ব্যঞ্জনধ্বনি: সংজ্ঞা,প্রকারভেদ,উচ্চারণের ৫টি নিয়ম ও উচ্চারণস্থান

ব্যঞ্জনধ্বনির সংজ্ঞা : যে ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্যে উচ্চারিত হয়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় সর্বমোট ৩৯টি ব্যঞ্জনধ্বনি আছে। যেমন : ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, শ, ষ, স, হ, ড়, ঢ়, য়, ৎ, ং, ঃ, ঁ ।

ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ :

ব্যঞ্জন ধ্বনিগুলোকে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় । যথা-

১। ঘোষ ধ্বনি : ধ্বনি সৃষ্টির সময় যদি স্বরতন্ত্রীদ্বয়ে বিশেষভাবে কাঁপন সৃষ্টি হয়, তবে ধ্বনিগুলো হয় ষোষ বা নিনাদিত। এসব ধ্বনিকে ঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন- গ, ঘ, ঙ, জ, ঝ, ঞ, ড, ঢ, ণ, দ, ধ, ন, ব, ভ, ম ইত্যাদি ।

২।  অঘোষ ধ্বনি : ফুসফুস তাড়িত বাতাস যদি স্বরতন্ত্রদ্বয়ে কোন কাঁপন সৃষ্টি না করে, কেবল ছুঁয়ে যায় এবং ধ্বনির সৃষ্টি করে, তবে তাকে অঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন- ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ ইত্যাদি ।

৩।  অল্পপ্রাণ ধ্বনি : যে সব ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণ করতে অল্প পরিমাণ শ্বাস বায়ু নির্গত হয়, সেসব ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে। যেমন- ক, গ, চ, জ, ট, ড, ত, দ, প, ব ইত্যাদি।

৪। মহাপ্রাণ ধ্বনি : যে সব ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের সময় বেশি পরিমাণ শ্বাস বায়ু নির্গত হয়, সেসব ব্যঞ্জন ধ্বনিকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে । যেমন- খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ঢ, থ, ধ, ফ, ভ ইত্যাদি ।

৫। অনুনাসিক্য ধ্বনি : ঙ, ঞ, ণ, ন, ম উচ্চারণের সময় শ্বাসসহ কিছু বায়ু নাসিকা দিয়ে বের হয় বলে এগুলোকে অনুনাসিক্য ধ্বনি বলে।

আরও পড়ুন : স্বরধ্বনি: সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, উচ্চারণের ৫টি নিয়ম ও উচ্চারণস্থান

ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ।  

১। শব্দের শুরুতে যুক্তব্যঞ্জনে ব-ফলা থাকলে উক্ত ব-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন- ধ্বনি (ধোনি), জ্বালা (জালা), স্বভাব (শভাব্) ইত্যাদি। 

২। শব্দের মধ্যে বা শেষে থাকলে ম-ফলার উচ্চারণ হয় না। তবে তা আশ্রয়ী ব্যঞ্জনের স্বরধ্বনিকে কিছুটা সানুনাসিক করে। যেমন- মহাত্মা (মহাত্‌তাঁ), পদ্মা (পদ্‌দা) ইত্যাদি।

৩। শব্দের আদিতে ম-ফলার উচ্চারণ হয় না। তবে ম-ফলা আশ্রয়ী ব্যঞ্জনের স্বরধ্বনিকে সানুনাসিক করে। যেমন- শ্মশ্রু (শোঁস-স্রু ), স্মরণ (শঁরোন্), স্মারক (শাঁরোক্) ইত্যাদি।

৪। দুয়ের বেশি ব্যঞ্জনের সঙ্গে ব-ফলাযোগে গঠিত যুক্তব্যঞ্জনে ব-ফলা অনুচ্চারিত থাকে। যেমন- মহত্ত্ব (মহত্-তো), পার্শ্ব (পার্-শো) ইত্যাদি । 

৫। শব্দের মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে ম-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন- কাশ্মীর (কাশ্-মির), জ্যোতিষ্মান (জোতিশ্-মান্), সুস্মিতা (শুস্-মিতা) ইত্যাদি।

উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জন ধ্বনির শ্রেণীবিভাগ : 

উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জন ধ্বনিগুলোকে ছয় ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 

১. কণ্ঠ্য বা জিহ্বামূলীয় বর্ণ 

২. তালব্য বর্ণ

৩. মূর্ধন্য বর্ণ বা পশ্চাৎ দন্তমূলীয় বর্ণ

৪. দন্ত্য বর্ণ 

৫. ওষ্ঠ্য বর্ণ

৬. দন্তৌষ্ঠ্য বর্ণ।

আরও পড়ুন : ধ্বনি কাকে বলে?কত প্রকার Class(1-10)উদাহরণ সহ।কিভাবে তৈরি হয়

১. কণ্ঠ্য বা জিহ্বামূলীয় বর্ণ : যে সব বর্ণ জিহ্বার মূল বা পশ্চাৎ দিয়ে কণ্ঠের দিকে তালুর নরম অংশ স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়, তাদেরকে বলা হয় কণ্ঠ্য বা জিহ্বামূলীয় বর্ণ। যেমন- ক বর্গ অর্থাৎ ক, খ, গ, ঘ, ঙ।

