ট্রেন দুর্ঘটনা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রচনাকর।
অথবা, ট্রেন দুর্ঘটনা সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।
আখাউড়ায় ট্রেন সংঘর্ষ : নিহত ৪০, আহত শতাধিক, বগি লাইনচ্যুত
নিজস্ব প্রতিবেদক- আখাউড়া থেকে, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। গতকাল রোববার ভোর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের আখাউড়া রেল জংশনের হোম সিগন্যালের অভ্যন্তরে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। আখাউড়া জংশন থেকে এক কিলোমিটার দূরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে এ সংঘর্ষে ৪০ জন নিহত এবং শতাধিক লোক আহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধারের কাজ চলছিল। এতে দুটি ট্রেনের ইঞ্জিন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং উভয় ট্রেনের ১০টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে মেইন লাইনের ৫০০ ফুট রেলপাত দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
রোববার রাত ১২.০০টায় চট্টগ্রাম থেকে যথারীতি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে ঊর্মি-অরুণা এক্সপ্রেস। অপরদিকে রাত ১.৩০টায় ঢাকার কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় গোধুলী-০০২ এক্সপ্রেস। নিয়ম অনুযায়ী আখাউড়ার শাল্লাপাড়ার ক্রসিংয়ে দুটি ট্রেন পরস্পরকে অতিক্রম করার কথা। কিন্তু কর্তব্যরত সিকিউরিটির অসতর্কতা এবং লাইন সিগন্যালম্যানের ভুল নির্দেশনার কারণে ট্রেন দুটি একই লাইনে অগ্রসর হতে থাকে। এর ফলেই এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৪টার দিকে একটি গগনবিদারী আওয়াজ এবং নারী-পুরুষ-শিশুর আহাজারিতে এলাকাবাসীর ঘুম ভেঙে যায়। দ্রুতগতিতে চারপাশের লোকজন ছুটে এসে ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ৩০ জন। গুরুতর আহতদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যায় আরো ১০ জন। যারা চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ দুর্ঘটনার ফলে প্রায় ২৪ ঘণ্টা উভয়দিকের ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পতিত হয়।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে কন্ট্রোল অফিসার, সিকিউরিটি অফিসার এবং সিগন্যালম্যানসহ মোট পাঁচজনকে বরখাস্ত করেছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের জন্য তারা ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এদিকে ঢাকা থেকে একটি উদ্ধারকারী ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছিয়েছে। তবে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চার ঘণ্টা পর উদ্ধার কাজ শুরু হয়। আশা করা যায়, আগামীদিনের মধ্যেই উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করে পুনরায় ট্রেন চলাচল সচল করা সম্ভব হবে। পদস্থ রেলওয়ে কর্মকর্তাগণ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ডি.সি, এস.পি এবং স্থানীয় এমপি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তার সঠিক তদন্তের নির্দেশ দেন।
আরো পড়ুন : প্রতিবেদন : সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার
একটি ট্রেন দুর্ঘটনা সম্পর্কে রেল মন্ত্রণালয়ের বরাবর একটি প্রতিবেদন তৈরি কর ।
তারিখ : ২০শে এপ্রিল ২০১৯
বরাবর
মাননীয় মন্ত্রী
রেল মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা ।
বিষয় : ট্রেন দুর্ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবেদন ৷
সূত্র : স্মারক নং- বা. স.; ১৯/০৪/২০১৯
জনাব
উল্লিখিত বিষয় ও সূত্রের মর্মানুসারে জানানো যাচ্ছে যে, আমি ১৭ই এপ্রিল ১৯ তারিখে ঢাকা-সিলেট আন্তঃনগর ট্রেনের দুর্ঘটনা সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্যানুসন্ধান করেছি । আপনার অবগতির জন্য নিচে একটি প্রতিবেদন পেশ করা হলো ।
সিলেটগামী ট্রেন মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার
গত ১৭ই এপ্রিল ঢাকা থেকে সিলেটগামী ভৈরব স্টেশন থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে এক মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় ৫০ জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয় । আন্তঃনগর ট্রেন (নং-০৫২৫) রেলক্রসিং-এ অবস্থানরত একটি মালবাহী ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে এ মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে । অনুসন্ধানে জানা গেছে—
১. ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটি আশুগঞ্জের কাছে রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় একটি মালবাহী ট্রাককে ধাক্কা দিলে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ কয়েকটি বগি পাশের খাদে পড়ে যায় । তখন বিকট শব্দ আর মানুষের আর্তনাদ আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হয় । সঙ্গে সঙ্গেই আশপাশ এলাকার লোকজন ছুটে আসে । ঘটনাস্থলেই ৩৫ জন মারা যায় । গুরুতর আহতদের আশুগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । হাসপাতালে নেওয়ার পর ১৫ জনের মৃত্যু ঘটে । আর শতাধিক ব্যক্তি মারাত্মকভাবে আহত হয় । তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অঙ্গহানি ঘটে ।
২. একজন যাত্রী ও দুজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান- ট্রেনটি যখন ক্রসিং পার হতে যাচ্ছিল তখন আড়াআড়িভাবে একটি মালবাহী ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ব-০৩২৫) পার হচ্ছিল । ট্রেনের চালক ট্রেনটি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেও পারেননি ।
৩. প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যখন ট্রেন আসার সময় হয় তখন ক্রসিং বন্ধ থাকার নিয়ম । অথচ দায়িত্বে নিয়োজিত ক্রসিং গার্ড স্ব- স্থানে ছিলেন না । ক্রসিং গার্ড-এর অসতর্কতার কারণেই এ-মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে । ফলে স্থানীয় লোকদের চাপে পড়ে ক্রসিং গার্ডকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার নম্বর ০৯ ।
৪. রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে ক্রসিং গার্ডকে বরখাস্ত করেছে । কেননা তার কর্তব্যে অবহেলার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয় । পরবর্তীতে ঘটনাটি আরও খতিয়ে দেখার জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ।
৫. দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ হাসপাতালে মর্গে এনে রাখা হয় । আর আহতদের ভালোভাবে চিকিৎসা করা হয়। আশপাশের জেলায় সংবাদ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে লোকজন ঘটনাস্থলে আসতে শুরু করে। নিহতদের আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। এ হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে সকলের মধ্যেই শোকের ছায়া নেমে আসে ।
৬. স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসক ও পৌরসভা চেয়ারম্যান দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নিহতদের লাশ শনাক্ত করে নিজ নিজ গ্রামের বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন । সেই সঙ্গে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন ।
প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা : আব্দুল বাতেন, আশুগঞ্জ ।
প্রতিবেদনের শিরোনাম : সিলেটগামী ট্রেন মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার ।
প্রতিবেদন তৈরির সময় : সকাল ১০টা