আবরণী ও যোজক কলা কাকে বলে? এদের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট ও কাজ

সংজ্ঞা : যে কলা প্রাণিদেহের দেহত্বক ও দেহ মধ্যস্থ বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের উপর আচ্ছাদন বা আবরণ সৃষ্টি করে, তাকে আবরণী কলা বা এপিথেলিয়াল টিস্যু বলে। 

এক স্তরে বিন্যস্ত আবরণী কলাকে সরল (simple) এবং বহুস্তরে বিন্যস্ত আবরণী কলাকে যৌগিক বা স্তরীভূত (Straftfied) আবরণী কলা বলে ।

উদাহরন : হাইড্রা, সরল বহুকোষী প্রাণী । যেখানে কেবলমাত্র আবরণী কলা বর্তমান ।

অবস্থান : আবরণী কলা দেহত্বকের বাইরে এবং দেহমধ্যস্থ সমস্ত অঙ্গের বা তন্ত্রের বাইরে অবস্থিত। 

গঠন : ভিত্তিপর্দা বা বেসমেন্ট মেমব্রেন (Basement membrane) এর উপর ঘন সন্নিবিষ্ট কোষগুলো এক বা একাধিক স্তরে বিন্যস্ত কোষান্তরে পর্দায় বা ইন্টার সেলুলার সিমেন্টিং সাবস্ট্যান্স দ্বারা যুক্ত।

আবরণী কলার প্রকারভেদ :

কোষের আকৃতি, প্রাণিদেহে অবস্থান ও কাজের প্রকৃতিভেদে এ কলা তিন ধরনের হয় । যথা— 

ক. স্কোয়ামাস আবরণী কলা : এ কলার কোষগুলো মাছের আঁইশের মতো চ্যাপ্টা ও নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয় ।

খ. কিউবয়ডাল আবরণী কলা : এ কলার কোষগুলো ঘনাকার অর্থাৎ কোষগুলো দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা প্রায় সমান ।

গ. কলামনার আবরণী কলা : এ কলার কোষসমূহ স্তম্ভে মতো সরু ও লম্বা। ক্ষরণ, রক্ষণ ও শোষণ কাজে লিপ্ত।

আরও পড়ুন : আবরণী কলা ও যোগ কলা এবং পেশীকলা ও স্নায়ুকলার মধ্যে পার্থক্য

আবরণী কলার বৈশিষ্ট্য :

১। আবরণী কলার কোষগুলো ঘন সন্নিবিষ্ট ।

২। আবরণী কলার কোষগুলোর মধ্যে কোষান্তর পদার্থের পরিমাণ অল্প ।

৩। আবরণী কলার কোষগুলো সাধারণভাবে যোজক কলা দ্বারা গঠিত ভিত্তিপর্দা বা বেসমেন্ট বা মেমব্রেনের উপরে সজ্জিত থাকে ।

৪। আবরণী কলাস্তর ভিত্তি পর্দা ও শিথিল অধঃত্বকীয় যোজকলার মাঝ থেকে স্তর দুটিকে পৃথক রাখে।

৫। চর্ম, পরিপাকনালী, রক্ত প্রবাহ প্রভৃতি দেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর উপর আবরণী কলার আচ্ছাদন থাকে।

৬। আবরণী কলায় কোন রক্ত প্রবাহ থাকে না ।

আবরণী কলার কাজ :

১। আবরণী কলা কোনো অঙ্গের বা নালির ভিতরের ও বাইরের অংশ তৈরি করে থাকে ।

২। এই কলা রূপান্তরিত হয়ে রক্ষণ, ক্ষরণ, শোষণ, ব্যাপন, পরিবহন ইত্যাদি কাজে অংশ নেয় ।

৩। এই কলা রূপান্তরিত হয়ে গ্রন্থি কলা এবং জনন কলায় পরিণত

হয়ে দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে ।

আরও পড়ুন : টিস্যু বা কলা কাকে বলে,কত প্রকার।কোষ ও টিস্যু-টিস্যু ও অঙ্গের সম্পর্ক

যোজক কলা :

সংজ্ঞা : যে টিস্যু দেহ মধ্যস্থ বিভিন্ন টিস্যুর মধ্যে যোগসূত্র রচনা করে, তাকে যোজক টিস্যু বলে। 

যোজক কলার বৈশিষ্ট্য :

১। এই টিস্যুর কোষগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট স্তরে বিন্যস্ত থাকে না এবং কোষ নিঃসৃত মাতৃকার মধ্যে ছড়ানো থাকে। 

২। কোষের সংখ্যা খুব কম থাকে।

৩। কোষগুলোর ফাকে ফাকে প্রচুর মাতৃকা থাকায় কোষগুলো ঘন সন্নিবিষ্ট নয়।

৪। বিভিন্ন প্রকার তন্তু মাতৃকায় বিজাড়িত থাকে ।

৫। মেসোডার্ম নামক ভ্রূণস্তর হতে এই টিস্যুর উৎপত্তি। 

যোজক কলার প্রকারভেদ :

গঠন ও কাজের ভিত্তিতে যোজক কলা প্রধানত তিন ধরনের হয়। যথা— 

ক. ফাইব্রাস যোজক কলা। 

খ. স্কেলিটাল যোজক কলা ও 

গ. তরল আবরণী কলা ।

ক. ফাইব্রাস যোজক কলা : এদের মাতৃকায় বিভিন্ন ধরনের তন্তুর আধিক্য দেখা যায় ।

খ. স্কেলিটাল যোজক কলা : দেহের অভ্যন্তরীণ কাঠামো গঠনকারী কলাকে স্কেলিটাল যোজক কলা বলে । 

কাজ : দেহের অভ্যন্তরীণ কাঠামো গঠন করে, দেহকে নির্দিষ্ট আকৃতি ও দৃঢ়তা দেয়, অঙ্গ সঞ্চালন ও চলনে সহায়তা করে, দেহের নরম ও নাজুক অঙ্গসমূহকে রক্ষা করে, বিভিন্ন ধরনের রক্তকণিকা উৎপাদন করে, ঐচ্ছিক পেশিসমূহের সংযুক্তির ব্যবস্থা করে প্রভৃতি ।

গ. তরল আবরণী কলা : মাতৃকায় বিভিন্ন ধরনের জৈব পদার্থ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে ।

কাজ : দেহের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দ্রব্যাদি পরিবহন করা, রোগ প্রতিরোধ ও রক্ত জমাট বাঁধায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment