগুলো আমরা শুনি বটে কিন্তু মোটেই অনুভব করি না। এর জলন্ত প্রমাণ সেদিনের ঘটনা। তখন সকাল দশটা হবে। আমি সকাল সাতটা থেকে টেবিলে বসে রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ পড়ছিলাম। বেশ ক্লান্ত লাগছিল। তাই বাইরে একটু পায়চারি করে ফিরে এসে বইখানা শেষ করব মনে করে ঘর থেকে বের হলাম। 

জানইতো আমার বাংলা ঘর মেইন রোডের পাশে। ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তার ওপর আসার মিনিট খানেক পরেই ঢাকা থেকে মংলাগামী দুটো বাস দ্রুতবেগে চলে গেল। পথচারীদের বিকট চিৎকারে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম পাশের বাড়ির মনু চাচার ১০ বছরের ছেলে বশির রক্তাক্ত দেহে রাস্তায় লোটাচ্ছে। একটা পা দেহ থেকে বিছিন্ন হয়ে দূরে ছিকটে পড়ে রয়েছে। একবার দেখে আমার হাত-পা কাঁপতে লাগল। ঘাতক বাসটি কিন্তু খুব দ্রুত পালিয়ে গেছে। একটু পরেই বশিরের মা এসে উপস্থিত। 

নিহত রক্তাক্ত ছেলের দিকে তাকিয়ে মা বুকফাটা চিৎকারে রাস্তায় পড়ে গেলেন। আমি বেশিক্ষণ সেখানে থাকতে পারিনি। বাড়ি চলে আসি। কিন্তু সব উলটপালট, পড়তে মন বসে না। খাওয়া-দাওয়া চলাফেরা কিছুই ভালো লাগে না। শুধু কিসের যেন একটা আতক। এ ঘটনার কথা হয়ত আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। যন্ত্র দানবের হিংস্র থাবা আদম সন্তানের রক্ষারক এ কম্পিউটারের যুগেও মিলবে না? আজ অনেক লিখলাম। তোমার চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

ইতি 
তোমার প্রিয় বন্ধু 
রনি

প্রেরক
রনি
কেরানীগঞ্জ
ঢাকা
ডাকটিকেট
প্রাপক 
আদনান
সখিপুর
টাঙ্গাইল

Post a Comment

0 Comments