আমাদের কথোপকথনের মৌলিক উপাদান হলো ধ্বনি। এ ধ্বনি সৃষ্টির জন্য আমরা আমাদের দেহের ফুসফুস থেকে শুরু করে মুখ ও মুখবিবরের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে থাকি। ধ্বনি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত আমাদের দেহের এ সকল অঙ্গসমূহকে একত্রে বাগযন্ত্র বলে।
সংজ্ঞা : ধ্বনি সৃষ্টি করতে আমাদের দেহের যে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সাহায্য করে, সেগুলোকে একত্রে বাগযন্ত্র বলে।
বাগ্যন্ত্রের অংশসমূহ হলো-
১- ঠোঁট বা ওষ্ঠ
২- দাঁত
৩- দন্তমূল, অগ্রদন্তমূল
৪- অগ্রতালু, শত্রুতালু
৫- পশ্চাত্তালু, নরম তালু, মূর্ধা
৬- আলজিভ
৭- জিহ্বাগ্র
৮- সম্মুখ জিহ্বা
৯- পশ্চাদ্জিহবা, জিহ্বামূল
১০- নাসা-গহ্বর
১১- স্বর পল্লব, স্বরতন্ত্রী
১২- ফুসফুস
আরও পড়ুন : ধ্বনি কাকে বলে?কত প্রকার Class(1-10)উদাহরণ সহ।কিভাবে তৈরি হয়
নিম্নে বাগযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ বর্ণনা করা হলো-
১. ঠোঁট বা ওষ্ঠ : মুখের উপরে ও নিচে অবস্থান করছে ঠোঁট। ‘প' বর্গ ধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁটের প্রয়োজন রয়েছে। ঠোঁটের অপর নাম ওষ্ঠ।
২. দাঁত : ঠোঁটের পেছনে ও উপরের সারিতে আছে দাঁত । দাঁতের পেছনের দিকে জিহবার আঘাতে 'ত' বর্গীয় ধ্বনি উচ্চারিত হয়। দাঁত না থাকলে ধ্বনির উচ্চারণ সুন্দর হতো না ।
৩. দন্তমূল : দাঁতের গোড়াকে বলা হয় দন্তমূল । দন্ত্যবর্ণ অর্থাৎ ত, থ, দ, ধ, ন, ল, স বর্ণগুলো এ দন্তমূল বা অগ্র দন্তমূল থেকে উচ্চারিত হয় ।
৪. অগ্রতালু : দাঁতের মাড়ির উপরে ধনুকের মত বাঁকা অংশকে বলা হয় অগ্র তালু বা শক্ত তালু। শক্ত তালু দ্বারা চ, ছ, জ, ঝ ইত্যাদি ধ্বনি উচ্চারিত হয়। এগুলোকে বলা হয় তালব্য ধ্বনি।
৫. পশ্চাত্তালু : শক্ত তালু থেকে আলজিভ পর্যন্ত বিস্তৃত অংশের নাম নরম তালু । এর অপর নাম পশ্চাৎ তালু । পশ্চাৎ তালু দ্বারা ক, খ, গ ঘ ইত্যাদি 'ক' বর্গীয় ধ্বনি উচ্চারিত হয়ে থাকে।
৬. আলজিভ : পশ্চাতালুর পেছনে যে একটি জিহবার মত প্রত্যঙ্গ ঝুলে থাকে, তাকে বলা হয় আলজিভ ।
৭. জিহ্বাগ্র : জিহ্বার আগাকে বলা হয় জিহবাগ। 'র' বর্ণসহ দন্ত বর্ণ জিহ্বাগ্রের সাহায্যে উচ্চারিত হয় ।
৮. সম্মুখ জিহ্বা : জিহবার উপরিভাগ হল সম্মুখ জিহ্বা । তালব্য বর্ণ এ স্থান হতে উচ্চারিত হয় ।
৯।. পশ্চাৎজিহ্বা : জিহ্বার গোড়াকে পশ্চাৎজিহ্বা বা জিহ্বামূল বলে। কণ্ঠ্য বর্ণ তথা ক, খ, গ, ঘ, ঙ -এ স্থান হতে উচ্চারিত হয়।
১০. নাসা গহ্বর : নাসা গহ্বরের অবস্থান হল গলনালির ঠিক উপরে এবং আলজিভের পেছনে। উচ্চারণ ক্ষেত্রে নাসিকার স্থান গুরুত্বপূর্ণ। অনুনাসিক ও নাসিক্য ধ্বনি নাসা গহ্বর হতে উচ্চারিত হয় ।
১১. স্বরতন্ত্রী : স্বরযন্ত্রের ভেতরে দুটি তন্ত্রী পাশাপাশি অবস্থান করে। এদেরকে বলা হয় স্বরতন্ত্রী বা স্বরপল্লব। এ দুটি স্বরতন্ত্রীর মাঝপথ দিয়ে বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করে। নিঃশ্বাস স্বরযন্ত্রের মধ্য দিয়ে বের হওয়ার সময় স্বরতন্ত্রী দুটির মধ্যে সর্বপ্রথম আঘাত করে। স্বরতন্ত্রীর নিচের দিকে রয়েছে বায়ুনালি।
১২. ফুসফুস : ফুসফুসের অবস্থান মানুষের বুকের দু'পাশে। এর প্রধান কাজ হল বাতাস নেয়া, ছেড়ে দেয়া এবং রক্ত শোধন করা।ফুসফুস থেকে বাতাস বের হওয়ার সময় বাগযন্ত্রে বাধা পেয়ে নানাবিধ ধ্বনি সৃষ্টি হয় ।