কতকগুলো ধ্বনির সাহায্যে আমরা মৌখিকভাবে মনের ভাব প্রকাশ করে থাকি। কিন্তু মনের ভাব লিখে প্রকাশ করতে হলে প্রতিটি ধ্বনির জন্য এক একটি সংকেত বা চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়। ধ্বনির পরিবর্তে ব্যবহৃত এসব সংকেত বা চিহ্নকে বর্ণ বলে। যেমন-বাংলায় অ, আ, ক, খ এবং ইংরেজিতে a, b, c, d ইত্যাদি।
সংজ্ঞা : ভাষা লিখে প্রকাশ করার জন্য যেসব সাংকেতিক চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে বর্ণ বলে। যেমন-অ, আ, ক, খ ইত্যাদি।
বর্ণের প্রকারভেদ :
বাংলা বর্ণ প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
১. স্বরবর্ণ ও
২. ব্যঞ্জনবর্ণ।
১। স্বরবর্ণ : যেসব বর্ণ অন্য বর্ণের সাহায্য ছাড়া নিজে নিজেই স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয়, সেগুলোকে স্বরবর্ণ বলে। বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণ ১১টি। যথা-
অ | আ | ই | ঈ | উ | ঊ |
ঋ | এ | ঐ | ও | ঔ | ১১টি |
ক | খ | গ | ঘ | ঙ |
চ | ছ | জ | ঝ | ঞ |
ট | ঠ | ড | ঢ | ণ |
ত | থ | দ | ধ | ন |
প | ফ | ব | ভ | ম |
য | র | ল | শ | ষ |
স | হ | ড় | ঢ় | য় |
ৎ | ং | ঃ | ঁ | ৩৯টি |
আরও পড়ুন : স্বরধ্বনি: সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, উচ্চারণের ৫টি নিয়ম ও উচ্চারণস্থান
স্বরবর্ণের প্রকারভেদ :
উচ্চারণ অনুযায়ী স্বরবর্ণ প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
১. হ্রস্বস্বর ও
২. দীর্ঘস্বর।
১। হ্রস্বস্বর : যেসব স্বরবর্ণ উচ্চারণ করতে অপেক্ষাকৃত কম সময়ের প্রয়োজন হয়, সেগুলোকে হ্রস্বস্বর বর্ণ বলে। হ্রস্বস্বর বর্ণ চারটি। যথা-অ, ই, উ, ঋ।
২। দীর্ঘস্বর : যেসব স্বরবর্ণ উচ্চারণ করতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়, সেগুলোকে দীর্ঘস্বর বর্ণ বলে। দীর্ঘস্বর বর্ণ সাতটি। যেমন-আ, ঈ, ঊ, এ, ঐ, ও, ঔ।
ব্যঞ্জন বর্ণের প্রকারভেদ :
ব্যঞ্জন বর্ণ প্রধানত তিন প্রকার । যখা-
ক. স্পর্শবর্ণ,
খ. উষ্মবর্ণ ও
গ. অন্তঃস্থবর্ণ।
ক. স্পর্শ বর্ণ : 'ক' হতে 'ম' পর্যন্ত পঁচিশটি বর্ণ উচ্চারণের সময় মুখ ও মুখ গহ্বরের কোন না কোন অংশ স্পর্শ করে উচ্চারিত হয় বলে সেগুলোকে স্পর্শ বর্ণ বলে ।
খ. উষ্মবর্ণ : 'উষ্ম' শব্দের অর্থ হলো নিঃশ্বাস । যে সকল বর্ণ উচ্চারণের সময় মুখের ভেতর অনেক্ষণ পর্যন্ত নিঃশ্বাস থাকে, তাদেরকে উষ্মবর্ণ বলে। বাংলা ভাষায় এরূপ বর্ণ চারটি। যথা- শ, ষ, স ও হ। এ বর্ণগুলো উচ্চারণের সময় শিস ধ্বনি হয় বলে এগুলোকে শিস বর্ণও বলা হয়।
গ. অন্তঃস্থ বর্ণ : 'অন্তঃস্থ' শব্দের অর্থ মাঝামাঝি । যে সকল বর্ণ স্পর্ষ বর্ণ ও উষ্মবর্ণের মাঝামাঝি অবস্থিত, সেগুলোকে অন্তঃস্থ বর্ণ বলে। এরূপ বর্ণ চারটি। যথা- য, র, ল, ব।
আরও পড়ুন : ব্যঞ্জনধ্বনি: সংজ্ঞা,প্রকারভেদ,উচ্চারণের ৫টি নিয়ম ও উচ্চারণস্থান
✅উচ্চারণের রীতি অনুসারে ব্যঞ্জন বর্ণসমূহকে আরও কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
ক. বর্গীয় বর্ণ : 'ক' হতে 'ম' পর্যন্ত এই পঁচিশটি বর্ণ পাঁচটি বর্গের কোন না কোন বর্গের অন্তর্গত বলে, এগুলোকে বর্গীয় বর্ণ বলা হয় ৷
খ. অবর্গীয় বর্ণ : বর্গীয় পঁচিশটি বর্ণ ছাড়া অবশিষ্ট বর্ণসমূহকে অবর্গীয় বর্ণ বলে। যেমন- শ, ষ, স, হ, য, র ইত্যাদি ।
গ. অল্পপ্রাণ বর্ণ : যে সকল বর্ণ উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাসের বাতাসের চাপ কম থাকে, তাদেরকে অল্পপ্রাণ বর্ণ বলে । বর্গের প্রথম ও তৃতীয় বর্ণ অল্পপ্রাণ বর্ণ। যেমন- ক, গ, চ, জ, ট, ড, ত, দ, প, ব ইত্যাদি ।
ঘ. মহাপ্রাণ বর্ণ : যে সকল বর্ণ উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাসে বাতাসের চাপ বেশি থাকে, তাদেরকে মহাপ্রাণ বর্ণ বলে। বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণ মহাপ্রাণ বর্ণ। যেমন- খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ঢ, থ, ধ, ফ, ভ ইত্যাদি ।।
ঙ. ঘোষ বর্ণ : যে সব বর্ণ উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী কেঁপে উঠে, সেগুলোকে ঘোষ বর্ণ বলে। বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ ঘোষ বর্ণ। যেমন- গ, ঘ, ঙ; জ, ঝ, ঞ; ড, ঢ, ণ; দ, ধ, ন, ব, ভ, ম। এছাড়া য, র, ল, হ বর্ণগুলোও ঘোষ বর্ণ ।
চ. অঘোষ বর্ণ : যে সব বর্ণ উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী কাপে না, সেগুলোকে অঘোষ বর্ণ বলে। বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণ অঘোষ বর্ণ । যেমন- ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ; ত, থ, প, ফ । এছাড়া 'ষ' বর্ণটিও অঘোষ বর্ণ ।
ছ. অযোগবাহ বর্ণ : ং (অনুস্বর) ও ঃ (বিসর্গ) বর্ণ দুটো অন্য বর্ণের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে উচ্চারিত হতে পারে না বলে এদেরকে অযোগবাহ বর্ণ বলে। (চন্দ্রবিন্দু)ও এ ধরনের একটি বর্ণ। অন্য বর্ণের আশ্রয়ে উচ্চারিত হয় বলে এদের আশ্রয়স্থানভোগী বা পরাশ্রয়ী বর্ণও বলা হয়।
আরও পড়ুন : ধ্বনি কাকে বলে?কত প্রকার Class(1-10)উদাহরণ সহ।কিভাবে তৈরি হয়
ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের নিয়ম :
১। চ-বর্গের বর্ণের (চ, ছ, জ, ঝ) আগে যুক্তব্যঞ্জন হিসেবে ব্যবহৃত ঞ-র উচ্চারণ ন-এর মতো। যেমন : মঞ্চ [মন্চো], গঞ্জ [গন্-জো], লাঞ্ছনা [লান্ছোনা], ঝঞ্ঝা [ঝন্ঝা] ইত্যাদি ।
২। প্রমিত বাংলায় স্বরধ্বনিযুক্ত 'ও' উচ্চারণে 'গ' প্রভাবিত হয় না। যেমন- আঙুল [আঙুল্] রাঙা [রাঙা), বাঙালি [বাঙালি] ।
৩। শব্দের শেষে হলন্ত ঢ়-এর উচ্চারণ অপ্রাণ হয় এবং তা 'ড়' হয়ে যায়। যেমন- আষাঢ় [আশাড়্]।
৪। ন-ফলা, ল-ফলা যুক্ত শ-এর উচ্চারণ স হয়। যেমন- প্রশ্ন [প্রোস্-নো], অশ্লীল [অস্-স্লিল্]।
৫। বাংলা শব্দে ক্ থেকে সন্ধির সূত্রে আগত 'গ'-এর সঙ্গে 'ব’- ফলা যুক্ত হলে সেক্ষেত্রে 'ব'-এর উচ্চারণ প্রায়ই অক্ষত থাকে। যেমন- দিগ্বিদিক (দিগ্-বিদিক্), দিগ্বধূ (দিগ্ববোধু), দিগ্বসনা (দিগ্বশোনা) ইত্যাদি ।
FAQs
১। স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে কি বলে ?
উত্তর :স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে 'সংক্ষিপ্ত স্বর' বা 'কার' বলা হয়।
২। স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ কয়টি ?
উত্তর : স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ ১০টি । শুধমাত্র অ- এর কোনো 'কার' বা সংক্ষিপ্ত রূপ নেই।
৩। মৌলিক স্বরবর্ণ কয়টি ?
উত্তর : বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরবর্ণ রয়েছে সাতটি। যথা -অ, আ, ই, উ, এ, ও , অ্যা।
৪। মাত্রাহীন স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ কয়টি ?
উত্তর : বাংলা বর্ণমালায় সর্বমোট মাত্রাহীন বর্ণ হচ্ছে ১০টি। ( সরবর্ণে ৪ টি - এ, ঐ, ও, ঔ এবং ব্যঞ্জনবর্ণে ৬ টি - ঙ, ঞ, ৎ, ং, ঃ, ঁ)
৫। অর্ধমাত্রার স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ কয়টি?
উত্তর : অর্ধমাত্রার বর্ণ হলো সর্বমোট ৮ টি ( স্বরবর্ণ ১টি - ঋ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ ৭ টি - খ, গ, ণ, থ, ধ, প, শ)।
৬। ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে কি বলে ?
উত্তর : ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ফলা বলা হয়।
৭। ব্যঞ্জনবর্ণের ফলা কয়টি ?
উত্তর :বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের ফলা চিহ্ন হলো ৬টি: ন -ফলা, ম-ফলা, য-ফলা, র-ফলা, ল-ফলা, ব-ফলা।
৮। স্পর্শ বর্ণ কয়টি ?
উত্তর : স্পর্শ বর্ণ হলো সর্বমোট ২৫টি। ক থেকে ম পর্যন্ত এই ২৫টি বর্ণকে স্পর্শ বর্ণ বলা হয়।
আরও পড়ুন : মাত্রা,কার ও ফলা কাকে বলে?কয়টি।কার,ফলা চিহ্ন দিয়ে শব্দ গঠন