উসুলুল ফিকহ ইসলামী শরীয়তের মূলনীতি কুরআন ও হাদীসের সারবত্তা রূপ। ইসলামের যাবতীয় মাসয়ালার সমাধান উসুলুল ফিকহ -এর মাধ্যমেই করা হয়েছে। পার্থিব কোনো দিক বা বিভাগের বর্ণনা এতে বাদ দেয়া হয়নি। সুতরাং ইসলামী সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণে এর ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।
উসূলুল ফিকহ এর পরিচয় : উসূলবিদগণের মতে, উসুলুল ফিকহ -এর সংজ্ঞা দু’ভাবে উপস্থাপন করা যায় । যথা-
- সম্বন্ধপদীয় সংজ্ঞা ।
- পদবীপদীয় সংজ্ঞা ।
১. সম্বন্ধপদীয় সংজ্ঞা : বাক্যস্থিত মুযাফ এবং মুযাফ ইলাইহি-এর পৃথক পৃথক পরিচয় প্রদান হলো সম্বন্ধপদীয় সংজ্ঞা।
উসুলুল ফিকহ দুটি পদ নিয়ে গঠিত। এখানে উসূল শব্দটি মুযাফ এবং ফিকহ শব্দটি মুযাফ ইলাইহি। নিম্নে উভয়ের পৃথক পৃথক সংজ্ঞা প্রদান করা হলো-
ক. উসূল ( أُصُول ) -এর আভিধানিক অর্থ : أُصُول শব্দটি বহুবচন, এর একবচন হচ্ছে أَصْل; এর আভিধানিক অর্থ-
১. মূল, গোড়া, ভিত্তি।
২. আল্লামা মোল্লাজিউন (র) বলেন- যার উপর অন্য বস্তুর ভিত্তি স্থাপিত হয়।
৩. আল্লামা রাগেব ইস্পাহানী (র) বলেন, أُصُول শব্দের অর্থ— মূল । যেমন- اَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ .
8. Dictionary of modern Arabic এর মতে, এর অর্থ হলো- Root, Foundation, Origin ইত্যাদি।
আরো পড়ুন : উসূলে ফিকহের উৎস কয়টি ও কি কি এবং উসূলে ফিকহের গুরুত্ব
খ. أُصُول -এর পারিভাষিক সংজ্ঞা : أَصْل শব্দটি ব্যবহারিক ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত চারটি অর্থে ব্যবহার হয় । যথা-
১. رَاجِحٌ তথা অগ্রগণ্য। যেমন- সুন্নাতের তুলনায় কিতাবুল্লাহ অগ্রগণ্য।
২. دَلِيل তথা প্রমাণ । যেমন-রোযা পূর্ণ কর- আয়াতটি রোযা ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ ।
৩. اِسْتِصْحَاب তথা মূল স্বভাব। যেমন- পানির মূল স্বভাব হচ্ছে পবিত্রতা।
৪. قَاعِدَةٌ তথা নিয়ম। যেমন- মাফউল মানসূব হওয়া, এটা আরবি ব্যাকরণের একটি নিয়ম ।
ক. ফিকহ -এর আভিধানিক অর্থ : শব্দগত দিক থেকে فِقْه শব্দটি বাবে سَمِعَ يَسْمَعُ এর মাসদার। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- তথা সূক্ষ্ম জ্ঞান, গভীর জ্ঞান, সূক্ষ্মদর্শিতা, বিদীর্ণ করা, উপলব্ধি করা, হৃদয়ঙ্গম করা ইত্যাদি।
খ. فِقْه -এর পারিভাষিক সংজ্ঞা : শরীয়তের হুকুম আহকামকে দলীলসহ বিস্তারিত জানা ও বোঝাকে عِلْمُ الْفِقْهِ বলা হয়।
২. পদবিপদীয় সংজ্ঞা : মুযাফ ও মুযাফ ইলাইহি উভয়ের একত্রে সংজ্ঞা প্রদান করাকে পদবিপদীয় সংজ্ঞা বলা হয়।
১. আল্লামা নিযামুদ্দীন শাশী (র) বলেন- উসূলে ফিক্হ এমন কতকগুলো নিয়ম পদ্ধতির সমষ্টির জ্ঞানকে বলা হয়, যার দ্বারা শরীয়তের হুকুমগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে প্রমাণ দ্বারা উদ্ঘাটন করা যায় ।
২. আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বিহারী (র) বলেন- উসূলুল ফিক্হ এমন কতগুলো নীতিমালা শিক্ষা করার নাম, যার মাধ্যমে বিস্তারিত প্রমাণাদির সাহায্যে শরীয়তের বিধানাবলি উদ্ঘাটন করা যায় ।
আরো পড়ুন : উসূলে ফিকহের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
উসূলুল ফিকহ সংজ্ঞা : উসূলুল ফিকহ এর আভিধানিক অর্থ হলো ফিকহ এর ভিত্তি বা মূলনীতি। যে শাস্ত্রে বিধান বলির অনুকূলে দলিল স্থিরকরণ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়। ঐ শাস্ত্রকে উসূলুল ফিকহ বলে।
উসূলুল ফিক্হ এর আলোচ্য বিষয় :
উসূলে ফিক্হ চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে । যথা-
১. আল কুরআন।
২. আল হাদীস ।
৩. উম্মতের ঐকমত্য।
৪. অনুমান, তুলনামূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ।
এ ছাড়াও কেউ কেউ দলীল চতুষ্টয়ের সাথে আহকাম কে আলোচ্য বিষয়ের মাঝে শামিল করেছেন।
উসূলুল ফিক্হ এর উদ্দেশ্য :
উসূলুল ফিক্হ এর উদ্দেশ্য হলো-
১. শরীয়ত সম্পর্কে জানা।
২. আমল করা।
৩. দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের মুক্তি অর্জন করা।
আরো পড়ুন : উসূলুশ শাশী গ্রন্থকারের জীবনী