মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো ভাষা। আর ভাষার মূল উপাদান হলো বাক্য। বাক্যের বিভিন্ন পদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকা আবশ্যক। এছাড়াও বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদ দ্বারা মিলিতভাবে একটি অখণ্ড ভাব পূর্ণরূপে প্রকাশিত হলে তা বাক্যে পরিণত হয়।
(toc) Table Of Contens
সংজ্ঞা : দুই বা ততোধিক পদ মিলিত হয়ে যদি মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে তখন তাকে বাক্য বলে। যেমন :
মেঘমুক্ত আকাশকে নীল দেখায়।
সূর্য পূর্বদিকে ওঠে।
বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
বাক্যের প্রকারভেদ :
বাক্যের প্রধানত দুটি অংশ থাকে। যথা :
১। উদ্দেশ্য।
২। বিধেয়।
১। উদ্দেশ্য : বাক্যে যাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য বলে।
যেমন : গরু একটি নিরীহ প্রাণী।
এ বাক্যটিতে ‘গরু’ হলো উদ্দেশ্য। কারণ গরুকে উদ্দেশ করে বাক্যটি বলা হয়েছে। বাক্যের কর্তা উদ্দেশ্য অংশে থাকে।
২। বিধেয় : উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বাক্যে যা কিছু বলা হয়, তাকে বিধেয় বলে।
যেমন : গরু একটি নিরীহ প্রাণী।
এখানে গরুকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে ‘একটি নিরীহ প্রাণী'। তাই এ বাক্যটিতে 'একটি নিরীহ প্রাণী' হলো বিধেয়। বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়া বিধেয় অংশে থাকে।
কয়েকটি বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় আলাদাভাবে দেখানো হলো :
উদ্দেশ্য | বিধেয় |
---|---|
আমি | রোজ স্কুলে যাই। |
চোরটি | ধরা পড়েছে। |
রিনা | একটি চিঠি লিখে। |
রবীন্দ্রনাথ | ‘গীতাঞ্জলি' রচনা করেছেন |
গরুগুলো | মাঠে ঘাস খায়। |
উট | মরুভূমির বাহন। |
পাখিরা | আকাশে উড়ে। |
ঢাকা | বাংলাদেশের রাজধানী। |
শিশুরাই | জাতির ভবিষ্যৎ। |
মানুষ | মরণশীল। |
মনে রাখবে : বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় এ দুটি অংশই অত্যাবশ্যক। এদের যেকোনো একটি বাদ দিলে বাক্য গঠিত হতে পারে না। এদের উভয় অংশেই এক বা একাধিক শব্দ থাকতে পারে ।
ব্যতিক্রম : উদ্দেশ্য উহ্য থেকে একটি মাত্র শব্দ দিয়েও বাক্য হতে পারে। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ‘আমি’, ‘তুমি’, ‘সে’ ইত্যাদি উহ্য থাকে। যেমন-আস, যাও, পড়, থাম, খেল ইত্যাদি।
আরও পড়ুন : সরল,জটিল ও যৌগিক বাক্যের সংজ্ঞা, উদাহরণ, রূপান্তর, পার্থক্য, বৈশিষ্ট্য
গঠন অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ :
১। সরল বাক্য।
২। জটিল বাক্য বা মিশ্র বাক্য।
সরল বাক্য :
সংজ্ঞা : যে বাক্যে একটি মাত্র সরল বাক্য এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকে তাকে সরল বাক্য বলা হয়। যেমন-
ক. মিনা ভাত খেয়েছে ।
খ. ভোর হয়েছে।
জটিল বা মিশ্র বাক্য :
সংজ্ঞা : যেসব বাক্যে একটিমাত্র প্রধান বাক্য এবং এক বা একাধিক অপ্রধান বাক্য থাকে, তাকে জটিল বা মিশ্র বাক্য বলা হয়। যেমন-
খ. যদি ভাল চাও, আমার কথা শোন।
যৌগিক বাক্য :
সংজ্ঞা : দুই বা ততোধিক সরল বা জটিল বাক্য যদি ‘ও’ ‘এবং’ ‘অতএব’, ‘কিন্তু' ইত্যাদি অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে অথবা ‘যদিও' অব্যয়ের দ্বারা বিযুক্ত হয়ে একটিমাত্র বাক্য গঠন করে, তবে সে বাক্যটিকে যৌগিক বাক্য বলে । যেমন-
খ. ডাক্তার তাড়াতাড়ি এসে রোগী দেখলেন এবং ফি নিয়ে চলে গেলেন।
আরও পড়ুন : বাক্য গঠনের নিয়ম।একটি সার্থক বাক্যের কয়টি গুন বা অংশ থাকে উদাহরণ সহ
অর্থ অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ :
অর্থ অনুসারে বাক্য পাঁচ প্রকার। যথা :
১। বিবৃতিমূলক বাক্য।
২। প্রশ্নবোধক বাক্য।
৩। অনুজ্ঞাবাচক বাক্য।
৪। আশীর্বাদসূচক বাক্য এবং
৫। আবেগসূচক বাক্য ।
১। বিবৃতিমূলক বাক্য :
যে বাক্যে কোনো বিবৃতি প্রদান করা হয়, তাকে বিবৃতিমূলক বাক্য বলে। যেমন-
রাফাত ভালো ছেলে।
রোজি খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে।
বিলাল আম পছন্দ করে।
বিবৃতিমূলক বাক্য দুই প্রকার। যথা-
ক. হ্যাঁ- বোধক বাক্য ও
খ. না-বোধক বাক্য ।
ক. হ্যাঁ- বোধক বাক্য : যে বাক্যে হ্যাঁ সূচক অর্থ প্রকাশ করে, তাকে হ্যাঁ বোধক বাক্য বলে। যেমন- জনি স্কুলে যাবে। জুনু বই পড়ে ইত্যাদি।
ক. না- বোধক বাক্য : যে বাক্যে না বোধক অর্থ প্রকাশ করে, তাকে না বোধক বাক্য বলে। যেমন- জনি স্কুলে যাবে না। জুনু বই পড়ে না ইত্যাদি।
২। প্রশ্নবোধক বাক্য :
যে বাক্য দ্বারা কোন কিছু সম্বন্ধে প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা বুঝায়, তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বলে। যেমন-
ক. তোমার নাম কী? খ. তুমি কোন শ্রেণীতে পড় ইত্যাদি ।
৩। অনুজ্ঞাবাচক :
যে বাক্যে আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, নিষেধ ইত্যাদি বুঝায়, তাকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। যেমন—
খ. গুরুজনকে সম্মান কর। (উপদেশ)
ঘ. মিথ্যা কথা বলবে না। (নিষেধ)
আরও পড়ুন : সমাস কাকে বলে?সমাসের অংশ কয়টি ও সমাসের প্রয়োজনীয়তা
ক. সদা আল্লাহকে স্মরণ কর। (ইতিবাচক)
খ. কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবে না। (না-বাচক বা নেতিবাচক)।
৪। আশির্বাদসূচক বাক্য :
যে বাক্য দ্বারা কোন কিছু আশীর্বাদ, ইচ্ছা, প্রার্থনা, শুভেচ্ছা ইত্যাদি বুঝায়, তাকে বলা হয় আশীর্বাদসূচক বাক্য। যেমন-
খ. গরিবকে দয়া করতে পার। (ইচ্ছা)
ঘ. টেলেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ায় তোমাকে অভিনন্দন। (শুভেচ্ছা)
৫. বিস্ময়সূচক বাক্য :
যে বাক্য দ্বারা বিস্ময়, হাসি, কান্না, সুখ, দুঃখ, আনন্দ, রাগ, ভয় ইত্যাদি প্রকাশ পায়, তাকে বিস্ময়সূচক বাক্য বলে। যেমন-
খ। বাঃ বাঃ কী চমৎকার দৃশ্য ।
ঘ। বাহ্! পাখিটি কি চমৎকার দেখতে।