Ads Area

রচনা : দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার - PDF

উপস্থাপনা : 

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জীবিকা নির্বাহের জন্য অসংখ্য উপকরণের প্রয়োজন হয়। এসব উপকরণের মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি মৌলিক উপকরণ হিসেবে পরিগণিত এবং এগুলো মানুষের মৌলিক চাহিদা; কিন্তু খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও সম্প্রতি অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবন অস্বস্তিকর অবস্থার সম্মুখীন।

দ্রব্যমূল্যের সাথে জীবনযাত্রার সম্পর্ক : 

দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতার সাথে জীবনযাত্রার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। কারণ দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকলে মানুষ তাদের সীমিত আয়ে পরিকল্পিতভাবে সাংসারিক ব্যয় পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে এ সীমিত আয় দ্বারা সংসার পরিচালনা করা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। যার ফলে অভাব নামক রাক্ষুসীর রাহুগ্রাসে নিপতিত হয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করে ।

দ্রব্যমূল্যের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি : 

বর্তমানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি একটি ক্রমবর্ধমান অভিশাপরূপে মানবসমাজে প্রভাব বিস্তার করেছে। বর্তমান জগতে ন্যায়সঙ্গত ও নির্ধারিত মূল্য বলতে কিছুই নেই। অতীতের অনেক কথা আজ আমাদের নিকট রূপকথার মতোই মনে হয়। যেমন- এক টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত, এক পয়সায় এক সের লবণ, দু'পয়সায় এক সের দুধ ইত্যাদি। ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে এ দেশে চাল, আটা, ভোজ্য তেল, ডাল, শাকসবজি, জ্বালানি তেল, গুঁড়ো দুধ এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের গড় মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তাছাড়া বাসা ভাড়া, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ নানা প্রকার সেবার মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে ।

আরও পড়ুন : রচনা : মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার - ২০ পয়েন্ট 

জনজীবনের ওপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া : 

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জনজীবন আজ পদে পদে বিঘ্নিত। এমতাবস্থায় সরকার বেতন বাড়ালেও প্রকৃত সমস্যার সমাধান হয়নি। কারণ বাড়তি বেতনের যৎসামান্য রসদ দিয়ে মূল্য বৃদ্ধির দুর্বার শক্তিকে মোকাবেলা করা অসম্ভব। একদিকে কৃষি উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য বীজ, সার ও কীটনাশক প্রভৃতির মূল্য বৃদ্ধি, অপরদিকে কৃষি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্যের অভাব। ফলে কৃষকশ্রেণির জীবন আজ বিপর্যস্ত প্রায় ।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ :

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পিছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যহীনতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃত্রিম অভাব সৃষ্টিকারী মজুদদারি, ফটকাবাজারি, মুদ্রাস্ফীতি, কালোবাজারি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি প্রধান। চাহিদা যদি হয় সাগর সমান, সেখানে পুকুর খনন করে পানি যোগান দেয়া অসম্ভব। তদুপরি অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশে উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য বিদেশে পাচার করে বিদেশ থেকে মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন বিলাসসামগ্রী আমদানি করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার অভাব সৃষ্টি করছে। দেশের ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার অনেক সময় অতিরিক্ত নোট বাজারে ছাড়ায় সম্পদের তুলনায় টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই দ্রব্যের দামও বৃদ্ধি পায় ৷

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সামাজিক প্রভাব :

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে। কেননা সীমিত আয়ের অর্থ দিয়ে অধিক মূল্যের পণ্য ক্রয় করতে না পেরে অনৈতিক ও অবৈধ উপার্জনের পন্থা অবলম্বন করে। ফলে দুর্নীতি, ঘুষ, ভেজাল ইত্যাদি কর্মকাণ্ড ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। আর এসব অসামাজিক কার্যকলাপ সমাজকে কলুষিত করে থাকে।

আরও পড়ুন : প্রবন্ধ রচনা : বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার 

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পরিণাম : 

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে মুষ্টিমেয় বিত্তবান ব্যতীত অধিকাংশ মানুষ নিদারুণ সমস্যার সম্মুখীন হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাগ্যাহত মানুষকে দ্রব্যের বাড়তি মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে গিয়ে ব্যয়সংকোচননীতি অবলম্বন করতে হয়। এতে সংসারে দুঃখ দুর্দশা বৃদ্ধি পায় এবং এ বৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় সুযোগ সন্ধানী অসাধু ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠে ।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিকার : 

এতক্ষণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যেসব কারণ আলোচনা করা হলো তার প্রতিকার হিসেবে নিম্নোক্ত উদ্যোগ সফল করতে হবে-

ক. জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধ করে চাহিদার পরিমাণ কমাতে হবে এবং যোগান বাড়াতে হবে।

খ. দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর তার অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা নির্ভর করে। সুতরাং রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাতে স্থিতিশীল থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

গ. কালোবাজারি ও মজুতদারগণ বেশি লাভের আশায় দ্রব্যসামগ্রী কুক্ষিগত করে রাখে— যাতে তা করতে না পারে সে বিষয়ে সরকারিভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঘ. দেশের যে কোনো উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারি কর প্রদানের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এ ব্যবস্থার জটিলতার কারণে অনেক সময় ব্যবসায়ী, উৎপাদক, সরবরাহকারীগণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে থাকে এবং বাজারে তার প্রতিক্রিয়া ঘটে। এর বিরুদ্ধে সরকারিভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঙ. কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দান, ভালো বীজ সরবরাহ, প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশকের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

চ. কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করে তার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।

ছ. কর ব্যবস্থা সহজীকরণ করতে হবে।

জ. চাঁদাবাজ, মস্তান ও দুর্নীতিবাজদের প্রতিরোধ করতে হবে ।

ঝ. প্রতিটি দোকানে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে দ্রব্যমূল্যের তালিকা সরকারিভাবে প্রদান ও তা সংরক্ষণ এবং সে অনুসারে বেচাকেনা বাধ্যতামূলক করতে হবে ।

উপসংহার : 

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যের কারণে দ্রব্যমূল্য আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তবুও যে কোনো মূল্যেই হোক এটাকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। যেসব কারণে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটে সেসব কারণ প্রতিরোধ করতে পারলেই বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। তবেই দ্রব্যসামগ্রী মানুষের কাঙ্ক্ষিত ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে ।



Post a Comment

0 Comments