ভূমিকা :
সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ- খুবই পরিচিত বহুল শ্রুত একটি বাক্য। খুব সহজ এবং ছোটো বাক্য হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সৎ বন্ধু ও ভালো সঙ্গী নির্বাচন করার ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। মানবজীবনের একটি অপরিহার্য বিষয় হলো এক বা একাধিক ব্যক্তিকে সঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করা। কারণ মানুষ সামাজিক জীব। কোনো মানুষ একা বাস করতে পারে না; সঙ্গী-সাথি, পাড়া-প্রতিবেশী মিলেই মানুষের বসবাস ।
সৎসঙ্গ বলতে যা বোঝায় :
যে সঙ্গ বা সান্নিধ্য থেকে সদুপদেশ, সৎপরামর্শ ও সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার প্রেরণা পাওয়া যায় সে সঙ্গই সৎসঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সৎসঙ্গীর বৈশিষ্ট্য :
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে "A man is known the company he keeps." অর্থাৎ সঙ্গী থেকে মানুষের চরিত্র জানা যায়। তাই চরিত্রবান হতে হলে চাই সৎ ও পরোপকারী সঙ্গ। যে বন্ধুর আচরণে অনুসরণীয় আদর্শ থাকবে, যার কথাবার্তায় সুখের অনুভূতি থাকবে, যার কর্মকাণ্ডে কল্যাণের স্পর্শ থাকবে সেই হলো যথার্থ সঙ্গী। সৎসঙ্গী কখনোই বন্ধুর অকল্যাণ কামনা করে না বরং নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়েও বন্ধুর স্বার্থকেই বড়ো করে দেখে। বস্তুত মানবিক গুণাবলির সমাহার হিসেবে ধৈর্য, সাহস, আনুগত্য, সততা, সৌজন্য, কৃতজ্ঞতাবোধ ইত্যাদি সৎসঙ্গীর বৈশিষ্ট্য বলে বিবেচ্য।
আরও পড়ুন : সততা অথবা সত্যবাদিতা - রচনা : ক্লাস 6 , 7 , 8 , 9, 10 | PDF
সৎসঙ্গের গুরুত্ব :
মানবজীবনে সৎসঙ্গের গুরুত্ব অপরিসীম। সামাজিক জীবনে একজন মানুষ সঙ্গ প্রভাবে যেমন অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারে, তেমনি হতে পারে দুশ্চরিত্র, দুর্বৃত্ত। অনেক প্রতিভাবান ও মনোরম চরিত্রের মানুষকেও দেখা যায় অসৎ সঙ্গের প্রভাবে অধঃপতনের গভীরে তলিয়ে যেতে। আবার অনেক অধঃপতিত ব্যক্তিকে সচ্চরিত্র মানুষের সঙ্গলাভের মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে দেখা যায় ।
সঙ্গী নির্বাচনে সতর্কতা :
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের বসবাস। ঠক, প্রতারক ও বিপথগামী মানুষের অভাব নেই আমাদের সমাজে। আবার কিছু মানুষ রয়েছে অন্ধকার আকাশে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো। সঙ্গী বা সাথি হিসেবে এই উজ্জ্বল আলোকিত মানুষদেরই কামনা করতে হবে। তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাইরের রূপ নয়; দেখতে হবে তার মনের জগতটি আলোকিত কি না । দার্শনিক ইমাম গায্যালী সৎবন্ধুর কতগুলো গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করেছেন। তিনি অসৎ, স্বার্থপর ও ধর্মহীন মানুষের সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, “কুসংসর্গে বাস করার চেয়ে একা বসে থাকা ভালো।”
ছাত্রজীবনে সৎসঙ্গের গুরুত্ব :
ছাত্রজীবন জীবন গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। বয়সগত কারণেই এ সময় মানুষ সঙ্গী বা সাথির প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। অভিজ্ঞতা ও বাস্তবজ্ঞানের অভাবে এ সময় সহজেই বন্ধুর দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই এ বয়সে সৎসঙ্গের অত্যন্ত প্রয়োজন। এ বয়সে অনেক তরুণ অসৎসঙ্গের প্রভাবে দুষ্কর্মে জড়িয়ে পড়ে। আজকাল ছাত্র ও তরুণসমাজের মধ্যে মাদকদ্রব্যের নেশা, সন্ত্রাস ও অসামাজিক কার্যকলাপের যে প্রবণতা লক্ষ করা যায়, তার জন্য তাদের সঙ্গদোষই অনেকাংশে দায়ী।
আরও পড়ুন : চরিত্র - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] এবং HSC
তাই ছাত্রদের নিজের যেমন সঙ্গী নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে তেমনি অভিভাবকদেরও তাদের সন্তান কার সাথে মেলামেশা করছে সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। সঙ্গদোষে যাতে বিপথগামী না হয় সেজন্য সন্তানদের সচেতন করে তোলা অভিভাবক ও শিক্ষকদের দায়িত্ব। যেসব ছাত্র পড়ালেখায় অমনোযোগী, মাদকাসক্ত বা সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তাদের সাথে কিছুতেই মেলামেশা করা উচিত নয়। কারণ ছাত্রদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
“সৎসঙ্গে স্বর্গবাস-
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।”
উপসংহার :
বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান সেই যে উত্তম ও ভালোদের সঙ্গে ওঠা-বসা করে। না বুঝে ও না শোনে এবং কারও কাজ না দেখে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ঠিক নয়। মানুষ যেমন বাঘ বা হিংস্র বা যেকোনো ভয়ংকর কোনো প্রাণী থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে ঠিক তেমনি বুদ্ধিমান লোকরা সব সময় খারাপ ও অসৎ লোকদের থেকে দূরে অবস্থান করে। কেননা খারাপ ও অসৎ লোকদের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই ।