হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

প্রবন্ধ রচনা : শহীদ জিয়াউর রহমান

শহীদ জিয়াউর রহমান রচনা
[ক্লাস ৩ - ৬]

ভূমিকা : 

পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন তার মধ্যে যুগে যুগে বিভিন্ন দেশে এমন কিছু মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে যাঁরা জাতির দুর্দিনে এগিয়ে এসেছেন হাল ধরার জন্যে, যাঁদের চরিত্র ও আদর্শ জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

জন্ম ও বংশ পরিচয় : 

শহীদ জিয়াউর রহমান বগুড়া জেলার বাগবাড়িতে ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্য নাম ছিল কমল। কমলের পিতার নাম মনসুর রহমান ও মাতার নাম জাহানারা খাতুন। তিনি ছিলেন তাঁর পিতার দ্বিতীয় ছেলে।

আরও  পড়ুন : মহানবী সাঃ এর জীবনী- রচনা ১০০, ২৫০ ও ৩০০ শব্দ – PDF

শিক্ষা জীবন : 

তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল কলকাতায় চাচার বাসা থেকে। জিয়াউর রহমান ও তাঁর ভাই রেজাউর রহমান কলকাতার হেয়ার স্কুলের ছাত্র ছিলেন। জিয়াউর রহমানের আগ্রহ ছিল ডাক্তারি পড়ার দিকে। কিন্তু ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তির্ণ হওয়ার পর তিনি ডাক্তারী পড়ার ইচ্ছা বাদ দিয়ে সেনা বাহিনীতে যোগদান করেন।

কর্মজীবন : 

জিয়াউর রহমান ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের এবোটাবাদ ক্যাডেট কলেজের একজন খ্যাতিমান ছাত্র। দেশ-বিদেশে বহু সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তিনি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে যোগদান করেন ১৯৬৩ সালে। ১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন আলফা ব্যাটালিয়ান কোম্পানির কমান্ডার। ১৯৬৯ সালের এপ্রিল মাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাটালিয়ানের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড নিযুক্ত হন। 

১৯৭০ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটালিয়ানের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড নিযুক্ত হন। এ পদে থাকা অবস্থায়ই ১৯৭১ সালে ২৬ শে মার্চ চট্টগ্রাম কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা পত্র পাঠ করেন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি সেনা বাহিনীর উচ্চপদ লাভ করেন।

তাঁর অবদান : 

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার সৈনিকদের নেতৃত্বে আস্থাবান হয়ে ওঠেছিল। পরবর্তীকালে এ আস্থাই স্থিতিশীল সরকার গঠনে জিয়াউর রহমানকে সাহায্য করেছিল।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রাণপণ চেষ্টায় গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ ও সেচের ব্যবস্থা, সবুজ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং স্বনির্ভর আন্দোলন সার্থকতা লাভ করেছিল। স্বনির্ভর অর্থনীতি, নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে দেশবাসীর জীবনমানের উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। দেশ বিদেশের সাথে গড়ে তুলেছিলেন নিবিড় ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।

আরও  পড়ুন : বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ – রচনা

মৃত্যু : 

১৯৮১ সালে ৩০শে মে জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামে হত্যা করা হয়। আদর্শচ্যুত কতিপয় দুষ্কৃতিকারীর হাতে নিহত হয়েছেন তিনি। সে সময় থেকেই তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান নামে পরিচয় লাভ করেন।

উপসংহার : 

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন নিঃস্বার্থ একজন আদর্শ মানুষ। দেশ ও জাতির উন্নতির জন্যে তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন। আজ জিয়াউর রহমান সশরীরে নেই কিন্তু আছে তাঁর আদর্শ, আছে তাঁর ব্যক্তিত্ব ও আন্তরিকতার পরিচয়। তিনি বেঁচে থাকবেন এদেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে।

শহীদ জিয়াউর রহমান রচনা
[ক্লাস ৭ - ১২]

উপস্থাপনা :

পৃথিবীতে যে সব মনীষী জন্মগ্রহণ করে দেশ ও জাতিকে নিশ্চিত অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করেছেন এবং যাদের চরিত্র ও আদর্শের প্রভাব জাতির প্রাণে প্রেরণা যুগিয়েছে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন তাঁদের অন্যতম । বাংলার ঘোর দুর্দিনে তাঁর কর্মপ্রবাহ ও আদর্শ দেশবাসীকে জীবন ও আলোর সন্ধান দিয়েছে।

জন্ম ও বংশ পরিচয় :

জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯শে জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বগুড়া জেলার বাণবাড়ী তাঁর পিতৃভূমি । জিয়াউর রহমানের বাল্যনাম ছিল কমল। কমলের দাদা ছিলেন শিক্ষিত ও অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তি। কমলের পিতা মনসুর রহমান এবং মাতা জাহানারা খাতুন। পিতা ছিলেন একজন কেমিষ্ট । তিনি পিতার দ্বিতীয় ছেলে ।

আরও  পড়ুন : মহানবী সাঃ এর জীবনী- রচনা: ৫০০, ৭০০ ও ১০০০ শব্দ- PDF (৩টি)

শিক্ষা জীবন :

ছোট বেলায় কমল ছিল অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের। ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলত, মিথ্যা কথা বলতে পারত না। কলকাতায় চাচা মমতাজুর রহমানের কাছে থেকে পড়াশুনা আরম্ভ করেছিলেন কমল। কলকাতার হেয়ার স্কুলের ছাত্র ছিলেন জিয়াউর রহমান এবং তাঁর বড় ভাই রেজাউর রহমান । ১০//১১ বছর পর্যন্ত ঐ স্কুলেই পড়েছিলেন জিয়াউর রহমান ।

কলকাতায় জাপানী বোমা পড়ার বছর তাঁরা গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন এবং গ্রামের স্কুলে ছ’বছর পড়াশুনা করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরই মনসুর রহমান করাচীতে চলে যান। কমলের ইচ্ছা ছিল ডাক্তারী পড়ার কিন্তু মেট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ডাক্তারী পড়ার ইচ্ছা বাদ দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ।

কর্ম জীবন :

এ্যাবোটাবাদের ক্যাডেট কলেজের কৃতি ছাত্র ছিলেন জিয়াউর রহমান। দেশে ও বিদেশে তিনি বহু সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন। পশ্চিম পাকিস্তানে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং চাকরির সময়ে বাঙ্গালীদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানীদের ঘৃণা জিয়াউর রহমানের অন্তরকে বিষিয়ে তুলেছিল । তখন হতেই তিনি মনে-প্রাণে বাংলার স্বাধীনতা কামনা করেছিলেন।

আরও  পড়ুন : রচনা : কাজী নজরুল ইসলাম (৩টি)

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান ছিলেন বিখ্যাত ‘আলফা ব্যাটেলিয়ানের কোম্পানী কমান্ডার’। এ যুদ্ধে জিয়াউর রহমান বিরাট বীরত্বের পরিচয় দিয়ে শত্রুদের হটিয়ে দেন। ১৯৬৯ সালের এপ্রিল মাসে, ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হয়ে জার্মানী যান বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য ।

১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটেলিয়ানের সেকেন্ড-ই-কমান্ড নিযুক্ত হন। এর পরপরই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় এবং তিনি চট্টগ্রামের স্বাধীন বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সমগ্র বাংলাদেশকে যে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল তিনি একটি সেক্টরের প্রধান ছিলেন। পরে তিনি সেনাবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত হন । ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

অবদান :

১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই স্বাধীনতার সৈনিকের নেতৃত্ব পেয়ে বাংলার মানুষ আশ্বস্ত হয়েছিল। জনগণের এ আস্থাই পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে স্থিতিশীল সরকার গঠনে সহায়তা করে তাঁকে সৈনিক থেকে রাজনীতিবিদে রূপান্তরিত করে।

প্রেসিডেন্ট জিয়া প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন গ্রাম ও গ্রামের মানুষকে। কারণ বাংলার প্রাণ হচ্ছে গ্রাম । কৃষির উন্নতি ছাড়া এদেশের উন্নতি হতে পারে না। তিনি সমস্ত কর্মকাণ্ডের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন দেশের জনগণকে কারণ জনগণই সকল শক্তির উৎস। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই গ্রামে গ্রামে সেচের ব্যবস্থা, সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন এবং স্বনির্ভর আন্দোলন সার্থক হয়ে উঠেছিল।

তিনি নিজেও বাংলার গ্রামে গ্রামে খাল খনন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি সারা বাংলায় যেমন ঘুরেছিলেন, তেমনি প্রাণের বন্যা নেমে এসেছিল । স্বনির্ভর অর্থনীতি, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও দেশবাসীর জীবন মান উন্নয়ন-এসবই ছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কর্মসূচীর লক্ষ্য ।

উপসংহার :

প্রেসিডেন্ট জিয়া ছিলেন আদর্শ নিঃস্বার্থ মানুষ । দেশ ও জাতির উন্নতির জন্য তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন । জিয়া নেই কিন্তু তাঁর আদর্শ ও ব্যক্তিত্ব চিরদিন জাতিকে প্রেরণা দেবে।

Leave a Comment