রচনা : ধূমপানে বিষপান / ধূমপান এক মারাত্মক ব্যাধি

উপস্থাপনা : 

“ধূমপানে বিষপান” একথা সকলেরই জানা; কিন্তু অভ্যাস একটি মারাত্মক বিষয় । কোন কিছুতে একবার অভ্যস্ত হয়ে পড়লে তা সহজে ছাড়া যায় না । ধূমপান এমনি একটি বদভ্যাস যা ইচ্ছা করলেই কেউ ত্যাগ করতে পারে না। ধূমপান সুস্থ জীবনের জন্য বিরাট বাধা, কিন্তু একথা জেনেও মানুষ ধূমপানে আসক্ত হয় । কোন কিছুর প্রতি প্রবল মোহ নেশার শামিল। ইসলামের দৃষ্টিতে নেশা হারাম। 

ধূমপানের উপকরণ : 

ধূমপানের প্রধান উপকরণ তামাক ও গাঁজার পাতা । তামাক পাতা প্রথমে শুকিয়ে নিয়ে তা কুচি কুচি করে কেটে চূর্ণ করা হয় । তারপর তামাক পাতার চূর্ণ ‘র‍্যাচ' বা ঝোলাগুড়ের সাথে উত্তমরূপে মিশিয়ে তৈরি করা হয় এক ধরনের মণ্ড । এই মণ্ড কলকের ভেতর ভরে তাতে আগুন দিয়ে হুকার মাথায় বসিয়ে বা হাতের তালুতে বিশেষভাবে ধরে দমের সাথে টান দেয়া হয় । 

অর্থাৎ, তামাক পাতা পোড়া ধোঁয়া শ্বাসের সাথে গ্রহণ করাই হচ্ছে ধূমপান। আবার চূর্ণ তামাক বা গাঁজা কাগজের সাথে পেঁচিয়ে বা মুড়িয়ে সিগারেট বা বিড়ি তৈরি করা হয় । সে সিগারেট বা বিড়িতে আগুন জ্বালিয়েও ধূমপান করা হয় । ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ।

আরও পড়ুন : রচনা : মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার - ২০ পয়েন্ট 

ধূমপানের কুফল : 

ধূমপানে বিষপান- এ কথা থেকেই বোঝা যায় ধূমপান কতটা ক্ষতিকর। ধূমপানের ফলে মানুষের এর ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়, যা মানুষকে অকাল মৃত্যুর পথে নিয়ে যায় । ধূমপানের ফলে মানুষের সুন্দর স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়, শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, বুদ্ধিমত্তা লোপ পায় । যক্ষ্মা, কাশি, হাঁপানিসহ নানা রকম মারাত্মক অসুখ দেখা দেয় । ধূমপান যে শুধু ধূমপায়ীর একারই ক্ষতি করে তা নয় । তার পাশাপাশি যারা থাকে তাদেরও ক্ষতি হয় । ধূমপানের ফলে পরিবেশ নষ্ট হয় ।

ধূমপানে আর্থিক ক্ষতি : 

ধূমপান শুধু স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না, পাশাপাশি অর্থেরও অপচয় করে। ধূমপানের ফলে একজন ব্যক্তির গড়ে বছরে ৫০০০ হাজার টাকা অপচয় হয়। আমাদের দেশের মতো দরিদ্র দেশের জন্য তা জাতীয় উন্নতিতে বাধাস্বরূপ । কেননা, ধূমপানের ফলে একটি দেশের বছরে কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়ে যায় । এ টাকা যদি উৎপাদনমুখী খাতে ব্যয় হয় তবে দেশকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব।

ধূমপানের কারণ : 

ধূমপানের কারণ বহুমাত্রিক। প্রথমত, যে কারণটি ধরা হয় তা হচ্ছে কুঅভ্যাস । একবার যদি কোন লোক কোনভাবে ধূমপানে আসক্ত হয় তবে সে আর এ মরণ পথ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। দ্বিতীয়ত, যুবক বয়সের ছেলেদের অনেকে ধূমপানকে একটি ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করে। যে প্রবণতা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তৃতীয়ত, মানসিক অস্থিরতা থেকে অনেকে ধূমপানে আসক্ত হয়। চতুর্থত, বংশানুক্রমিকভাবেও অনেকে ধূমপানে আসক্ত হয়।

আরও পড়ুন : রচনা : যুব সমাজের অবক্ষয় ও তার প্রতিকার

ধূপপান ত্যাগের উপায় : 

যারা একবার ধূমপানে আসক্ত হয় তাদের পক্ষে তা ত্যাগ করা খুবই জটিল; কিন্তু তারপরও ত্যাগ করা সম্ভব। এ জন্য প্রথমত, ধূমপানের ক্ষতিকর দিকসমূহ জেনে নিয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে । দ্বিতীয়ত, ক্রমশ ধূমপানের মাত্রা কমিয়ে দিতে হবে। তৃতীয়ত, সামাজিকভাবে ধূমপানবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থত, ধূমপানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তিমূলক আইন তৈরি করতে হবে। পঞ্চমত, ধূমপান সামগ্রী উৎপাদনে কঠোর নীতি প্রয়োগ করতে হবে। ষষ্ঠত, জীবনে ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই ধূমপান ত্যাগ করা সম্ভব ।

উপসংহার : 

সুখী সুন্দর জীবন গড়তে হলে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। ধূমপানবিরোধী কঠোর মনোভাব গড়ে তুলতে পারলেই একটি সুন্দর জাতি গঠন সম্ভব। আর আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধররা পাবে অনাবিল পরিবেশ।

আরও পড়ুন : রচনা : স্বাস্থ্যই সম্পদ / স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল 

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad