ভাবসম্প্রসারণ : পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর। (২টি )

মূলভাব : পাপের জন্যে মানুষকে শাস্তি দেয়া হয় । পাপীকে মানুষ ঘৃণা করে। সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে পাপ কাজে যারা জড়িত হয় তাদের প্রতি লোকের কোন সহানুভূতি থাকে না। তাদের কোন মর্যাদাও দেয়া হয় না। পাপ অবশ্যই শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচ্য।

সম্প্রসারিত ভাব : সামাজিক এই দৃষ্টিভঙ্গি একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়। মানুষ অনুপযুক্ত পরিবেশের দোষে নানা রকম অপরাধমূলক কাজ করে পাপী হয় । মানব সমাজে সে ঘূর্ণিত হয়। সে অভিসপ্ত জীবন যাপন করে। কিন্তু তার এ পাপ জন্মগত অপরাধ নয় । এর জন্যে সমাজ পরিবেশই দায়ী। তাই পাপী কখনো ঘৃণার পাত্র হতে পারে না; পাপটাই ঘৃণার বিষয় হতে পারে। তাই পাপীকে ঘৃণার পাত্র মনে না করে, তার পাপকে সযত্নে দূর করার উপায় বের করে মানব সমাজকে কলুষমুক্ত করতে হবে। পাপীর-পাপের জন্যে তাকে সমাজ থেকে নির্বাসন দেয়া ঠিক নয়, তাহলে পাপীরা পাপ করার প্রেরণা পাবে। পাপীর পাপ মোচনের জন্যে তাকে বুঝাতে হবে, তার হৃদয়ে পাপের কলঙ্ক ও ঘৃণা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। পাপীকে নির্মল জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দিতে হবে। পাপী হলেও সে মানুষ । সাময়িক কোন পরিবেশের কারণে হয়ত সে পাপ করেছে। এ জন্যে তাকে ঘৃণা করা মানুষ হিসেবে আমাদের ঠিক নয় । তার পাপ মোচনের চেষ্টাই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য । ভবিষ্যতে সে যেন পাপ না করে সেদিকে দৃষ্টি রেখে তাকে সংশোধনের উপায় নির্দেশ করতে হবে।

মন্তব্য : সুতরাং পাপীকে নয়, তার পাপকে ঘৃণা করা এবং পাপ দূর করে সুশীল সমাজ গড়তে হবে।

আরও পড়ুন : জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান - ভাবসম্প্রসারণ (৩টি)

এই ভাব সম্প্রসারণটি অন্য আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হলো

মূলভাব : পাপ অপবিত্র কিন্তু পাপী অপবিত্র নয়। কেননা সে পাপ দ্বারা কলুষিত। তাই পাপীকে নয়; বরং পাপকে ঘৃণা করতে হবে।

সম্প্রসারিত ভাব : পাপ পুণ্য মিলেই এ দুনিয়া। পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাবে মানুষ ইচ্ছায় অনিচ্ছায় অনেক পাপ করে থাকে। কিন্তু মানুষ সামাজিক জীব। তাই সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং করেও । কিন্তু কেউ কখনো কখনো এ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে; তখন মানুষের আচরণ হয়ে ওঠে পাশবিক। মানুষের এ পাশবিক আচরণকেই আমরা বলি পাপ। আর যে মানুষ এ পাশবিক আচরণে লিপ্ত হয় আমরা তাকে বলি পাপী। ঘৃণাই পাপীর প্রাপ্য এটাই সাধারণ ধারণা । কিন্তু মানবিক দৃষ্টিতে পাপের কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায়— বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থায় বিত্তবানের বিত্ত দেখে বিত্তহীনের লোভ জাগ্রত হয় আর তা থেকে মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হয়। তার এ পাপের জন্য দায়ী কখনো পরিবেশ, কখনো সমাজ বা অভিভাবক, কখনো বা মুহূর্তের দুর্বলতা। যে কারণে তীব্র আবেগে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। যখন সে প্রকৃতিস্থ হয়, তখন তার অনুশোচনাও হয়। গভীরভাবে এবং মানবিকভাবে বিচার করলে দেখা যাবে, হয়ত পাপী তার পাপের জন্য শুধু একাই দায়ী নয় কিংবা সে হয়ত এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না এবং সবশেষে সে অনুতপ্ত। তাই মনীষীরা বলেন, “পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়।”

মন্তব্য : পাপী বড় দুঃখী। ঘৃণার পরিবর্তে পাপীদের জন্য বেদনাবোধ করা উচিত। তাই পাপীকে ঘৃণা করা যাবে না। ঘৃণিত হবে পাপ। কেননা পাপ সবসময়ই কলুষিত ও অপবিত্র।

Post a Comment

0 Comments