ক্রিয়াপদের সাধু ও চলিত রূপ এবং মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম

মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম: 

মনের ভাব প্রকাশের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। যেমন-

ইশারা-ইঙ্গিত : সৃষ্টির প্রথম অবস্থায় মানুষ ছিল বড় অসহায়। তাদের সমাজ বলতে কিছুই ছিল না। তারা বন-জঙ্গলে, পাহাড়ের গুহায় ও গাছের ডালে বাস করত। তখন তাদের মুখে কোন ভাষা ছিল না। তারা ইশারা-ইঙ্গিত ও অঙ্গ-ভঙ্গির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করত । উহা কখনো সুফল হত, কখনো হত না । কিন্তু ভাষার মত সুফল না হলেও ইশারা-ইঙ্গিত অনেকটা ভাব প্রকাশের কাজ করত ।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার : মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ; যেমন- হাত, পা, চোখ, মুখ ইত্যাদি দ্বারাও মনের ভাব প্রকাশিত হতে পারে । ইশারা-ইঙ্গিত করতে হলে হাত, চোখ, মুখ ইত্যাদির ব্যবহার করতে হয়। তুমি তোমার কোন বন্ধুকে যদি চুপ থাকতে বলতে চাও, তাহলে তুমি তোমার মুখে আঙ্গুল ধরে বুঝিয়ে দিতে পার । তোমার মাথা ধরেছে- তুমি তোমার মাথায় হাত রেখে বুঝিয়ে দিতে পার। তোমার পিপাসা লেগেছে- তুমি তোমার মুখের কাছে হাত দিয়ে গ্লাস ধরার মত করে তা বুঝিয়ে দিতে পার। তাহলে দেখা যাচ্ছে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহারও মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ৷

নৃত্য বা নাচ : মনের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে নৃত্য বা নাচ আদিকাল থেকেই বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে আসছে। নাচের অঙ্গ-ভঙ্গির মাধ্যমে মনের আবেগ-আকুতি ফুটিয়ে তোলা যায় । আমরা আজও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাহাড়ি নাচ, সাপুড়ে নাচ ও মনিপুরি নাচ দেখে থাকি । এসব নৃত্য বা নাচের মাধ্যমে বিষয়বস্তু ও সামাজিক পটভূমিকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় ।

চিত্র বা ছবি : চিত্র বা ছবি অঙ্কনের মাধ্যমেও মনের নানা ভাব ফুটিয়ে তোলা যায় । পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের পাহাড়-পর্বতের গুহায়, পাথরে কিংবা দেয়ালে খোদাই করা মানুষের আঁকা বহু চিত্র আজও বিদ্যমান। এরূপ ছবি আঁকার মাধ্যমে মানুষের ভাষার লেখ্যরূপ লাভ করেছে । ছবি থেকেই পৃথিবীর বহু ভাষার বর্ণের চিহ্নগুলোর রূপ পরিণতির দিকে এগিয়ে গেছে।

অতএব দেখা যায়, ইশারা-ইঙ্গিত, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার, নাচ, চিত্র বা ছবি মানুষের মনের ভাব প্রকাশের সহায়ক বা মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে এদের মাধ্যমে মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায় না। তাই জনসমাজে ভাব প্রকাশের প্রকৃত মাধ্যম বা বাহন হলো ভাষা।

আরও পড়ুন :-  সাধু, চলিত ও আঞ্চলিক ভাষা কাকে বলে? এদের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ 

ক্রিয়াপদের সাধু ও চলিত রূপ :- 


সাধু চলিত সাধু চলিত
খাইতেছি খাচ্ছি হইল হলো/হল
খাইতেছ খাচ্ছ হইত হতো/হত
খাইতেছে খাচ্ছে আসিও এসো
যাইতেছি যাচ্ছি যাইও যেও
যাইতেছ যাচ্ছ খাইও খেয়ো
করিতেছি করছি লিখিও লেখো
করিতেছ করছ যাইব যাব
করিতেছে করছে দেখিব দেখব
পড়িতেছি পড়ছি উঠা ওঠা
পড়িতেছ পড়ছ কিনা কেনা
পড়িতেছে পড়ছে চিনা চেনা
মারিল মারল আসিয়া এসে
বাঁধিল বাঁধল আসিল এল
হাসিয়া হেসে নামিল নামল
কাঁদিয়া কেঁদে খেলিয়া খেলে
করিয়াছি করেছি দেওয়া দেয়া
করিলাম করলাম নিয়া নিয়ে
করিয়াছিলাম করেছিলাম যাইয়া যেয়ে, গিয়ে
করিতাম করতাম পাইয়া পেয়ে
করিতেছিলাম করছিলাম করিয়া করে
করিব করব করাইয়া করিয়ে
যাইতেছিল যাচ্ছিল/যেতেছিল খাওয়াইয়া খাইয়ে
গিয়াছিল গিয়েছিল করিতে করিতে করতে করতে
হইবে হবে হইতেছিল হচ্ছিল/ হতেছিল
করিয়া থাকিব করে থাকব হইতেছে হচ্ছে
করিতে থাকিব করতে থাকব লিখে লেখে
পার হইয়া পেরিয়ে পড়িল পড়ল
মচমচ্ করিয়া মচমচ্ করে ফুটিয়া রহিয়াছে ফুটে রয়েছে
আসিল আসল চাহিতেছ চাচ্ছ
চাইয়া চেয়ে খাইয়া খেয়ে
চলিতেছি চলছি বাজিতেছে বাজছে
গাহিতাম গাইতাম পড়িব পড়ব
পাইতেছে পাচ্ছে লইলাম নিলাম
গাইবে গাবে খেলিবে খেলবে
বসিয়া বসে শুনিয়াছি শুনেছি
যাইতেছে যাচ্ছে ফেলিব ফেলব
আসিতেছি আসছি মরিয়া মরে
লইব নেব সহিতে সইতে
আসিও এসো ধরিয়া ফেল ধরে ফেল
পাইলাম পেলাম উঠিয়া উঠে

Post a Comment

0 Comments