ইমাম মালেক রহঃ এর জীবনী – pdf

ফিকহে ইসলামী সংকলন ও মাযহাব প্রবর্তন করে যে সকল ব্যক্তিত্ব মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন, ইমাম মালেক ইবনে আনাস (রা) তাঁদের অন্যতম। হিজরী প্রথম শতাব্দীর শেষদিকে শিয়া ও খারেজীদের আকিদাগত দ্বন্দ্ব ও মুতাযিলাদের যুক্তিবাদী মতবাদে সর্বসাধারণ যখন বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল, ঠিক সে মুহূর্তে এমন একজন মহামনীষীর আগমন ঘটে ধূলির ধরায়। নিম্নে এ ক্ষণজন্মা কালজয়ী মহামনীষীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও ইলমে ফিকহে তাঁর আচরিত পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক আলোকপাত করা হলো।

ইমাম মালেক রহঃ এর জীবনী :

ইমাম মালেক (র)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত নিম্নরূপ-

১. পরিচিতি : তাঁর নাম মালেক, পিতার নাম আনাস, উপনাম আবু আবদুল্লাহ, উপাধি ইমামু দারিল হিজরত, নসবনামা মালেক ইবনে আনাস ইবনে মালেক ইবনে আবু আমের (রা)। ইমাম মালেক (র)-এর প্রপিতামহ আবু আমের (রা) রাসূল (স)-এর সাহাবী ছিলেন। তিনি বদর ছাড়া বাকি সকল যুদ্ধেই রাসূল (স)-এর সাথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

২. জন্ম : ইমাম মালেক (র) ৯৩ অথবা ৯৪ মতান্তরে ৯৫ হিজরী মোতাবেক ৭১৫ খ্রিস্টাব্দে খলিফা ওয়ালিদ ইবনে মালেকের শাসনামলে মদিনায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

৩. শৈশবকাল : ইমাম মালেক (র)-এর শৈশবকাল অতিবাহিত হয় জন্মভূমি মদিনাতেই। এ সময়ে তিনি মাতা আলেয়া বিনতে শরীফ (র)-এর পরম অপত্যস্নেহে শিক্ষানুকূল ইসলামী পরিবেশে বেড়ে উঠতে শুরু করেন।

৪. প্রাথমিক শিক্ষা : তাঁর শিক্ষাজীবনের শুভ সূচনা মাতা আলেয়া বিনতে শরীফের কাছে। তাঁর পিতা, পিতামহ ও পিতৃব্য সবাই প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ছিলেন। সেই সুবাদে বাল্যকাল থেকেই তিনি তাঁদের নিকট হাদীসশাস্ত্রে শিক্ষালাভ করেন।

আরো পড়ুন : ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর জীবনী ও ফিকহে শাফেয়ীর বৈশিষ্ট্যাবলি-pdf

৫. ইলমুল হাদীসের উচ্চতর ডিগ্রিলাভ : প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনান্তে তিনি হাদীসশাস্ত্রে উচ্চতর জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করেন। এ সময়ে তিনি প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আবদুর রহমান ইবনে হরমুজ (র)-এর নিকট হাদীস অধ্যয়ন করেন। তিনি বহুসংখ্যক উস্তাদের নিকট থেকে হাদীস শিক্ষালাভ করেন। তাঁদের অন্যতম হলেন-
ক. ইমাম যুহরী, খ. নাফে, গ. ইবনে যাকওয়ান, ঘ. ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ, ঙ. মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির, চ. হিশাম ইবনে ওরওয়া ও ছ. যায়েদ ইবনে আসলাম প্রমুখ ।

৬. ফিকহশাস্ত্রের জ্ঞানার্জন : হাদীসশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জনের পরপরই তিনি ফিকহশাস্ত্রে চর্চা শুরু করেন। হিজাযের প্রখ্যাত ফকীহ রবীয়াতুর রায় (র)-এর নিকট ফিকহশাস্ত্র অধ্যয়ন আরম্ভ করেন। এছাড়া তিনি তৎকালীন মদিনার সাতজন বিখ্যাত ও বিশিষ্ট ফকীহের নিকট ফিকহশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।

৭. শিক্ষকমণ্ডলী : ইমাম মালেক (র) অসংখ্য শিক্ষকের নিকট জ্ঞানার্জন করেন। শাহ ওয়ালীউল্লাহ (র) তাঁর উস্তাদের সংখ্যা ৯৪ জন উল্লেখ করেছেন। আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী (র) তাঁর হাদীসের উস্তাদের সংখ্যা লিখেছেন ৯০০ জন।

