জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান - ভাবসম্প্রসারণ (৩টি)

জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ভাবসম্প্রসারণ - ১

মূলভাব : জ্ঞান সার্বজনীন তাই মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয় জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে। জ্ঞানের আলোয় মানুষের জীবন বিকশিত হয় । তাই জ্ঞান অর্জিত না হলে মানুষ আর পশুতে কোন প্রভেদ থাকে না ।

সম্প্রসারিত ভাব : আল্লাহ মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত' বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এ শ্রেষ্ঠত্বের কারণ তার বিবেক বা জ্ঞান, যা পশু বা অন্য কোন প্রাণীর মধ্যে অনুপস্থিত। প্রতিটি মানুষের মাঝেই এ বিবেক সুপ্ত অবস্থায় থাকে। জ্ঞানানুশীলনের মাধ্যমেই তা জাগ্রত করতে হয়। পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হলে তাকে জ্ঞানর্জন করতে হবে। অজ্ঞান ব্যক্তির কোন বিবেক নেই। সে পশুর মতই বর্বর। সে ন্যায় অন্যায় কিছুই বোঝে না। আপন অস্তিত্বকে সে টিকিয়ে রাখতে পারে না। অজ্ঞানতার অন্ধকারে ধুকে ধুকে মরে সে। দার্শনিক প্লেটো বলেছেন, “অজ্ঞ থাকার চেয়ে পৃথিবীতে না জন্মানোই ভাল, কারণ অজ্ঞতা দুর্ভাগ্যের মূল।”

মন্তব্য : জ্ঞানহীন মানুষ ও পশুর মধ্যে কোন তফাৎ নেই। তাই সুন্দর ও সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রতিটি মানুষের জ্ঞানার্জন আবশ্যক।

আরও পড়ুন :- শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড ভাবসম্প্রসারণ - ৩টি 

জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ভাবসম্প্রসারণ - ২

মূলভাব : যার জ্ঞান বুদ্ধি নেই, সে একজন পশুর সমান। তার কোনো মূল্য নেই ।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব। এ শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান সে লাভ করেছে তার জ্ঞান বুদ্ধির জন্য। বিচার বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার দ্বারা সে তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয়। কিন্তু পশু জ্ঞানহীন ও নির্বোধ। তার বিবেক বুদ্ধি খুব কম। তাই তার সব চিন্তা ভাবনা শুধু নিজেকে ঘিরেই। শুধু নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাই তার কাজ। সেজন্য বড় পশু ছোটগুলোকে হত্যা করে আহার করে। জ্ঞানহীন মানুষও পশুর মতো আচরণ করে। জ্ঞানের আলো পায় নি বলে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও তার বুদ্ধিবৃত্তি বিকশিত হয় নি। তাই সে অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে আছে। সে নিজকে চিনতে পারেনি ও মানুষ হিসেবে তার কর্তব্য কি তা বুঝে উঠতে পারেনি। তাই তার মাঝে পশুরই প্রাধান্য বিস্তার করছে। ফলে সে স্বার্থান্ধ হয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য পশুর মতো আচরণ করে এবং ভাইয়ের বুকে ছুরি বসিয়ে ধন প্রাণ ছিনিয়ে নিচ্ছে। এভাবে সে মনুষ্যত্বের অবমাননা করছে এবং পৃথিবীতে মানব জীবনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দিচ্ছে। এ সকল পশুর ন্যায় কর্মকাণ্ড থেকে মুক্তি পেতে হলে জ্ঞানাঅর্জনের কোনো বিকল্প নেই। জ্ঞানই মানুষকে সৎ, সুন্দর এবং আদর্শবান রূপে গড়ে তোলে। মানুষকে পরিপূর্ণতা এনে দেয়।

আরও পড়ুন :- প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয় কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না

জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ভাবসম্প্রসারণ - ৩

মূলভাব : জ্ঞানী মানুষের অভিজ্ঞতার আলোকে সমস্ত ধরণীতল আলোকিত হয়। অপরদিকে জ্ঞানহীন মানুষের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে পৃথিবী হয় বিষাক্ত।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ ও পশু উভয়ই আল্লাহ তায়ালার সৃষ্ট জীব। আপাত দৃষ্টিতে মানুষ ও পশুর মাঝে বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। উভয়েই প্রকৃতির দাস, রিপুর অধীন। উভয়ই যখন রিপুর তাড়নায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে, তখন তাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তখন মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য করার কোন উপায় থাকে না, তখন মানুষ পশুতে পরিণত হয়ে যায়। মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য নিরূপণের জন্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো বিবেক। মানুষের মধ্যে বিবেক আছে কিন্তু পশুর মধ্যে কোন বিবেক পাওয়া যায় না। মানুষের বিবেক তার মধ্যে সুপ্ত থাকে। এ সুপ্ত বিবেককে জাগ্রত বা কার্যকর করার একমাত্র উপায় হচ্ছে শিক্ষা বা জ্ঞান। শিক্ষা না থাকলে জ্ঞানের অভাব হয়। আর জ্ঞানের অভাব বা অজ্ঞানতার জন্যে মানুষের বিবেক জাগ্রত হতে পারে না। তখন মানুষ পশুর মতোই অন্যায় অবিচার করে থাকে পাশবিক বৃত্তির বশবর্তী হয়ে পশুর ন্যায় হিংস্র হয়ে ওঠে। জ্ঞানহীন মানুষ ক্রোধান্ধ হয়ে যে কোন নীচ ও জঘন্য কাজ করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। অপরপক্ষে পশুকে প্রশিক্ষণের দ্বারা বিভিন্ন প্রকার জ্ঞানদান করলে তারা অনেক সময় সুন্দর ও সুশৃঙ্খল আচরণ করে থাকে। একমাত্র শিক্ষালব্ধ জ্ঞানের জন্যেই তা সম্ভব হয়ে থাকে।

মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়। কিন্তু জ্ঞানহীন মানুষকে সেরা জীব বলা হয় না। কারণ, সে মানুষের অন্তরে প্রদীপ প্রজ্বলিত হয় নি, অজ্ঞতার অভিশাপ থেকে সে মানুষ মুক্ত হতে পারে নি। মনুষ্য পদবাচ্য হয়েও সে মানুষ পশুত্বের জীবন-যাপন করে। মনুষ্য সমাজ তার নিকট ভাল কিছু আশা করতে পারে না। যার নিজের জীবনই বিকশিত নয়, যে জীবনের সার্থক বিকাশের জন্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারেনি, সে অন্য মানুষের কল্যাণ করবে কীভাবে? এ সংগ্রামপূর্ণ পৃথিবীতে যোগ্য লোকেরাই টিকে থাকার সুযোগ পায়। সে জন্যে জ্ঞান লাভের লক্ষ্যে মানুষের অভিজ্ঞতার অবদান অপরিসীম । যে মানুষের মধ্যে এই জ্ঞান নেই তার বুদ্ধি বিকশিত হয় না। তার যোগ্যতা অর্জিত হয় না। ফলে মানুষের কল্যাণ করা দূরে থাকুক, নিজেকে রক্ষা করার মত যোগ্যতাও সে লাভ করতে পারে না।

মন্তব্য : জ্ঞানের অভাবে মানুষ নির্জীব হয় । এ ধরনের মানুষ, আর পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ভালো

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad