ভাব সম্প্রসারণ : সাহিত্য জাতির দর্পণ স্বরূপ। (২টি )

মূলভাব : একটি জাতির সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় প্রভৃতি সামগ্রিক চিত্র সাহিত্যের মধ্যই ফুটে ওঠে। সাহিত্যের মাধ্যমেই একটি দেশ ও জাতির আশা - আকাঙ্ক্ষা, চিন্তা - চেতনা প্রকাশ ঘটে।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্মনীতি, অনুরাগ-বিরাগ, আশা, তার অন্তরের সত্য ও স্বপ্ন- এসবই সাহিত্য । দর্পণে যেমন আমাদের পূর্ণাঙ্গ মুখচ্ছবি প্রতিফলিত হয়, তেমনি সাহিত্যও একটি জাতির পরিপূর্ণ চিত্র ফুটে ওঠে। যে জাতি যতো উন্নত সে জাতির সাহিত্য ততো সমৃদ্ধ । সাহিত্যের মাধ্যমেই একটি জাতির অবস্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় । কেননা প্রত্যেক জাতির কবি সাহিত্যিকগণই তাঁদের লেখনীর নিপুণ আচড়ে সে জাতির নিজস্ব জীবন ধারা ও বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলেন। জাতীয় জীবনে আমাদের উত্থান-পতন, প্রেম-ভালবাসা, সুখ-দুঃখের কাহিনী স্বীয় বৈশিষ্ট্য সাহিত্যে ধরা পড়ে। জাতির অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য সাহিত্যের বিষয়বস্তু হিসেবে গৃহীত হয়। জাতি হিসেবে কোনো দেশের মানুষ বর্তমান বিশ্বে কতটা অগ্রসর তা সে দেশের সাহিত্য পাঠে সহজেই জানা যায় । তাই কোনো জাতিকে জানতে হলে সে জাতির সাহিত্যের সাথে পরিচিত হতে হবে।

মন্তব্য : সমাজের বা জাতির ভাবমূর্তি নির্ধারক সেই জাতির সাহিত্যজগত। জাতির সাহিত্য জগৎ যত বেশি সমৃদ্ধ সে জাতি তত বেশি উন্নত। 

আরও পড়ুন : শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড ভাবসম্প্রসারণ - (৩টি) 

এই ভাব সম্প্রসারণটি অন্য আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হলো

মূলভাব : সাহিত্য থেকে জাতিকে চেনা যায়; সাহিত্যের মধ্যে পাওয়া যায় জাতির মন মানসিকতার প্রকৃত পরিচয়। 

সম্প্রসারিত ভাব : ইতিহাসে যেসব প্রামাণ্য উপাদান রয়েছে তন্মধ্যে সাহিত্য সবচেয়ে গ্রহণযোগ । সাহিত্য নির্বাক কিন্তু সে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে মেলবন্ধনের কথা বলে। সাহিত্য পাঠে যে কোনো দেশ বা ভাষাগোষ্ঠীর জীবনধারা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, রুচি-অভিরুচি সবকিছু জানা যায়। কারণ সাহিত্যিকরা অমতীয় জীব নন। তারা সমাজ থেকে ওঠে আসেন ও সমাজ-বাস্তবতাকে স্বীকার করেই সাহিত্য রচনা করেন। একজন সামাজিক জীব হিসেবে সাহিত্যিকের চিন্তাচেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রচলিত সমাজেরই স্বরূপ প্রকাশ পায়। জীবনঘনিষ্ঠ সাহিত্য তাই যে কোনো দেশ, জাতি বা কালের স্মারকপত্র হিসেবে গণ্য হতে পারে। বিলীন অতীতে আমাদের জাতিসত্তা, জীবনধারা কেমন ছিল তা কেবল সাহিত্য পাঠেই জানতে পারি। বর্তমানকেও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হলে সাহিত্য পাঠ করতে হবে। কারণ বর্তমানের চলমান চিত্রও সিনেমার সেলুলয়েডে ধাবমান চিত্রের মতো সাহিত্যের পাতায় ফুটে ওঠে। মনীষী ইমারসন বলেছেন, “সাহিত্য হচ্ছে দেশ ও জাতির মানসের প্রতিফলন।” আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ বলেছেন, “সাহিত্য মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতির প্রতিশ্রুতি। সাহিত্য বাস্তব-নিরপেক্ষ নহে।” অর্থাৎ সাহিত্য বাস্তব জীবনকেই ধারণ করে, বাস্তবকেই নির্মাণ করে। ফলে সাহিত্যের আয়নাতেই একটি জাতির সামগ্রিক রূপকে প্রত্যক্ষ করতে হয়। পৃথিবীর তাবৎ মহৎ সাহিত্যগুলো জাতির দর্পণরূপেই অমলিন হয়ে আছে ।

মন্তব্য : একটা দেশ বা জাতির উত্থান পতন, প্রেম ভালোবাসা, সুখ-দুঃখের কাহিনী সাহিত্যে ধরা পড়ে। সুতরাং সাহিত্য কেবল কবির কবিতা ও সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্ম নয়, এটি একটি জাতির সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।

Post a Comment

0 Comments