ভাবসম্প্রসারণ-চির সুখী জন ভ্রমে কি কখন ব্যথিত বেদন বুঝিতে কি পারে

মূলভাব : চিরসুখী ব্যক্তিরা কখনো গরিবের দুঃখ-জ্বালা বুঝে না ।

সম্প্রসারিত ভাব : দুঃখ ও সুখ এই জগতের একটা নিয়ম । ব্যথা ও দুঃখ ভোগ ব্যতীত সুখের সম্যক উপলব্ধি হয় না। সুখের অনাবিল আনন্দ সুখীজনের জীবন সার্থক করে তোলে । তার কাছে জীবন ও জগৎ বড় আরামদায়ক স্থান মনে হয় । সুখের আনন্দে সে দুঃখের কথা ভুলে যায়। দুঃখীর মর্মবেদনা সে বুঝতে পারে না। দুঃখীর দুঃখ তার মনে কোনো ছাপ ফেলে না। তাকে ভাবায় না, কাঁদায় না, বেদনাহত করে না। কারণ, সে যেমন নিজে সুখী, তেমনি পৃথিবীর সবাইকে সুখী মনে করে। তার এই ভুল উপলব্ধিই তাকে স্বার্থপর করে তোলে। সুখীজন যেহেতু দুঃখজনের মতো দুঃখ -বেদনা ভোগ করে না, তাই দুঃখের মর্ম সে বুঝতে পারে না। সাপে যাকে দংশন করেনি, সে যেমন সাপের দংশনের জ্বালা বুঝতে পারে না, সুখীজনও ঠিক তেমনি দুঃখীজনের অন্তরজ্বালা বুঝতে পারে না ।

মন্তব্য : মূলত যার দুঃখ সে ছাড়া কেউ তার মর্ম বুঝতে পারে না। বরং সুখীজনেরা সুখীজনদের সাথেই বন্ধুত্ব করে দুঃখীজনের কোনো বন্ধুই জোটে না ।

আরও পড়ুন :- আত্মশক্তি অর্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য ভাবসম্প্রসারণ - ৩টি 

এই ভাব সম্প্রসারণ এর অন্য আরেকটি প্রতিলিপন

মূলভাব : ব্যথিতের কষ্ট কেবল ভুক্তভোগীই বুঝতে পারে, অন্য কেউ নয়।

সম্প্রসারিত ভাব : ভুক্তভোগী ব্যতীত এর জ্বালা কেউ বুঝতে পারে না। যে ব্যক্তি চিরকাল ধরে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে দিন যাপন করে সে কোনোদিনই দুঃখের জ্বালা বুঝতে পারে না। যে ব্যক্তির জীবনে দুঃখের ছায়া নেমে আসেনি সে দুঃখীর দুঃসহ জ্বালা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারে না। দুঃখী ব্যক্তির হা হুতাশ তার অন্তরকে সহানুভূতি বিদ্ধ করবে না, যে ব্যক্তিকে কোনোদিন সাপে দংশন করেনি, সে ব্যক্তি কখনো সাপের দংশনের জ্বালা বুঝতে পারে না। কাজেই কোনো দুঃখী অপর একজন দুঃখী ও দরিদ্র ব্যক্তি কেবল দুঃখ জ্বালা অনুভব করতে পারে। কোনো সুখী বা ধনী লোক এতটুকু অনুভব করতে পারে না। এসব বুঝতে হলে তার বাস্তব শিক্ষা থাকা দরকার।

মন্তব্য : "A wearer knows where the shoes pinches." অর্থাৎ, যে জুতা পরেছে, সেই কেবল জানে কোথায় পেরেক বিধছে। তেমনি একমাত্র ভুক্তভোগীরাই অপর ভুক্তভোগীর দুঃখ-বেদনা বুঝতে পারে।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad