Ads Area

রেল ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা : বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা : 

যেকোনো ধরনের ভ্রমণই আনন্দদায়ক । ভ্রমণ করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি । আর ভ্রমণ থেকে অর্জিত হয় অনাবিল আনন্দ ও প্রশান্তি। প্রকৃতপক্ষে, ভ্রমণের ফলে মানুষের চিত্ত যেমন প্রফুল্ল হয় ঠিক তেমনি সে অনেক অজানার সন্ধান লাভ করে ।

 রেলভ্রমণের প্রস্তুতিপর্ব : 

দিনক্ষণ ঠিক হলো আমাদের ভ্রমণের। আমার তো কোনোভাবেই দেরি সহ্য হচ্ছিল না। খালামনি গেলেন স্টেশনে টিকিট কাটতে। রেলে দিন দিন যাত্রী বাড়ছে, তাই একটু আগেভাগে টিকিট না কাটলে সিট পাওয়া যায় না। সুন্দরবন ট্রেনের টিকিট কেটে এনে খালামনি আমার হাতে দিলেন- গ বগির ২৭ ও ২৮ নম্বর সিট আমাদের, সময় সকাল ৭:৪০ মিনিট। আমার আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। ব্যাগ গোছাতে শুরু করলাম; মনে করে সব তুললাম। আমার মামাতো ভাই দীপ্তর জন্যে একটি উপহার কিনেছি; সেটা রাখলাম ব্যাগে সবার ওপরে। মাও মামির জন্য কিছু জিনিস দিলেন। সেগুলো অবশ্য খালামনির ব্যাগে জায়গা পেল ।

রেল স্টেশনের দৃশ্য : 

আমাদের বাড়ি থেকে স্টেশন খুব দূরে নয়। রিকশায় আমরা স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । প্রায় ১৫ মিনিট পর আমরা কমলাপুর স্টেশনে নামলাম। এই স্টেশনটিকে একবারে নতুন করে সাজানো হয়েছে। ছাদের ওপর ট্রান্সপারেন্ট গ্লাস লাগানোয় সম্পূর্ণ আলো স্টেশনের ভেতরে পড়ছিল। মোট ৬টি প্লাটফর্ম আছে এ স্টেশনে এবং সবগুলোতেই ট্রেন প্রতিদিন যাতায়াত করে। স্টেশনের ভেতরে বিশুদ্ধ পানি খাবার সুন্দর ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া স্টেশনটিও বেশ পরিষ্কার। তবু কিছু মানুষ খাবারের ঠোঙা এদিক-ওদিক ফেলল। আমার খুব খারাপ লাগল ওই দৃশ্য দেখে ।

আরও পড়ুন : নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা : প্রবন্ধ রচনা

বিরতি স্টেশনসমূহের চিত্র : 

সুন্দরবন আন্তঃনগর ট্রেন হওয়ার পরও বড়ো স্টেশনগুলোতে যাত্রাবিরতি দিচ্ছিল। সেই সুযোগে আমি জানালা দিয়ে স্টেশনগুলো দেখে নিচ্ছিলাম। প্রথমেই আমার মনে যেটি দাগ কাটল সেটি হলো মানুষের মুখের ভাষা। অঞ্চল ত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কী দ্রুত মানুষের মুখের ভাষা পরিবর্তিত হয়ে যায় তা ভেবে অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম। যদিও এ বিষয়ে বইতে, আগেই পড়েছি তবুও সরাসরি এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে বেশ অবাক হয়েছিলাম। কোনো স্টেশনে মানুষ গিজগিজ করছিল আবার কোনো স্টেশন ছিল একেবারেই শান্ত। তবে স্টেশনগুলোতে ট্রেন থামতেই ফেরিওয়ালারা নানা জিনিস নিয়ে ট্রেনে উঠছিল।

ট্রেনের ভিতরের দৃশ্য : 

নির্দিষ্ট সময় পর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যাত্রীদের টিকিট চেক করতে এলেন। আমার কাছে টিকিট চাইতেই আমি বের করে দিলাম। দেখতে পেলাম দু'জন যাত্রী টিকিট ছাড়াই উঠেছে। তাদের জরিমানা করলেন সাদা পোশাক পরা ব্যক্তিরা আমার পাশে একটি পরিবার বসেছে; খুব আনন্দ করছে তারা। ট্রেনের ভিতরের খাবার দেবার ছেলেটি এসে মাঝে মাঝে কিছু লাগবে ন কি না জিজ্ঞেস করছিল। তাছাড়া ফেরিওয়ালা, ভিক্ষুক বিভিন্ন সময়ে যাত্রীদের কাছে তাদের আবেদন-নিবেদন রাখছিল। তবে একটি লোক খুব সুন্দর গলায় লালনগীতি গাইছিল । আমি আর খালামনি দুজনেই শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম ।

আরও পড়ুন : দেশ ভ্রমণ - বাংলা রচনা | ক্লাস 6, 7, 8, 9, 10

গন্তব্যে পৌছার পর : 

প্রায় ৫ ঘণ্টার যাত্রা শেষে আমরা যশোর স্টেশনে পৌছলাম। দেখি মামা আর দীপ্ত স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দেখেই তারা এগিয়ে এলো। আমি দীপ্তর সঙ্গে হাত মেলালাম। মামা আমার মাথায় হাত রাখলেন আর খালামনিকে অভ্যর্থনা জানালেন। অটোরিকশায় ওঠে যেতে যেতে আমি দীপ্তকে আমার অভিজ্ঞতার কথা বললাম। ও শুনে খুব পুলকিত হলো” এবং আমার সঙ্গে ঢাকায় আসবে বলে জানালো ।

রেলগাড়ির রাত্রি : 

যশোর থেকে সুন্দরবন ছাড়ে বেলা চারটায় । মামা আমাদের তুলে দিতে এলেন। দীপ্তও সঙ্গে এসেছিল, কিন্তু ও ঢাকায় আসতে পারেনি। ফেরার পথে ট্রেনে রাত হয়ে গিয়েছিল। রাতে ট্রেনের ভিতরে খুব অদ্ভুত লাগছিল। যে রাস্তাগুলো দিনের আলোয় আমার মনে আনন্দের সঞ্চার করেছিল সেগুলোই রাতে ভীতির সঞ্চার করছিল। রাত ন'টায় আমরা কমলাপুর স্টেশনে পৌছলাম। স্টেশনে এসে দেখি বাবা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।

উপসংহার : 

আমার জীবনে আনন্দের অনেক মুহূর্ত এসেছে। কিন্তু সেবারের গরমের ছুটির রেলভ্রমণ যেন আমার কাছে একেবারে জীবন্ত। আজও আমি সুযোগ হলেই সেই রেলভ্রমণের স্মৃতি রোমন্থন করি। সেবার যদি দীপ্ত আমাদের সঙ্গে আসত তাহলে হয়ত আরও বেশি আনন্দ হতো। তবে আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমার দেওয়া উপহারটা ওর খুব ভালো লেগেছিল। আসার সময় আমাকেও একটি উপহার দিয়েছিল দীপ্ত- যা এখনো আমার কাছে যত্নে রাখা আছে।

Post a Comment

0 Comments