আত্মশক্তি অর্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য ভাবসম্প্রসারণ - ৩টি

আত্মশক্তি অর্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য ভাবসম্প্রসারণ - ১

মূলভাব : মানুষকে পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে উন্নতির পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করাই শিক্ষার উদ্দেশ্য।

সম্প্রসারিত ভাব : যে শিক্ষা মানুষকে আত্মশক্তি অর্জনে সহায়তা করে না, সে শিক্ষা মূল্যহীন। মনুষ্যত্ব লাভের একমাত্র উপায় হল শিক্ষা গ্রহণ । মানবজীবনকে বিকশিত করে তোলাই শিক্ষার কাজ। মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব। তার মধ্যে সুপ্ত রয়েছে মেধা, সৃজনশীল ক্ষমতা এবং অন্তর্দৃষ্টি । উপযুক্ত শিক্ষা পেলে এ সুপ্ত গুণাবলির বহিঃপ্রকাশ সম্ভব । যারা অজ্ঞ তারা কখনো এর সন্ধান পায় না। 

এ গুণাবলি মানুষের অন্তর্নিহিত সম্পদ। একমাত্র শিক্ষাই পারে মানুষের এই অন্তর্নিহিত গুণাবলিকে জাগ্রত করে তাকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে পরনির্ভরশীলতা এড়াতে । তাই মানুষকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে হলে জীবনকে শিক্ষার আলোকে আলোকিত করতে হবে। আর এ শিক্ষার সাথে বাস্তবের সংযোগ থাকতে হবে। বাস্তবতা বর্জিত শিক্ষা অর্থহীন ।

মন্তব্য : যে শিক্ষার সাথে বাস্তবজীবনের কোনো যোগসূত্র নেই, সে শিক্ষা মানুষের আত্মশক্তি অর্জনে সাহায্য করে না।

আরও পড়ুন :-  ভাব সম্প্রসারণ : আলো বলে অন্ধকার তুই বড় কালো 

আত্মশক্তি অর্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য ভাবসম্প্রসারণ - ২

উৎস : মানুষের মানসিক বিকাশে সাহায্য করে শিক্ষা। বাস্তব জীবনের সাথে শিক্ষার মিল না থাকলে সে শিক্ষা ফলদায়ক হয় না। শিক্ষা ছাড়া জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায় না। মানুষের আত্মশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে শিক্ষার প্রয়োজন ।

মূলভাব : শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য নিজকে গঠন করা, আত্মবিকশিত করা, শক্তি অর্জন করা।

সম্প্রসারিত ভাব : নিজেকে জানা, নিজের ক্ষমতা-অক্ষমতা, নিজের শক্তি-দুর্বলতা সম্বন্ধে সম্যক উলব্ধি করতে পারা শিক্ষার উদ্দেশ্য । আত্মবিশ্বাস বা আত্মপ্রত্যয় না থাকলে মানুষকে সুন্দর, সমৃদ্ধ ও সুখী জীবন লাভ করার জন্য অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হয়, অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয় এবং অনেক প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়। 

আত্মশিক্তি না থাকলে মানুষ এ সংগ্রামে বিজয়ী হতে পারে না। আত্মশক্তি দ্বারা মানুষ নিজের দোষ-গুণ, ভালো-মন্দ বুঝতে পারে। নিজের ক্ষমতা সম্বন্ধে আস্থাশালী হয়, জীবনের চরম ও পরম সত্য লাভ করতে সমর্থ হয়। নিজেকে বুঝতে, শিখতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। শিক্ষা জীবনকে সুন্দর, সুচারু এবং আত্মনির্ভরশীলরূপে গড়ে তোলে।

মন্তব্য : মানুষকে আত্মশক্তি অর্জন করতে হলে সুশিক্ষার বিকল্প নেই। প্রকৃত শিক্ষাই মানুষকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে তোলে। এজন্য শিক্ষাকে বাস্তবানুগ করে তুলতে হবে।

আরও পড়ুন :-  ভাবসম্প্রসারণ : ইটের পর ইট মধ্যে মানুষ কীট

আত্মশক্তি অর্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য ভাবসম্প্রসারণ - ৩

মূলভাব : শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য নিজকে গঠন করা, আত্মবিকশিত করা, শক্তি অর্জন করা ।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ জন্ম নেয় পৃথিবীর সংগ্রামমুখর জীবনকে সামনে নিয়ে। জীবনসংগ্রামে টিকে থাকতে হলে মানুষকে অর্জন করতে হয় আত্মশক্তি। আত্মশক্তি হলো মানুষের ভিতরকার বিশ্বাসগত ব্যাপার। মানুষ অফুরন্ত শক্তি ও সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে। শিক্ষা সেই শক্তি ও সম্ভাবনা জাগ্রত হওয়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে মাত্র। শিক্ষার আলোকস্পর্শে পশুত্বের নিগড় থেকে মানুষ মুক্তি লাভ করে মনুষ্যত্বের পথে ধাবিত হয়। বৃক্ষ যেমন কোমলরূপে উপ্ত হওয়ার পর মহীরুহ হওয়ার প্রত্যয়ে প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে তেমনি আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ সর্বজয়ে অগ্রসর হয়। তবে আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার এ মৌল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। 

এ শিক্ষার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীকে কেবল সার্টিফিকেট প্রদান। সার্টিফিকেট লাভের মাধ্যমে কোনো রকমে একটি চাকরি লাভের প্রবণতায় পেয়ে বসেছে সকলকে। ফলে তথাকথিত শিক্ষিত মানুষগুলোর মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না, অর্জিত হয় না আত্মশক্তি। পরিণতিতে আমাদের শিক্ষিত শ্রেণি হীনচেতা, মেরুদণ্ডহীন ও স্বকীয়তাবর্জিত। তাদের কাছ থেকে জাতি কোনো ইতিবাচক ভূমিকাও আশা করতে পারে না। ইতিহাসের বরপুত্র মহামানবগণ তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ না করেও শিক্ষার প্রকৃত আলোকরেখা স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেজন্য তাঁরা আত্মশক্তির জোরে আত্মপ্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন এবং বিশ্বকে ঋণবন্ধ করে যান।

মন্তব্য : শিক্ষা সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। সার্টিফিকেট-সর্বস্ব শিক্ষার বদলে প্রকৃত শিক্ষালাভের মাধ্যমে আমাদের প্রত্যেককে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে হবে।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad