Ads Area

রচনা : আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব (মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ)

ভূমিকা : 

যুগে যুগে যেসব মহামানবের আগমনে এ পৃথিবী ধন্য হয়েছে তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ মহামানব মহানবি হযরত মুহম্মাদ (স)। তিনিই মানবতার মুক্তির দ্রুত যাঁর অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের কারণে সমগ্র পৃথিবীতে বইছে শান্তির সুবাতাস। তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। শান্তিপ্রতিষ্ঠায় তাঁর এ প্রাণান্ত চেষ্টা ও চারিত্রিক গুণাবলির জন্য তিনিই আদর্শ মহাপুরুষ। আর্মার প্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং শ্রেষ্ঠ মহামানব।

জন্ম ও শৈশব : 

সর্বযুগশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহম্মাদ (স) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ২৯ আগস্ট, রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ রোজ সোমবার আরবের বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম বিবি আমিনা। তাঁর জন্মের পূর্বেই পিতা এবং ৬ বছর বয়সে মাতা ইনতিকাল করেন।

বাল্যকাল : 

ছেলেবেলায় হযরত মুহম্মাদ (স) কোনো বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পাননি। প্রকৃতি কোলে অসীম আকাশ আর দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমি ও পাহাড় তাঁর একমাত্র শিক্ষাগার ছিল। শৈশব কৈশোরের সততা, কোমল স্বভাব ও অপরিসীম কর্তব্যবোধ, অকৃত্রিম সাধুতা প্রভৃতি গুণাবলির জন্য তাঁকে সর্বশ্রেণির লোকজন ‘আল-আমিন বা বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত করে।

আরও পড়ুন : মহানবী সাঃ এর জীবনী - রচনা ১০০, ২০০ ও ৩০০ শব্দ - PDF

যৌবনকাল : 

হযরত মুহম্মাদ (স) এর বয়স যখন বারো তখন আবু তালিব তাঁকে নিয়ে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়া গমন করেন। ২০ বছর বয়সে হযরত মুহম্মাদ (স) ব্যবসায় আরম্ভ করেন। মক্কায় খাদিজা নাম্নী উচ্চমনা, বুদ্ধিমতী, নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ধনবতী এক বিধবা মহিলা ছিলেন। তিনি হযরত মুহম্মাদ (স) এর কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা, বিশ্বস্ততা ইত্যাদি সদগুণের কথা শুনে তাঁর সঙ্গে ব্যবসায় করার আহ্বান জানান। পরে খাদিজার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।

নবুয়ত প্রাপ্তি : 

হযরত মুহম্মাদ (স) বাল্যকাল থেকেই গভীর চিন্তাশীল ছিলেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরব গোত্রসমূহের বিবেকবুদ্ধি বর্জিত মূর্তিপূজা ও বর্বরোচিত মারামারি, কাটাকাটি, রাহাজানি, মদ্যপান, জুয়াখেলা, অবিচার, ব্যভিচার ইত্যাদি অনাচার দেখে এসবের সুরাহা নিয়ে তিনি চিন্তা শুরু করেন। গৃহ ছেড়ে মক্কা থেকে দু তিন মাইল দূরে হেরা পর্বতের গুহায় তিনি ধ্যান ও প্রার্থনায় সময় কাটান। দীর্ঘ পনেরো বছর তিনি সেখানে সাধনা করেন। 

৪০ বছর বয়সে একদিন যখন হেরা পর্বতের গুহায় হযরত মুহম্মদ (স) আল্লাহর গভীর ধ্যানে নিমগ্ন করেন। প্রথম ওহি ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ: ‘পাঠ কর প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন- সৃষ্টি করেছে মানুষকে আলাক থেকে পাঠ কর আর তোমার প্রতি পালক মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।' যা তিনি পরবর্তীকালে আল্লাহর বাণী হিসেবে কুরআনের আকারে মানব সমাজে প্রচার করেন এবং আল কুরআন তাঁর ওপরে নাজিল হওয়ার পর থেকে তিনি নবি বা রসুল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন।

ধর্মপ্রচার : 

হযরত মুহম্মাদ (স)-এর জন্মের পূর্বে আরববাসী পরস্পর দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত ছিল। নবুওয়্যাত প্রাপ্তির পর হযরত মুহম্মাদ (স) আরবের মানুষকে সৎপথে আসার আহ্বান জানান। তিনি শান্তির ধর্ম ইসলাম গ্রহণের জন্য উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানান। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিবি খাদিজা (রা), বন্ধু আবুবকর (রা) ও কিশোর হযরত আলী (রা) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইসলামের মূলকথা হলো আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। যে আল্লাহর কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করবে সেই হবে প্রকৃত মুসলমান। 

আরও পড়ুন : মহানবী সাঃ এর জীবনী- রচনা: ৫০০, ৭০০ ও ১০০০ শব্দ- PDF (৩টি)

হযরত মুহম্মাদ (স) মানুষে মানুষে প্রীতির বাঁধনে আবদ্ধ হতে বলেন। তিনি নারী, কন্যা শিশু ও ক্রীতদাসদের প্রতি সদয় ব্যবহার করার জন্য উপদেশ দেন। এভাবে তিনি ধর্মের বাণী প্রচার করতে গিয়ে চরম নির্যাতন ও বাধাবিঘ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবুও তিনি তাঁর কর্মে অটল ছিলেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, আল্লাহ প্রদত্ত ধর্মের বিজয় কেউ রুখতে পারবে না। এদিকে মূর্তিপূজক মক্কাবাসী তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। শত ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও তিনি নির্ভীক চিত্তে ধর্ম প্রচার করতে থাকেন।

হিজরত : 

আল্লাহর নির্দেশে ও মক্কাবাসীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হযরত মুহম্মাদ (স) ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা ছেড়ে মদিনা নগরীতে হিজরত করেন। তখন থেকে হিজরি সাল গণনা শুরু হয়। মদিনাবাসী তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন। তাঁরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকেন। ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত হয় মদিনা।

মক্কা বিজয় : 

মদিনাবাসীর সহায়তায় তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় কাফিরদের সঙ্গে তাঁর কয়েকটি যুদ্ধ হয় এবং প্রতিটি যুদ্ধে তিনি জয়লাভ করেন। এরপর দশম হিজরিতে তিনি আরাফাতের ময়দানে প্রায় দুই লাখ সমবেত জনতার সম্মুখে ভাষণ দেন, যা ইতিহাসে ‘বিদায় হাজ্জ' নামে পরিচিত।

চরিত্র : 

অতুলনীয় চরিত্রের অধিকারী হযরত মুহম্মাদ (স) ছিলেন সুদর্শন, মিষ্টভাষী, অমায়িক, বিশ্বাসী, সত্যবাদী, একজন আদর্শ সমাজ সংস্কারক, যোগ্য সেনাপতি এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পথপ্রদর্শক।

ইনতিকাল : 

৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে মহানবি হযরত মুহম্মদ (স) মদিনায় ইনতিকাল করেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৩ বছর।

উপসংহার : 

আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব হযরত মুহম্মাদ (স) বিশ্বের শ্রেষ্ঠনবি। দি হানড্রেডস গ্রন্থের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তাই বলতে পারি—“পৃথিবীর সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হযরত মুহম্মাদ (স)-ই আমার প্রিয় শ্রেষ্ঠ মানব।” তাঁর আদর্শই আমার আদর্শ। তাঁর দেখানো পথই আমার চলার পথের পাথেয়।

Post a Comment

0 Comments