যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই যাহা পাই তাহা চাই না: ভাবসম্প্রসারণ

যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই যাহা পাই তাহা চাই না ভাবসম্প্রসারণ :

মূলভাব : জগতে মানুষের সকল আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় না। যা সে চায়, তার কিয়দাংশ পূরণ হয় ।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের চাহিদার কোন শেষ নেই । বেঁচে থাকার জন্যে তার প্রয়োজন অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা। এর ওপর আছে তার মানসিক কামনা। বস্তুগত ও মানসিক এ দুটো চাওয়াই মানুষকে প্রতিনিয়িত তাড়া করে ফেরে। আকাঙ্ক্ষা পূরণই তার জীবনের একমাত্র চাওয়া। তাই বার বার ব্যর্থতা বরণ করেও সে নিভৃত্ত হতে চায় না; আর এটাই মানব চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য । তাছাড়া তার কামনার আংশিক পূরণ নিয়ে সে সন্তুষ্ট হতে চায় না। অল্প নিয়ে সে তৃপ্ত নয়, সে চায় সমগ্রকে। আবার একটা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলেই আরেকটা আকাঙ্ক্ষা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই তার অন্তরে অনন্ত হাহাকার-যা পায় তা সে চায় না, যা পায় না তাকেই সেবার বার পেতে চায় ।

মন্তব্য : অতৃপ্ত চাহিদা মানুষকে অসংযমী করে তোলে ।

আরও পড়ুন : তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন : ভাবসম্প্রসারণ

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

মূলভাব : এ জীবনে আমাদের চাওয়ারও শেষ নেই, পাওয়ারও শেষ নেই। অনেকে চেয়েও পায় না, আবার অনেকে না চাইতেই পায় । 

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের জীবনকাল ক্ষণস্থায়ী কিন্তু আকাঙ্ক্ষা অনন্ত। সেই অনন্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা কোনোদিনই পরিতৃপ্ত হওয়ার নয়। একবার মানুষ যা চায় তা পাওয়া হয়ে গেলে নতুন করে আরও কিছুর আকাঙ্ক্ষা জাগে। প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে তৃপ্তি না পেলে মানবমনে নতুন করে জাগ্রত হয় আকাঙ্ক্ষা। এ পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রবার্ট ব্রাউনিং বলেছেন- “এ জগতে প্রতিটি পদে যেন চলছে চাওয়া আর পাওয়ার লুকোচুরি। এটা চাই, সেটা চাই। নানা কিছু চাই। চাই অর্থ, চাই প্রতিপত্তি। চাই আরও নাম, যশ, খ্যাতি। পাইও ঠিক এগুলোই, তবু যেন আশা মেটে না। আজ যা চাই সে চাওয়া না মিটতেই কোথা থেকে আসে আরও আকাঙ্ক্ষা, আরও পিপাসা, আরও পাওয়ার ইচ্ছা।” আসলে মানুষ কি চায় সে নিজেই জানে না। তাই সে অনাদি অন্তহীন আকর্ষণে ঊর্ধ্বশ্বাসে এক দিগন্ত থেকে অন্য দিগন্তে ধাবিত হয়।

এ চাওয়া-পাওয়ার অসীমতা এবং গরমিলই মানুষের চিরন্তন অতৃপ্তির কারণ। তাই সে যা পায় তাতে চিত্তের ক্ষুধা মেটে না। এভাবে পার্থিব সুখের অন্তহীন অন্বেষণে মানুষ অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে মরে এবং নিজের দুঃখ বেদনার বোঝা আরো ভারী করে তোলে। বেদনা থেকে আসে হতাশা। কখনো পাওয়ার অসীম লিপ্সা কাউকে পেয়ে বসে। এ লিপ্সাকে চরিতার্থ করতে গিয়ে অন্যায় অবিচার, অনাচারের আশ্রয় নেয়। এর ফলে সে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অপরাধবোধ এবং শূন্যতা তাকে অসুখী করে তোলে। অথচ মানুষ যদি সীমিত চাওয়া-পাওয়ার মানসিকতা তৈরি করত তবে এ অতৃপ্তির দুর্বিষহ যন্ত্রণা তাকে সহ্য করতে হতো না। প্রকৃতিগত দিক থেকে এবং স্বাভাবিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে মানুষ যা পায় তাই নিয়ে যদি সন্তুষ্ট থাকত তবে এ অতৃপ্তি তার মধ্যে আসত না। অসীম আকাঙ্ক্ষাই অতৃপ্তির মূল কারণ ।

মন্তব্য : মানব হৃদয়ে পাওয়া না পাওয়ার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। এ অবিরাম ও অব্যাহত বিবর্তনশীল দ্বন্দ্বের কারণেই আজ বিকশিত মানুষের জীবন।

Post a Comment

0 Comments