উপস্থাপনা :
এ দেশে এমন লোক নেই যিনি শেরে বাংলার নাম শোনে নি। শেরে বাংলার প্রকৃত নাম হচ্ছে আবুল কাশেম ফজলুল হক। দীর্ঘ ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি বাংলার রাজনীতিতে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা ৷
জন্ম ও পরিচয় :
১৮৭৬ সালের ২৬ অক্টোবর আবুল কাশেম ফজলুল হক বরিশাল জেলার চাখার গ্রামের সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ওয়াজেদ আলী ছিলেন বরিশালের একজন বিশিষ্ট উকিল ।
শিক্ষা জীবন :
এ. কে. ফজলুল হকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাদরাসায় । পরে তিনি ভর্তি হন বরিশাল জেলা স্কুলে। এরপর থেকেই তিনি কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে তিনি অধ্যায়ন করেন । অনার্সসহ বি. এ ডিগ্রি লাভ করার পর এ. কে. ফজলুল হক অঙ্কশাস্ত্রে এম. এ ডিগ্রি পান ১৮৮৫ সালে । আইন পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন ১৮৯৭ সালে ।
আরও পড়ুন : মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী - বাংলা রচনা
কর্মজীবন :
এ. কে. ফজলুল হক ১৮৯৭ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে সরকারি চাকরি গ্রহণ করেন । কিছুকাল পর সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি ১৯০০ সালে কোলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯০৬ সালে তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগ সম্মেলনের সাথে যুক্ত হন। ১৯১৩-২০ সাল পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সেক্রেটারী ছিলেন । কিছুকাল তিনি প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতিও ছিলেন ।
শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ১৯২৫ সালে বাংলার মন্ত্রী সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১৮ সালে তিনি নির্বাচিত হন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারী হিসেবে। ১৯২৭ সালে তিনি ‘কৃষক প্রজা পার্টি' নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন ।
১৯৩৫-৩৬ সালে এ. কে. ফজলুল হক কলকাতা পৌর কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে ১৯৩৭ সালে সর্বপ্রথম তিনি বাংলার মন্ত্রীসভা গঠন করেন। ১৯৪৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এ. কে. ফজলুর হক নানা জনহিতকর ও শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছিলেন। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ তিনি মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব' উত্থাপন করেন। এ সময়েই পাঞ্জাবের অধিবাসীরা তাকে শেরে বাংলা' উপাধি দেন ।
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে । এরপর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর নিযুক্ত হন এবং ১৯৫৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে 'ডক্টর অব ল' খেতাবে ভূষিত করেন।
আরও পড়ুন : শহীদ তিতুমীর - বাংলা রচনা
অবদান :
দেশের সাধারণ মানুষ তথা বাংলাদেশের মুসলমান সমাজের জন্য তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি নিজে ছিলেন শিক্ষানুরাগী। তারই আগ্রহ এবং প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজ, ব্রাবোর্ণ মহিলা কলেজ, ইডেন কলেজ, বরিশালে চাখার কলেজসহ দেশের নানা স্থানে বহু মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে । তিনিই কৃষক প্রজা আন্দোলন প্রবর্তন করেন । তাঁর চেষ্টায় প্রজাস্বত্ব আইন ও ঋণ সালিসি বোর্ড স্থাপিত হয়। এ যুগে তাঁর মত মহানুভব, দানশীল, উদার ব্যক্তিত্ব ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান বাংলাদেশে আর কেউ ছিলেন না। বাগ্মিতায়ও তিনি ছিলেন অতুলনীয়।
মৃত্যু :
বাংলার এ মহান নেতা ও কৃষক বন্ধু এ. কে. ফজলুল হক ১৯৬২ সালের ২১ এপ্রিল দেশবাসীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চির নিদ্রায় শায়িত হন। যথার্থই তিনি বাংলার এক উজ্জ্বল আদর্শ পুরুষ।
উপসংহার :
শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এক অবিসংবাধিত নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । তাঁর খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাঙালি জাতির ভাগ্যের উন্নতির জন্য তাঁর প্রচেষ্টার কোন কমতি ছিল না। তাঁর মৃত্যু আজও মানুষের মনে নাড়া দেয় ।