৮. অধ্যাপনা : হাদীস ও ফিকহশাস্ত্রে গভীর জ্ঞানার্জনের পর তিনি দারস ও ফতোয়াদানে আত্মনিয়োগ করেন। মাসজিদে নববীতে বসেই তিনি শিক্ষাদান করতেন। মিসর ও আফ্রিকাসহ দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসে তাঁর নিকট হাদীস ও ফিকহ শিক্ষা লাভের জন্য ভিড় জমাতে থাকে ।

১. ছাত্রবৃন্দ : দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার ছাত্র এসে তাঁর নিকট হতে হাদীস ও ইলমে ফিকহের দারস নিতেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ছাত্র হলেন- ক. ইমাম শাফেয়ী (র), খ. আবদুর রহমান ইবনুল মুবারক (র), গ. ইবনে জুরাইজ আল আওযায়ী প্রমুখ ।

১০. মুয়াত্তা সংকলন : হাদীস সংকলনে ইমাম মালেক (র)-এর ভূমিকা অতুলনীয়। বিশ সহস্রাধিক হাদীস থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মাত্র ১৭২০টি হাদীসের সমন্বয়ে প্রথম হাদীস সংকলন মুয়াত্তা প্রণয়ন করেন। বস্তুত মুয়াত্তাগ্রন্থ প্রণয়নের পর তাঁর খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে ।

আরো পড়ুন : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এর জীবনী – pdf

১১. মাযহাব প্রতিষ্ঠা : ইমাম মালেক (র)-এর শিষ্যবর্গ তাঁর ফতোয়া, মাসয়ালা ও গবেষণাকর্মসমূহকে একত্র করে কি এর নামে অভিহিত করেন। চার মাযহাবের মধ্যে এটি অন্যতম। মক্কা, মদিনা, হেজায ও মিসরের বহু লোক তাঁর মাযহাবের অনুসারী।

১২. অন্যায়ের প্রতিবাদ ও নির্যাতনের শিকার : তাঁর জীবনী থেকে জানা যায় যে, শরীয়তবিরোধী কার্যাবলি রোধে তিনি আব্বাসীয় খলিফা মনসুরের বিরুদ্ধে ফতোয়া প্রদান করেন। যার ফলশ্রুতিতে তাঁর ভাই জাফর তাঁকে দরবারে ডেকে এনে নির্মমভাবে ৭০টি বেত্রাঘাত করে। পরে অবশ্য খলিফা মনসুর তাঁর প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতি প্রদর্শন করেছিলেন।

১৩. হাদীসে রাসূলের আদব ও তাযীম : তাঁকে ফিকহশাস্ত্রের কোনো মাসয়ালা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সাথে সাথে তার উত্তর দিতেন; কিন্তু কোনো হাদীস জিজ্ঞেস করা হলে প্রথমে গোসল করে উত্তম পোশাক পরতেন এবং গায়ে খোশবু লাগাতেন। অতঃপর উচ্চ আসনে বসে অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধাভরে গাম্ভীর্যের সাথে হাদীস বর্ণনা করতেন।

১৪. চরিত্র ও কৃতিত্ব : ইমাম মালেক (র) আল্লাহভীরু ও পরহেযগার লোক ছিলেন। রাসূল (স)-এর প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অফুরন্ত। তিনি মদিনা ছেড়ে কোথাও যেতেন না, যেন মদিনার মাটি তার নসীব হয়। তাঁর সত্যনিষ্ঠা, অগাধ পাণ্ডিত্য ও ইবাদতপ্রিয়তা তাঁকে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেছে।

১৫. ইন্তেকাল : জাতিকে একটি গৌরবোজ্জ্বল দিকনির্দেশনা উপহার দিয়ে ৮৬ বছর বয়সে ১৭৯ হিজরীতে এ মহামনীষী মদিনায় ইন্তেকাল করেন। মদিনার জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

উপসংহার : ইলমে ফিকহের সুবিশাল পরিমণ্ডলে ইমাম মালেক (র) এক কিংবদন্তী মহাপুরুষ। তাঁর প্রতিভাদীপ্ত মৌলিক গবেষণা ফিকহশাস্ত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের মণিকোঠায় অত্যন্ত শ্রদ্ধার আসনে সমাসীন। ইলমে ফিকহে তাঁর অবদান চিরদিন অক্ষয় ও অম্লান হয়ে থাকবে।

আরো পড়ুন : কুদুরী গ্রন্থ প্রণেতার জীবনী ও কুদুরী গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment