ভাষা শিক্ষা সহজসাধ্য নয়। কোনো ভাষা শিক্ষার পর এর ওপর নৈপুণ্য বা দক্ষতা অর্জন আরও আয়াসসাধ্য ব্যাপার। শিশু তার মায়ের মুখে প্রথম ভাষা শুনে এবং তা অনুসরণ করে থাকে এবং প্রাথমিকভাবে তার মায়ের মুখে শোনা ভাষায় তার মনোভাব ব্যক্ত করে। শিশু এ কাজটি হাসতে, খেলতে, চলতে, খেতে-খেতেই শিখে ফেলে। কিন্তু ভাষাকে সর্বাঙ্গীণভাবে আয়ত্ত ও এর ওপর নৈপুণ্য বা দক্ষতা অর্জনের জন্যে কয়েকটি নিয়ামক বা বিষয় কাজ করে। অতএব আমরা বলতে পারি,
ভাষার দক্ষতা মোট ৪টি
- ১. ভাষা শোনা ৷
- ২. ভাষা বলা ৷
- ৩. ভাষা পড়া ৷
- ৪. ভাষা লেখা ৷
উপর্যুক্ত চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে যেমন কোনো ভাষায় দক্ষতা বা নৈপুণ্য অর্জন করা সম্ভবপর। একে একে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হলো :
১. ভাষা শোনা : শিশু তার জন্মের পর হতে পর্যায়ক্রমে মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ভাষা শোনে এবং শোনে সে ভাষা শিখে ফেলে। তারপর সে তার ক্ষুদ্র গণ্ডির সীমানা পার হয়ে আশপাশের পরিবেশে মিশতে মিশতে ভাষা শিক্ষা লাভ করে। এভাবে পরিবেশের পরিধি যতই বিস্তৃত হতে থাকে, তার জ্ঞানের ভাণ্ডারও ততই বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে।
২. ভাষা বলা : শিশু মায়ের থেকে শোনা ভাষাকে রপ্ত করে তা নিজে নিজে বলার কৌশল শিখে। পরিবারের মধ্যে থাকাকালীন মা-বাবা তার শিক্ষার জন্য পাঠদান করেন এবং শুদ্ধ উচ্চারণ ভঙ্গি শেখান। শিশুও সেটা রপ্ত করে বলতে শিখে, অনুকরণ প্রিয়। শিশু যা শোনে ও যা দেখে, তাই করতে ভালোবাসে। এগুলো তাদের সহজাত অভ্যাস। ভাষা বলার নৈপুণ্য অর্জনের জন্য রেডিও, টিভি, সভা-সমিতি, বক্তৃতা ইত্যাদি শোনে শিশু শুদ্ধভাবে ভাষা বলায় দক্ষতা অর্জন করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মা-বাবার ভূমিকাই মুখ্য।
আরও পড়ুন :- ভাষা কাকে বলে-কত প্রকার এবং ভাষার বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা
৩. ভাষা পড়া : ভাষা বলতে শেখার পর আসে ভাষা পড়ার বিষয়। এক্ষেত্রে শিশুকে প্রাথমিক প্রস্তুতি পর্বটুকু মা-বাবা ঘরে বসেই সম্পন্ন করতে পারে। এ সময় শিশুর ভাষা শেখার জন্য পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। এজন্য তার প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন— বইপুস্তক, কাগজ, কলম ইত্যাদি প্রদান করে এ ব্যাপারে পড়ার আগ্রহ গড়ে তুলতে হবে। শিশু এগুলো শিখতে পারলেই এবং ভাষা শেখার মানসিকতা গড়ে তুলতে পারলে তার ভাষা পড়ার দক্ষতা বা নৈপুণ্য আসবে।
৪. ভাষা লেখা : ভাষা শুনে বলতে বা পড়তে পারলেই শুধু ভাষায় দক্ষতা আসে না। মনের ভাব সুষ্ঠুভাবে গুছিয়ে লেখার মাধ্যমেই ভাষার প্রকৃত দক্ষতা বা নৈপুণ্য অর্জন সম্ভব। এজন্য দরকার ভাষা শেখা, লেখার কৌশল আয়ত্ত করা। তাই মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা লেখার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। এ কাজটি শিশুরা বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে হাতে কলমে শিখে থাকে।
তবে ভাষা শুনে বলা, পড়া ও লেখার দক্ষতা বা নৈপুণ্য অর্জন করতে হলে আমাদেরকে ভাষার নিয়ম-শৃঙ্খলা জানা আবশ্যক। আর এসব নিয়ম-শৃঙ্খলাকেই বলা হয় ভাষার ব্যাকরণ। কেননা, ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ, প্রকাশ ভঙ্গি, শুদ্ধভাবে পড়া এবং সঠিকভাবে শুদ্ধ বাক্য লিখতে পারার মধ্য দিয়ে অর্জন সম্ভব।
ভাষা ও ব্যাকরণের মধ্যে পার্থক্য
ভাষা | ব্যাকরণ |
---|---|
১. মানুষ ভাষা আগে শেখে। | ১. মানুষ ব্যাকরণ ভাষার পরে শেখে। |
২. ভাষা মনের ভাব প্রকাশ করে। | ২. ব্যাকরণ মনের ভাব শুদ্ধভাবে প্রকাশে সাহায্য করে। |
৩. ভাষা আগে সৃষ্টি হয়েছে। | ৩. ব্যাকরণ পরে সৃষ্টি হয়েছে। |
৪. ভাষা হৃদয় ও মনের স্বতঃস্ফুর্ত প্রকাশ। | ৪. ব্যাকরণ ভাষার নিয়ম ও বিধিবিধান। |
৫. ভাষা দেশের জনগণের মতো। | ৫. ব্যাকরণ তার শাসনতন্ত্র । |