সপুষ্পক উদ্ভিদের স্ত্রী জননাঙ্গ বলতে স্ত্রীস্তবকের গর্ভকেশর বা গর্ভপত্রকে (carpel) বুঝায় । প্রতিটি গর্ভকেশর তিন অংশে বিভক্ত-গর্ভমুন্ড, গর্ভদন্ড এবং ডিম্বাশয়। ডিম্বাশয়ের অভ্যন্তরে অমরার সাথে যুক্ত যে স্ফীত অংশ দেখা যায় তার নাম ডিম্বক (ovule) ।
ডিম্বকগুলো গর্ভাশয়ের অভ্যন্তরে অমরার সাথে যুক্ত থাকে । ক্ষেত্রবিশেষে একটি গর্ভাশয়ে এক বা একাধিক ডিম্বক থাকতে পারে । ডিম্বকের ভেতরে ডিম্বাণু (egg) উৎপন্ন হয় ।
সংজ্ঞা : ডিম্বাশয়ের বা গর্ভাশয়ের অভ্যন্তরে অমরার সাথে যুক্ত স্ফীত অংশকে ডিম্বক বলে ।
আরও পড়ুন : সংকরায়ন বা হাইব্রিডাইজেশন কাকে বলে? এবং প্রক্রিয়া সমূহ
ডিম্বকের প্রকারভেদ :
পরিণত ডিম্বকের গঠনপ্রকৃতি অনুযায়ী ডিম্বক নিম্নোক্ত পাঁচ ধরনের।
১। অধোমুখী (Anatropous or Inverted) : এরূপ ডিম্বক একদিকে এমনভাবে উল্টো হয়ে থাকে যেখানে ডিম্বকরন্ধ্র ও ডিম্বকনাড়ী খুব কাছাকাছি অবস্থান নেয়। দেখলে মনে হবে মূল অংশ উপুর হয়ে আছে (যেমন-মটর, ছোলা) । অধিকাংশ ডিম্বক এই প্রকৃতির ।
২। ঊর্ধ্বমুখী (Orthotropous or Anatropous) : এক্ষেত্রে ডিম্বকমূল, ডিম্বকবৃন্ত ও ডিম্বকরন্ধ্র যখন একই সরলরেখায় অবস্থান করে। দেখলে মনে হবে খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে আছে (যেমন-গোলমরিচ, পানিমরিচ)।
৩। বক্ৰমুখী (Campylotropous): এরূপ ডিম্বক এমনভাবে বাঁকানো থাকে যাতে ডিম্বকরন্ধ্র ডিম্বকনাভীর পাশে অবস্থান করে এবং ডিম্বকমূল বিপরীত দিকে অবস্থান করে (যেমন-সরিষা)।
৪। পার্শ্বমুখী (Hemi-anatropous) : এরূপ ডিম্বকের স্ফীতাংশ ডিম্বকনাড়ীর সঙ্গে আড়াআড়িভাবে এমন অবস্থায় থাকে যা অনেকটা ‘ক’ আকৃতির দেখায় (যেমন-ডায়ান্থাস)।
আরও পড়ুন : নিষেক সংজ্ঞা,প্রকারভেদ,প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা, তাৎপর্য,গুরুত্ব
৫। অর্ধমুখী (Amphiotropous) : এটি দেখতে অনেকটা অধোমুখী ডিম্বকের মতো যার দেহ এমনভাবে বাঁকানো যে দেখতে খুড়াকৃতির মনে হয় । এখানে ডিম্বকত্বক ও ভ্রূণথলি বেঁকে অবস্থান করে (যেমন-পালিক, আফিং)।
উপরোক্ত পাঁচ ধরনের মধ্যে অধোমুখী ডিম্বক অধিকাংশ উদ্ভিদে পাওয়া যায়।
ডিম্বকের গঠন :
একটি ডিম্বক নিম্নবর্ণিত অংশ নিয়ে গঠিত :
১। ডিম্বকনাড়ী (Funicle or Funiculus) : বৃত্তের মতো দেখতে যে সরু ও সংক্ষিপ্ত অংশ দিয়ে এক বা একাধিক ডিম্বক অমরার সাথে যুক্ত থাকে তাকে ডিম্বকনাড়ী বলে ।
২। ডিম্বকনাভী (Hilum) : ডিম্বকের যে স্থানে ডিম্বকনাড়ী সংযুক্ত থাকে তাকে ডিম্বকনাভী বলে ।
৩। ডিম্বকমূল (Chalaza) : এটি ডিম্বকের গোড়ার দিকের বিশেষ অংশ যা থেকে ডিম্বকত্বক উৎপন্ন হয়।
৪। ডিম্বকত্বক (Integument) : নিউসেলাসের বাইরে যে দ্বিস্তরযুক্ত আবরণক থাকে তাকে ডিম্বকত্বক বলে ।
৫। ডিম্বকরন্ধ্র (Micropyle) : ডিম্বকত্বক ডিম্বককে সম্পূর্ণ আবৃত না করায় অগ্রপ্রান্তে ডিম্বকরন্ধ্র নামের একটি ছিদ্রের সৃষ্টি হয়।
৬। ভ্রূণপোষক বা নিউসেলাস (Nucelleus) : ডিম্বকের মূল দেহকে ভ্রূণপোষক বা নিউসেলাস বলে । এটি প্যারেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত ও ডিম্বকত্বক দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে। এর মধ্যেই প্রোথিত থাকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ভ্রূণথলি।
৭। ভূণথলি(Embryo-sac): নিউসেলাসের ভেতর ডিম্বকরন্ধ্রের দিকে এটি অবস্থিত এবং ডিম্বাকৃতির বিশেষ একটি অঙ্গ। ভূণথলি নিচে বর্ণিত তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত ।
আরও পড়ুন : পার্থেনোজেনেসিস সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, উদাহরণ, গুরুত্ব
ক. গর্ভযন্ত্র : ডিম্বকরন্ধ্রের খুব সন্নিকটে ৩টি কোষ দিয়ে গঠিত ভ্রূণথলির অংশকে গর্ভযন্ত্র বলা হয় । গর্ভযন্ত্রের যে ৩ই কোষ রয়েছে তাদের মধ্যে ভেতরের দিকে যে সবচেয়ে বড় কোষটি রয়েছে সেটিকে বলা হয় ডিম্বাণু এবং বাহিরের দিকের যে ছোট কোষ দুটি রয়েছে সেগুলোকে সহকারী কোষ বলা হয় ।
খ. প্রতিপাদ কোষ : এরা প্রধানত ডিম্বকমূলের দিকে অবস্থিত এবং ভ্রূণথলীর তিনটি বিশেষ কোষ ।
গ. সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস : দুই মেরু হতে আগত এবং ভ্রূণথলির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত দুটি নিউক্লিয়াসকে মেরু নিউক্লিয়াস বলে। নিউক্লিয়াস দুটি মিলিত হয়ে যে একটি ডিপ্লয়েড (2n) নিউক্লিয়াস গঠন করে তার নাম হলো সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস।