মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন ভাবসম্প্রসারণ :
মূলভাব : কায়িক পরিশ্রম বা সাধনা ছাড়া কোনো কিছুই লাভ করা যায় না ।
সম্প্রসারিত ভাব : মানবজীবনের মহৎ ও মহান উদ্দেশ্য জীবনে সাফল্য লাভ । এ সাফল্য লাভের জন্যে সাধনা ও পরিশ্রম করতে হয় । সাধনার পথ কখনো আরামদায়ক নয় । মানবজীবনের মূলমন্ত্রকে সফল করতে গিয়ে প্রয়োজনে শরীরকে বিলিয়ে দিতে হয় । মন্ত্রের সাধনাতেই হোক আর শারীরিক পরিশ্রমের ফলেই হোক, জীবনের আদর্শগুলোকে সফলতার সাথে বাস্তবায়িত করতে না পারলে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্য যদি সাফল্যমণ্ডিত না হয় তবে সে জীবনের কোনো সার্থকতা পরিলক্ষিত হয় না। সাফল্য লাভের জন্যে কায়িক পরিশ্রম ও একনিষ্ঠ সাধনা চালিয়ে যেতে হয়। তবেই আসবে জীবনের সাফল্য ও সার্থকতা ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব একদিন পৃথিবীর মানচিত্রে ছিল না। বহু বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে, বহু রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ আপন স্থান অধিকার করে নিয়েছে । মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন- এ দুর্বার মন্ত্রে বাঙালিরা যদি উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত হয়ে মরণপণে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়তো, তবে স্বাধীনতার এ রঙিন সূর্য বাংলার ভাগ্যাকাশে কোনো দিনই উদিত হতো না ।
মন্তব্য : একমাত্র অটুট মনোবলের অধিকারী অধ্যবসায়ী ব্যক্তিই পৃথিবীর বুকে কীর্তি স্থাপন করে অমরত্ব লাভ করতে পারে । তাকে মনের মন্দিরে নিত্য সেবে সর্বজন।
আরও পড়ুন : পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি : ভাবসম্প্রসারন (৪বই থেকে ৪টি)
একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন
মূলভাব : জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে সব রকমের বিপদ-আপদ তথা জীবন তুচ্ছ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কেননা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনই মানবজীবনের প্রধান কাজ ৷
সম্প্রসারিত ভাব : প্রতিটি মানুষই জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু মানবজীবন বড়ই কণ্টকাকীর্ণ। তাকে চলার পথে বহু বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। এসব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করেই তাকে সামনে এগিয়ে চলতে হয়। আর তার স্বপ্ন সাধ তখনই পূর্ণ হয় যখন সে স্থির লক্ষ্যে পৌঁছে সোনালি সিংহদ্বারে পা রাখতে পারে। এজন্য চাই একাগ্রতা, চাই নিষ্ঠা, চাই শ্রম। কিন্তু মৃত্যুভয়ে ভীত হলে জীবনে সফলতার বদলে নেমে আসবে ব্যর্থতার গ্লানি। পরিশ্রমবিমুখ, অলস ব্যক্তির কাছে সবকিছুই নাগালের বাইরে থাকে। পক্ষান্তরে যথার্থ পরিশ্রমই সৌভাগ্য বয়ে আনে। পৃথিবীতে যারা খ্যাতি, সুনাম, প্রতিপত্তি, সাফল্য লাভ করেছেন, তাদের জীবন- ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা বিনা আয়াসে এসব অর্জন করেননি।
বরং তাদের সৎ সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, কঠিন সাধনা। যেমন : ‘স্বাধীনতা, নয়তো মৃত্যু' এই দৃঢ়তার মধ্য দিয়ে যোদ্ধারা ক্রমাগত চেষ্টা করে দেশ স্বাধীন করে। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ষষ্ঠবার যুদ্ধে পরাজিত হয়েও হতাশ হননি। তিনি চেষ্টা করেছেন অবশেষে সপ্তমবার বিজয়ী হয়েছেন। যারা নিষ্ঠা ও একাগ্রতার অভাবে বারবার আচ্ছন্ন হয়েছেন তারা কেউ জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেননি। হা-হুতাশ আর এক বুক দীর্ঘশ্বাস ছাড়া তারা জীবনে কিছুই সঞ্চয় করতে পারেননি। তাই এমন জীবন কারো কাম্য হতে পারে না। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে চাই সুন্দর স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস, ত্যাগ এবং নিষ্ঠা।
মন্তব্য : জীবনবাজি রেখে কাজে অবতীর্ণ হলে সফলতা আসবেই। তাই যথাশক্তি প্রয়োগ করলে মানুষ তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারে।