ভূমিকা :
‘ইসলাম' শব্দের অর্থ হলো আত্মসমর্পণ করা, মেনে চলা, আনুগত্য করা ইত্যাদি। অন্য কথায় বলা যায়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) যে শাশ্বত জীবন বিধান নিয়ে এসেছেন তা-ই ইসলাম। ইসলামের আগমন হয়েছে মানব কল্যাণে এবং মানবতার মুক্তি প্রদানের জন্য। তাই মানব কল্যাণে ইসলামের অবদান অপরিসীম।
ক. ইসলাম ও মানব কল্যাণ :
ইসলাম ও মানব কল্যাণ একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানব কল্যাণ সাধনের জন্যই ইসলামের আগমন। 'সাগরের যে উদারতা, পাহাড়ের যে ঔদার্য, বৃক্ষের যে বিশালতা ইসলাম তো মানব কল্যাণে ঠিক তাই। দ্বীন ইসলামের প্রকৃতির সাথে মানব কল্যাণের ধারণা গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তাই মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে পথহারা শান্তিহারা মানবজাতিকে ইসলামের কল্যাণের ছায়াতলে আহ্বান করেছেন।
আরও পড়ুন : প্রবন্ধ রচনা : ইসলামী সাহিত্য
খ. মানব কল্যাণে ইসলাম :
পৃথিবীতে মানব কল্যাণে ইসলাম যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এসে মজলুম মানবতা পেয়েছে মুক্তি। অত্যাচারিত, অবহেলিত, বিপর্যস্ত মানুষ পেয়েছে শান্তির ঠিকানা। মানব কল্যাণে ইসলামের যুগান্তকারী ভূমিকাগুলো হলো-
গ. অধিকারহারা মানুষের কল্যাণে ইসলাম :
ইসলাম মানুষকে উত্তমরূপে বাঁচতে অধিকার প্রদান করেছে। মহানবী (স) যখন এ পৃথিবীর বুকে আগমন করেন তখন সাধারণ মানুষ ছিল নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, অধিকার হারা। এমনি এক সংকটময় মুহূর্তে মহানবী (স) মানুষের মাঝে নিয়ে আসলেন সাম্যের বাণী। মানুষের দুঃখ লাঘবে এবং বঞ্চিতের অধিকার সংরক্ষণের জন্য তিনি উপস্থাপন করলেন এক ন্যায়-নীতির আদর্শ ইসলাম ৷
ঘ. বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইসলাম :
ইসলাম পৃথিবীতে সমঅধিকারের ভিত্তিতে বিশ্বভ্রাতৃত্বের জন্ম দেয়। এ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই।' ধনী— গরিব, রাজা— প্রজা, উঁচু-নীচু ভেদাভেদ ধূলিসাৎ করে ইসলামই সর্বপ্রথম মানুষের মাঝে মানবতাবোধের ধারণা জন্ম দেয়। তাই ইসলামের এ মানবাতাবোধ লক্ষ্য করেই কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন—
“ইসলামে নাই আশরাফ আতরাফ,
এই ভেদজ্ঞান নিষ্ঠুর হাতে, কর মিসমার সাফ। ”
আরও পড়ুন : ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান -বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ঙ. নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম :
ইসলাম নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা দান করে তার হৃত গৌরব প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে নারী পণ্যের মতো বিক্রি হতো, যেখানে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করা হতো সে সমাজে রাসূল (স)–ই সর্বপ্রথম নারীকে উপযুক্ত সামাজিক মর্যাদা প্রদান করে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন।
৬. ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ইসলাম :
ইসলাম ন্যায়ের ধর্ম। পরিপূর্ণ ইনসাফের ভিত্তিতে ইসলাম সমাজে কল্যাণকর শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করে। তাই কুরআনের ঘোষণা, “তোমরা যখন নিজেদের মধ্যে বিচার অথবা আপস রফা কর তখন ন্যায়ের সাথেই কর।”
৭. শোষণমুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় :
অর্থনীতি মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক দিক। এ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ইসলাম ইনসাফভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধনী দরিদ্রের মাঝে সহাবস্থানে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
৮. সার্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা :
ইসলাম বর্ণ, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে সকলের মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি দিয়েছে। রাসূলে আকরাম (স)-এর বিদায় হজ্জের ভাষণই তার সুস্পষ্ট দলিল। অথচ আজ বিশ্বের দিকে দিকে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। যেমন- ভারতের সরকার কর্তৃক কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামীদের উপর নির্যাতন, গোঁড় হিন্দুদের দ্বারা আসামে মুসলিম নিধন, মিয়ানমারের মুসলমানদের উপর নির্যাতন আলজেরিয়ায় ইসলামের পক্ষে জনতার বিপুল রায় সত্ত্বেও ইসলামী শাসন ব্যবস্থার স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। মূলত ইসলামী আইন না থাকার কারণেই বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
উপসংহার :
মানব কল্যাণে ইসলামের অবদান অপরিসীম। ইসলাম পৃথিবীর বুকে উপহার দিয়েছে কল্যাণের ধর্ম, শান্তির ধর্ম। যে সম্প্রদায় ইসলামের পরিপূর্ণ বিধান মেনে চলবে, তাদের জীবনে নেমে আসবে শান্তির অমিয়ধারা।