২. তালব্য বর্ণ : যে সব বর্ণ জিহ্বার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে তালুর সামনের শক্ত স্থান স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়, তাদেরকে বলা হয় তালব্য বর্ণ। যেমন—চ বর্গ অর্থাৎ চ, ছ, জ, ঝ, ঞ। আধুনিক ভাষাবিদ এগুলোকে বলেছেন খৃষ্টবর্ণ ।

৩. মূর্ধন্য বর্ণ : যে সব বর্ণ উচ্চারণের সময় জিহ্বার সামনের দিকটা উল্টিয়ে মূর্ধার শীর্ষস্থান স্পর্শ করে, তাদেরকে মূর্ধন্য বর্ণ বলে । যেমন- ট বর্গ অর্থাৎ ট, ঠ, ড, ঢ, ণ ।

৪. দন্ত বর্ণ : যে সব বর্ণ উচ্চারণকালে জিহ্বা প্রসারিত হয়ে দাঁত স্পর্শ করে, তাদেরকে বলা হয় দন্ত বর্ণ । যেমন- ত বর্গ অর্থাৎ ত, থ, দ, ধ, ন ।

৫. ওষ্ঠ্য বর্ণ : যে সব বর্ণ উচ্চারণের সময় ঠোঁট স্পর্শ করে তাদেরকে ওষ্ঠ্য বর্ণ বলে । যেমন- প বর্গ অর্থাৎ প, ফ, ব, ভ, ম ।

৬. দন্তৌষ্ঠ্য বর্ণ : যে বর্ণ উচ্চারণকালে দাঁত ও ঠোঁট স্পর্শ করে, তাদেরকে বলা হয় দন্তৌষ্ঠ্য বর্ণ। যেমন- অন্তঃস্থ ব । 

নিচের ব্যঞ্জন ধ্বনিগুলোর উচ্চারণ স্থানসমূহ দেখানো হল-

উচ্চারণ স্থান ব্যঞ্জনধ্বনির বর্ণসমূহ উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী নাম
জিহ্বামূল ক খ গ ঘ ঙ কণ্ঠ্য বা জিহ্বামূলীয় বর্ণ
অগ্রতালু চ ছ জ ঝ ঞ শ য য় তালব্য বর্ণ
পশ্চাৎ দন্তমূল ট ঠ ড ঢ ণ য় ড় ঢ় মূর্ধন্য বা পশ্চাৎ দন্তমূলীয় বর্ণ
অগ্র দন্তমূল ওষ্ঠ্য ত থ দ ধ ন ল স দন্ত বর্ণ
ওষ্ঠ্য প ফ ব ভ ম ওষ্ঠ্য বর্ণ
দন্ত অন্তঃস্থ ‘ব’ দন্তৌষ্ঠ্য বর্ণ

✅✅✅কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা 👇

অনুনাসিক বা নাকিস্য বর্গ : ঙ, ঞ, ণ, ন, ম-এ বর্ণ কয়টি উচ্চারণ করতে নাসিকার সাহায্যের প্রয়োজন হয় বলে এগুলোকে অনুনাসিক বা নাসিক্য বর্ণ বলা হয়।  ং, ও এ শ্রেণীভূক্ত বর্ণ ।

তাড়নজাত বর্ণ : ড়, ঢ় বর্ণ দু'টি জিহ্বার অগ্রভাগ উল্টিয়ে এবং মূর্ধণ্য স্পর্শ করে জিহ্বার নিম্নভাগ দিয়ে দন্তমূলে আঘাত বা তাড়নের মাধ্যমে উচ্চারিত হয় বিধায়, এ বর্ণগুলোকে তাড়নজাত বর্ণ বলে ।

দৃষ্ট বর্ণ : ক-বর্গ, ট-বর্গ এবং প-বর্গের প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণগুলো উচ্চারণকালে মুখ গহবরের বিশেষ স্থান স্পৃষ্ট হয় বিধায়, এগুলোকে স্পৃষ্ট বর্ণ বলে।

খৃষ্ট বর্ণ : চ, ছ, জ, ঝ বর্ণগুলো উচ্চারণকালে জিহ্বা ও তালুর স্পর্শের পরেই উভয়ের মধ্যে বাতাসের ঘর্ষণজাত ধ্বনি বের হয় বিধায় এগুলোকে খৃষ্ট বর্ণ বলে ।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad