সংজ্ঞা :- বাংলা ভাষার যে রূপটি সর্বজনীন স্বীকৃত এবং ব্যাকরণের নিয়ম-কানুনসহ যথাযথভাবে মেনে চলে, তাকে সাধু ভাষা বলে।
উদাহরণ : বিলাসী মুখ টিপিয়া হাসিতে শুরু করিয়াছিল।
সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্য :-
- সাধু ভাষা ব্যাকরণের সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত নিয়মের অনুসারী।
- সাধু ভাষা গুরুগম্ভীর ও আভিজাত্যের অধিকারী।
- সাধু ভাষা মার্জিত ও সর্বজনবোধ্য এবং অঞ্চলবিশেষের প্রভাবমুক্ত।
- সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের প্রাধ্যান্য বেশি ।
- সাধু ভাষায় ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয়।
- সাধু ভাষা সাধারণত কথাবার্তা, বক্তৃতা ও নাটকের সংলাপের উপযোগী নয়।
- সাধু ভাষা কৃত্রিম উপায়ে তৈরি। এর রূপ অপরিবর্তিত।
- সাধু ভাষার বানান রীতি সুনির্দিষ্ট।
চলিত ভাষা
সংজ্ঞা :- দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মৌখিক ভাষা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি পরিমার্জিত রুপ লাভ করেছে ,যা সর্বজন স্বীকৃত এবং যে ভাষা রীতি দৈনন্দিন কর্মজীবনে পরস্পরের সাথে কথাবার্তা বলতে মানুষ ব্যবহার করে, তাকে চলিত ভাষা বলে।
উদাহরণ :- বিলাসী মুখ টিপে হাসতে শুরু করেছিল।
আরও পড়ুন :- সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার পার্থক্য - ১০টি ও ২০টি - PDF
চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্য :-
- চলিত ভাষা পরিবর্তনশীল। শব্দ ব্যবহারে এ ভাষা অকৃপণ ও উদার।
- চলিত ভাষা সহজবোধ্য, সহজ, সরল ও সাবলীল।
- চলিত ভাষা সর্বজনবোধ্য ও মার্জিত নয়। এ ভাষা আঞ্চলিক প্রভাবাধীন ৷
- চলিত ভাষায় তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের ব্যবহার বেশি।
- চলিত ভাষা সাধারণ কথাবার্তা, বক্তৃতা ও নাটকের সংলাপের উপযোগী।
- চলিত ভাষায় সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের সংক্ষিপ্ত রূপ বিশেষভাবে লক্ষণীয় ।
- এটি বহুল পরিমাণে কৃত্রিমতা বর্জিত ।
- এ ভাষার বাচনভঙ্গি চটুল, সরল, সহজ ও গতিশীল।
সাধু ও চলিত ভাষার উদাহরণ :-
সাধু ভাষা | চলিত ভাষা |
---|---|
১। তোমাদিগকে যে করিয়াই হউক আসিতে হইবে | ১। তোমাদেরকে যে করেই হোক আসতে হবে |
২। আমরা সকলে মিলিয়া মিশিয়া থাকি। | ২। আমরা সবে মিলেমিশে থাকি । |
৩। জাকির ছড়া লিখিয়া প্রথম স্থান অধিকার করিয়াছে। | ৩। জাকির ছড়া লিখে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। |
৪। তাহার বাবা বাসে চড়িয়া ঢাকা গিয়াছেন । | ৪। তার বাবা বাসে চড়ে ঢাকা গেছেন । |
৫। ফরহাদ দুই ঘণ্টা ধরিয়া পড়িতেছে। | ৫। ফরহাদ দু'ঘন্টা ধরে পড়ছে। |
৬। তাহারা বাড়ি যাইতেছে। | ৬। তারা বাড়ি যাচ্ছে। |
আঞ্চলিক ভাষা
সংজ্ঞা :- মানুষ অঞ্চল ভেদে পরস্পরের মধ্যে যে ভাষায় কথাবার্তা, ভাবের আদান-প্রদান ও মনের ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণ অর্থবোধক করে প্রকাশ করে থাকে, তাকে আঞ্চলিক ভাষা বলে।
আরও পড়ুন :- সাধু ভাষা থেকে চলিত ভাষায় - রূপান্তর উদাহরণ
আঞ্চলিক ভাষার বৈশিষ্ট্য :-
- একটি দেশের প্রতিটি অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার রূপ ভিন্ন।
- আঞ্চলিক ভাষা বিশেষ অঞ্চলের মানুষের পরিচয়ের মূলসূত্র।
- এটি সাধু ও চলিত রীতির ন্যায় সর্বজন গ্রাহ্য নয়।
- এটি দ্বারা সাহিত্য রচিত হয় না।
- এটি একটি দেশের সাংস্কৃতিক মূল প্রাণকেন্দ্র।
- এটি বলার সময় ব্যাকারণের নীতিমালার প্রয়োজন হয় না।
- এটি কালের বিবর্তনে রূপান্তরিত হয়।
আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ :-
ঢাকা | একজন মানুশের দুইডা পোলা আছিল । |
চট্টগ্রাম | এক্ষাণ মানশের দুগা পুয়া আছিল। |
নোয়াখালী | একজন মানুশের দুই হুত আছিল। |
সিলেট | এক মানুষের দুই পোয়া আছিল । |
রাজশাহী | একজন মানুশের দুটা ছাওয়াল ছিল। |
খুলনা | অ্যাকজন মাশের দুটা ছাওয়াল ছিল। |
ময়মনসিংহ | য়্যাক জনের দুই পুত আছিল। য়মনসিংহ |
বগুড়া | য়্যাক জনের দুই বেটা ছৈল আছিল। |