প্রস্বেদনের প্রভাবকসমূহ
যেসব কারণে প্রস্বেদনের হারের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে সেগুলোকে প্রস্বেদনের প্রভাবক বলা হয়। প্রস্বেদনের প্রভাবকসমূহকে দুভাগে ভাগ করা যায়, যথা-ক. বাহ্যিক প্রভাবক এবং খ. অভ্যন্তরীণ প্রভাবক ।
ক বাহ্যিক প্রভাবক :
১. আলো : প্রস্বেদন হারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাবক হচ্ছে আলো। আলোর উপস্থিতিতে পত্ররন্ধ্র খুলে যায় এবং আলোর অনুপস্থিতিতে পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়। এছাড়া আলোর তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্পর্ক বিদ্যমান ।
বেশি তাপমাত্রায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা হ্রাস পায় ফলে প্রস্বেদন বাড়ে । আলোর তীব্রতা কম হলে তাপমাত্রা কমে; তাপমাত্রা কমলে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যায়। ফলে প্রস্বেদনের হারও কম হয়।
২. তাপমাত্রা : তাপমাত্রা বাড়লে বায়ুর আর্দ্রতা কমে ফলে প্রস্বেদন হার বাড়ে। তাপমাত্রা কমলে বায়ুর আর্দ্রতা বেড়ে যায় অর্থাৎ বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে প্রস্বেদন হারও কমে যায় ।
৩. আর্দ্রতা : প্রস্বেদনের হার বায়ুর আর্দ্রতার পরিমাণের সাথে বিপরীতভাবে উঠানামা করে। অর্থাৎ বায়ুর আর্দ্রতা কম হলে প্রস্বেদন বেশি হয় এবং আর্দ্রতা বেশি হলে প্রস্বেদন কম হয় । সংক্ষেপে বলা যায় আর্দ্রতা বাড়লে প্রস্বেদন হার কমে এবং আর্দ্রতা কমলে প্রস্বেদন হার বাড়ে।
৪. বায়ুচাপ : বায়ুচাপ কম হলে প্রস্বেদন বেশি হয় এবং বায়ুচাপ বেশি হলে প্রস্বেদন কম হয় ।
৫. বায়ু প্রবাহ : বায়ু শান্ত থাকলে প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদের চারপাশে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়তে থাকে । ফলে প্রস্বেদনের হার ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। বায়ু প্রবাহ থাকলে আর্দ্র বায়ুর স্থান শুষ্ক বায়ু দখল করে নেয় বলে প্রস্বেদনের হার বৃদ্ধি পায় ৷
৬. মাটিস্থ পানি : মাটিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকলে উদ্ভিদ বেশি পানি শোষণ করতে পারে। কাজেই প্রস্বেদনও বেশি হয় ।
খ. অভ্যন্তরীণ প্রভাবক
উদ্ভিদদেহের অভ্যন্তরস্থ যেসব কারণে প্রস্বেদনের হার প্রভাবিত হয় সেগুলোকে প্রস্বেদনের অভ্যন্তরীণ প্রভাবক বলা হয়। এদের ভূমিকা নিচে উল্লেখ করা হলো।
১. পত্ররন্ধ্র : পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদনের প্রধান অঙ্গই হচ্ছে পত্ররন্ধ্র। কাজেই পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা, অবস্থান, বিস্তার, রক্ষীকোষের গঠন, রন্ধ্রের আয়তন ইত্যাদির উপর প্রস্বেদন হার নির্ভরশীল ।
পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা যত বেশি হবে প্রস্বেদন হারও তত বেশি হবে। পত্ররন্ধ্রের অবস্থানও প্রস্বেদন হারকে প্রভাবিত করে। লুক্কায়িত (sunken) পত্ররন্ধ্র অপেক্ষা স্বাভাবিক পত্ররন্ধ্র দ্বারা প্রস্বেদন বেশি হয় ।
২. পাতার আয়তন ও সংখ্যা : পাতার আয়তন ও সংখ্যা যত বেশি হয় পত্ররন্ধ্রের সংখ্যাও তত বেশি হয় । পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা বেশি হলে প্রস্বেদনের হারও বাড়ে।
৩. পত্রফলকের গঠন : অখন্ডিত সরল পাতার ফলকে বেশি পত্ররন্ধ্র থাকে। খণ্ডিত ও যৌগিক পাতার ফলকে পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হয় । পত্ররন্ধ্রের সংখ্যার তারতম্যের কারণে প্রস্বেদন হারেরও তারতম্য হয় ।
পাতলা কিউটিকল ও একস্তরবিশিষ্ট বহিঃত্বকযুক্ত পাতায় যে হারে ত্বকীয় প্রস্বেদন হয়, পুরু কিউটিকল ও একাধিক স্তরবিশিষ্ট বহিঃত্বকযুক্ত পাতায় প্রস্বেদনের হার সে তুলনায় অনেক কম হয়।
৪. মেসোফিল টিস্যুতে পানির পরিমাণ : পাতার মেসোফিল টিস্যুতে পানির পরিমাণ বেশি হলে প্রস্বেদন হার বাড়ে পক্ষান্তরে মেসোফিল টিস্যুতে পানির পরিমাণ কমলে প্রস্বেদন হার কমে যায়।
৫. মূল-বিটপ অনুপাত : বিটপের তুলনায় মূলতন্ত্র কম হলে মাটি থেকে শোষিত পানির পরিমাণ কমে যায় । ফলে প্রস্বেদনের হারও কমে । শোষণ অঞ্চল অপেক্ষা প্রস্বেদন অঞ্চল বেশি হলে প্রস্বেদন হার কমে । পক্ষান্তরে প্রস্বেদন অঞ্চল অপেক্ষা শোষণ অঞ্চল বাড়লে প্রস্বেদন হার বেশি হয়।
৬. উদ্ভিদের জীবনীশক্তি : উদ্ভিদের জীবনীশক্তিও প্রস্বেদন হারকে প্রভাবিত করে। রোগাক্রান্ত উদ্ভিদ অপেক্ষা সুস্থ সবল উদ্ভিদ দেহে প্রস্বেদনের হার বেশি হয়।