গঠনের মাধ্যমেই শব্দ আকার পায় ও অর্থ প্রকাশ করে থাকে। বাংলা ভাষায় নতুন শব্দগঠনের বিভিন্ন নিয়ম পরিলক্ষিত হয়।
শব্দ গঠন কাকে বলে ?
উৎপত্তিগতভাবে সাধিত শব্দই শব্দগঠনের মৌলিক প্রকার, যা নতুন শব্দ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। শব্দের অর্থ-বৈচিত্র্য এবং ব্যবহারউপযোগী করে তোলার জন্য শব্দ তৈরির প্রক্রিয়াকে শব্দগঠন বলে।
বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের প্রয়োজনীয়তা
বাংলা ভাষার শব্দগঠনের প্রয়োজনীয়তা নিচে তুলে ধরা হলো:
ক. শব্দগঠনের নিয়ম জানা থাকলে বহুল প্রচলিত শব্দের সাহায্যে নতুন শব্দগঠন করে সহজ ও শ্রুতিমধুর করে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। যেমন- লোকটির দুরবস্থা (= দুঃ + অবস্থা) জেনে রফিক সাহেব তাকে কিছু অর্থ দিয়ে সাহায্য করলেন। লোকটির আর্থিক (= অর্থ + ইক) মুক্তির জন্য নয়; বরং মানবীয় (= মানব+ ঈয়) কারণেই তাকে সাহায্য করেছেন।
খ. শব্দের সংখ্যা যে ভাষায় যত বেশি থাকে, সে ভাষা তত বেশি সমৃদ্ধ হয়। শব্দের ভান্ডার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উপায়ে শব্দগঠন করার প্রয়োজনীয়তা অধিক।
গ. কোনো নির্দিষ্ট শব্দ কীভাবে গঠিত হয় তা জানলে শব্দটি ব্যাকরণগত কোন শ্রেণিতে পড়ে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়। যেমন- ‘ধর্ম’ শব্দটি বিশেষ্য। এর সাথে বিশেষণবাচ্য ‘ঈয়’ প্রত্যয় যোগ হয়ে সৃষ্টি হয়েছে ‘ধর্মীয়’ (অর্থাৎ ধর্ম + ঈয়)।
এ রকম: আত্ম > আত্মীয়; গোত্র > গোত্রীয়; জাতি > জাতীয়; করণ > করণীয়; কেন্দ্র > কেন্দ্রীয় ইত্যাদি। এভাবে আমরা বিশেষণবাচক শব্দ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি।
ঘ. শব্দগঠনের ক্ষেত্রে ব্যাকরণের নিয়ম যে সর্বত্র অনুসৃত হয় না, ক্ষেত্রবিশেষে নিয়মের শিথিল প্রয়োগ ঘটে সে সম্পর্কেও ধারণা লাভ করা যায়। যেমন-উদীয়মান, বিরাজমান প্রভৃতি শব্দের অনুসরণে গঠিত হয়েছে ‘চলমান’ শব্দটি। (উদীয়মান রাজনীতিবিদরা দেশের বিরাজমান সংকটের কথা ভেবে চলমান
আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।)
ঙ. শব্দগঠনের ফলে বানান ও উচ্চারণগত পরিবর্তন হয়ে থাকে। ফলে, শব্দগঠন জানা থাকলে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা হয়।