হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

এপিডার্মিস ও এন্ডোডার্মিস কি? সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য

এপিডার্মিস কি এবং কাকে বলে?

এপিডার্মিস বা ত্বক হলো উদ্ভিদদেহে সবচেয়ে বাইরের কোষস্তর।

সংজ্ঞা : শীর্ষক ভাজক টিস্যু হতে উদ্ভিদদেহের সবচেয়ে বাইরে যে আবরণী স্তর গঠিত হয় তাকে এপিডার্মিস বা বহিঃত্ব বলে।

এপিডার্মিস এর গঠন :

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি সাধারণত একসারি প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত হয়। তবে কখনো কখনো একাধিক সারির কোষ দ্বারাও গঠিত হতে পারে। যেমন- বট, রাবার এর পাতা। এপিডার্মিসের কোষগুলো ভেতরের দিকে পাতলা কিন্তু বাইরের দিকে কাইটিন, লিগনিন, সুবেরিন, মোম প্রভৃতির আস্তরণ পড়ায় প্রাচীরটি পুরু হয়। এই পুরু প্রাচীরটিকে কিউটিকল বলে। মূলের এপিডার্মিসে কিউটিকল অনুপস্থিত এবং একে ইপিব্লেমা (Epiblema) বলে।

এপিডার্মিসের কোষগুলো সাধারণত আয়তকার, পিপাকৃতি বা নলাকার হয়ে থাকে। পাশাপাশি ঘনসন্নিবিষ্ট থাকায় কোষগুলোর মধ্যে আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকে না। প্রতিটি কোষে অল্প সাইটোপ্লাজম একটি নিউক্লিয়াস ও কোষগহ্বর থাকে। কোষগুলো ক্লোরোপ্লাস্টবিহীন শুধু পত্ররন্ধ্রের রক্ষীকোষে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে । এপিডার্মিসের কিছু সংখ্যক কোষ বর্ধিত হয়ে এককোষী, বহুকোষী শাখান্বিত রোম সৃষ্টি করে। মূলরোম সর্বদা এককোষী কিন্তু কাণ্ডরোম এককোষী ও বহুকোষী হতে পারে’।

এপিডার্মিস এর কাজ :

  • এপিডার্মিস প্রধানত উদ্ভিদের সংরক্ষণমূলক টিস্যু।
  • এপিডার্মিস টিস্যুর উষ্ণতার হ্রাস বৃদ্ধিজনিত দূরাবস্থা থেকে রক্ষা করে।
  • অত্যধিক শীত, তাপ, আলো ও বৃষ্টির প্রভাব থেকে রক্ষা করে ।
  • জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • এপিডার্মিস কোষ থেকে সৃষ্ট মূলরোম পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করে ।
  • কিউটিকল মোমস্তর দেহে পানিসাম্যতা বজায় রাখে ।
  • পানি সঞ্চয় করে রাখে।
  • ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত ত্বক খাদ্য উৎপাদনে অংশ নেয় ।
  • এপিডার্মিস এর ছিদ্র দিয়ে উদ্ভিদদেহের অভ্যন্তরে ও বাইরের পরিবেশের মধ্যে বিভিন্ন গ্যাসের আদান প্রদান করে থাকে ।
  • অনেক সময় ত্বক উদ্ভিদকর্তৃক পানির অপচয়ও বন্ধ করে থাকে ।
  • রোমযুক্ত ত্বক বিশেষ করে বিষাক্ত গ্রন্থিওয়ালা রোমযুক্ত ত্বক বিভিন্ন প্রাণীর আক্রমণ হতে উদ্ভিদকে রক্ষা করে।

এন্ডোডার্মিস কি এবং কাকে বলে?

এন্ডোডার্মিস বা অন্তঃত্বক হচ্ছে কটেক্সের একেবারে ভিতরের দিকে একটি মাত্র কোষস্তরে গঠিত একটি স্তর।

সংজ্ঞা : কর্টেক্সের নিচে এবং স্টিলির বাইরে একস্তরবিশিষ্ট টিস্যুকে এন্ডোডার্মিস বা অন্তঃত্বক বলে।

এন্ডোডার্মিস এর গঠন :

একসারি ঘনসন্নিবিষ্ট সজীব পিপাকৃতি আন্তঃকোষীয় ফাঁকবিহীন প্যারেনকাইমা কোষ দ্বারা এন্ডোডার্মিস গঠিত। পিপাকৃতি কোষগুলোর ভিতরের প্রাচীর ফিতার ন্যায় লিগনিন ও সুবেরিনের আস্তরণ দিয়ে আবৃত থাকে। একে আবিষ্কারক বিজ্ঞানী ক্যাসপেরি (Caspary, 1865) নাম অনুসারে ক্যাসপেরিয়ান ফিতা বলা হয়। মূলের এন্ডোডার্মিসে ক্যাসপেরিয়ান ফিতা থাকে তবে দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডে এর পরিবর্তে স্টার্চসিথ বা শ্বেতসার আবরণ থাকে।

এন্ডোডার্মিস এর কাজ :

  • খাদ্য সঞ্চয়।
  • ভেতরের স্টিলীয় অঞ্চলকে সুরক্ষা করা।
  • মূলজ চাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
  • বহিঃস্টিলীয় ও অন্তঃস্টিলীয় টিস্যুর মধ্যে সীমারেখা নির্দেশ করা।
  • ভাস্কুলার বান্ডলে বায়ুরোধক তথা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজ করে ।

এপিডার্মিস ও এন্ডোডার্মিস এর মধ্যে পার্থক্য :

এপিডার্মিস এন্ডোডার্মিস
এটি মূল, কান্ড ও পাতার বাইরের স্তর । এটি মূল ও কান্ডে বিদ্যমান কর্টেক্সের সর্বনিম্ন স্তর ।
এটি সাধারণত একস্তর বিশিষ্ট, তবে বহুস্তর বিশিষ্টও হতে পারে । এটি সর্বত্র একস্তর বিশিষ্ট ।
এর কোষ আয়তক্ষেত্রাকার, লম্বাটে বা বহুভুজাকৃতি । কোষগুলো সাধারণত পিপাকৃতি ।
এর বাইরের দিকে কিউটিকল থাকতে পারে । এতে কখনও কিউটিকল থাকে না ।
এতে স্টোম্যাটা ও রোম থাকতে পারে । এতে কখনও স্টোম্যাটা ও রোম থাকে না ।

Leave a Comment