হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

কাদিয়ানী মতবাদ কি? তাদের আকিদা ও আকিদার মূলনীতি

উপস্থাপনা : ইসরাঈল রাষ্ট্র যেমন মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের জন্য ক্যান্সার তেমনি কাদিয়ানী মতবাদও ইসলাম ধর্মের জন্য একটি মারাত্মক ব্যাধি। কাদিয়ানীদের আত্মপ্রকাশে মুসলিম সমাজ খানিকটা হলেও বাধার সম্মুখীন হয়েছে।

এ ফেতনা মূলত মুসলমানদের ঈমান ও আকিদা বিনষ্টকারী একটি ফেতনা। কাদিয়ানী মতবাদ বলতে মিথ্যা নবুয়তের দাবিদার মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মতবাদকে বোঝানো হয়। আর কাদিয়ানী ফেরকা বা কাদিয়ানী সম্প্রদায় বলতে তার অনুসারীদেরকে বোঝানো হয়েছে।

বর্তমানে এ সম্প্রদায় নিজেদেরকে কাদিয়ানী সম্প্রদায় না বলে আহমদিয়া মুসলিম জামাত বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। এছাড়াও তারা আহমদী জামাত ও মির্জায়ী নামে পরিচিত। তাদের পরিচয় ও আকিদাসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-

কাদিয়ানীদের পরিচয়

উক্ত মির্জা গোলাম আহমদ পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার অন্তর্গত কাদিয়ান নামক গ্রামের অধিবাসী। কাদিয়ান গ্রামের অধিবাসী বিধায় তাকে এবং তার অনুসারীদেরকে সংক্ষেপে ‘কাদিয়ানী বলে পরিচয় দেওয়া হয় । ১৮৪০ ইং সনে মির্জা গোলাম আহমদ জন্মগ্রহণ করেন ।

আরও পড়ুন : কাদিয়ানী কারা ? এবং এদের মতাদর্শ আলোচনা কর

মির্জা গোলাম আহমদ ছিলেন মির্জা গোলাম মুর্তজার কনিষ্ঠ সন্তান । এই পরিবারটি ছিল তৎকালীন ইংরেজ সরকারের হিতাকাঙ্ক্ষী ও ইংরেজ সরকারের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ পরিবার। তার পিতা মির্জা গোলাম মুর্তজা তৎকালীন ইংরেজ সরকারের একজন বিশেষ অনুরাগভাজন ও অনুগত কৃতজ্ঞ জমিদার ব্যক্তি ছিলেন ।

ইংরেজ সরকারের জন্য তিনি নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। সিপাহী বিপ্লবের সময় তিনি ৫০টি ঘোড়া ক্রয় করে ৫০ জন অশ্বারোহী সৈন্য দিয়ে সাহায্য করেছিলেন । অন্য একটি যুদ্ধে চৌদ্দজন অশ্বারোহী সৈন্য দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। তার জ্যেষ্ঠ ভাই মির্জা গোলাম কাদেরও বৃটিশ গভর্নমেন্টের খিদমতে আন্তরিকভাবে নিয়োজিত ছিলেন।

বৃটিশ সরকারের পক্ষ হয়ে তিনি দেশপ্রেমিক আযাদী আন্দোলনের বীর সৈনিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী প্রাইভেটভাবে মাধ্যমিক ক্লাস পর্যন্ত উর্দু, ফারসি, আরবি ও কিছু ইংরেজি পড়াশোনা করে। কয়েকবার মোক্তারি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে ব্যর্থ হন। অবশেষে শিয়ালকোট আদালতে কেরানীর চাকরি আরম্ভ করেন ।

আরও পড়ুন : গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কে?তার ভ্রান্ত দাবিসমূহ কি? ও তার আকিদা

কাদিয়ানীদের আকিদাসমূহ :

কাদিয়ানীদের আকিদাসমূহ নিম্নরূপ-

  • মুহাম্মদ (স) শেষ নবী নন; বরং মির্জা গোলাম আহমদ শেষ নবী।
  • মির্জা গোলাম আহমদ হুবহু মুহাম্মাদুর রাসূল (স)।
  • মুহাম্মদ (স) দু’বার আবির্ভূত হয়েছেন। প্রথমবার ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা নগরীতে। দ্বিতীয়বার ১৮৩৯-৪০ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান নামক গ্রামে মির্জা গোলাম মুর্তার ঔরসে চেরাগ বিবির গর্ভে।
  • মির্জা কাদিয়ানীর শিক্ষা ও তার প্রতি নাযিলকৃত অহীর মধ্যেই সমগ্র মানবজাতির মুক্তি।
  • মির্জা কাদিয়ানীকে যারা নবী হিসেবে মানবে না, তারা জাহান্নামী ও কাফের।
  • মির্জা কাদিয়ানীর বিরুদ্ধাচরণকারী পুরুষগণ জঙ্গলের শূকর, স্ত্রীগণ কুকুরী ।
  • মির্জা কাদিয়ানীকে নবী হিসেবে মান্য করা ব্যতীত ইসলাম অভিশপ্ত ও শয়তানী ধর্ম।
  • মির্জা কাদিয়ানীর লিখিত কিতাবসমূহ যারা শ্রদ্ধার সাথে দেখবে না, এতে বর্ণিত তথ্যাদি গ্রহণ করবে না, তারা জারজ সন্তান ও হারামজাদা ।
  • মির্জা কাদিয়ানী কুরআনের ভুল সংশোধনের জন্য এসেছে, যা তাফসীরের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
  • কুরআন যমীন হতে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল, মির্জা কাদিয়ানী আসমান হতে আবার যমীনে নামিয়ে এনেছে।
  • মির্জা কাদিয়ানীর মুখ হতে নির্গত সকল বাক্যই খোদার বাক্য ।
  • মুহাম্মদ (স)-এর মুজিযা তিন হাজার আর মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নিশানা দশ লক্ষ ।
  • ঈসা (আ)-এর দাদি ও নানিদের মধ্যে তিন জন বেশ্যা ছিলেন, যাদের রক্তের অংশ ঈসা (আ)-এর মধ্যে ছিল। (নাউযুবিল্লাহ)
  • মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নবী এবং রাসূল। অর্থাৎ প্রেরিতও হয়েছে এবং আল্লাহ থেকে ঐশীবাণীপ্রাপ্তও হয়েছে।

আরও পড়ুন : কাররামিয়াদের পরিচয়, উৎপত্তির ইতিহাস,আকিদা বা মূলনীতি

কাদিয়ানীদের আকিদার মূলনীতিসমূহ :

ক. বুরূজী ঝিল্লি বা ছায়া নবী হওয়া সম্পর্কে তাঁর কয়েকটি উক্তি :

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ছায়া নবী হওয়ার দাবির সপক্ষে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তার কয়েকটি উদ্ধৃতি নিম্নে পেশ করা হলো। তবে তিনি যিল্লী নবীর সাথে সাথে নিজেকে উম্মতী নবী। বলেও দাবি করেছেন।

১. “ছায়া স্বরূপ যার নাম দেওয়া হয় মুহাম্মদ ও আহমদ তার [মাসীহে মাওউদ] নবুয়তের দাবি সত্ত্বেও হযরত খাতামুন্নাবিয়্যীন থাকবেন। কেননা, এই দ্বিতীয় মুহাম্মদ ওই মুহাম্মদ -এরই রূপ এবং তারই নাম।”

২. “আমি রাসূল ও নবী, অর্থাৎ আমি পূর্ণাঙ্গ ছায়া হিসেবে। আমি এমন আয়না, যার মধ্যে মুহাম্মদী আকৃতি ও মুহাম্মদী নবুয়তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবিম্ব পড়ছে।”

৩. “আল্লাহ তা’আলা নবীজী-কে নবুয়তের সিল মোহর করে দিয়েছেন, অন্য কথায় কামালিয়াতের ফয়েজ দানের ক্ষমতা দিয়েছেন, যা আর কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি । সেজন্য তাঁর নাম হয় খাতামুন্নাবিয়্যীন। অর্থাৎ তাঁর আনুগত্য নবুয়তের কামালিয়ত দান করে । তার রূহানী তাওয়াজ্জুহ [দৃষ্টি] নবী সৃষ্টি করে।”

৪. যে সমস্ত জায়গায় আমি নবুয়ত বা রিসালাত সম্পর্কে অস্বীকার করেছি, তা শুধু এই অর্থে যে, আমি স্বতন্ত্র কোনো শরিয়ত নিয়ে আসিনি এবং পৃথক কোনো নবীও নই। তবে এই অর্থে আমি রাসূল এবং নবী যে, আমি স্বীয় পথ প্রদর্শক রাসূল থেকে অদৃশ্য বা আধ্যাত্মিক ফয়েজ ও শক্তি লাভ করে এবং নিজের জন্য সেই নাম গ্রহণ করে তারই মধ্যস্থতায় আল্লাহর পক্ষ হতে ইলমে গায়েব পেয়েছি।

কিন্তু নতুন শরিয়ত ছাড়া আমাকে নবী বলতে আমি কখনো প্রতিবাদ করিনি; বরং এসব অর্থে আল্লাহ তা’আলা আমাকে নবী ও রাসূল বলে আহ্বান করেছেন। ঝিল্লি বা ছায়া নবী হওয়ার দাবিটি একটি উদ্ভট, অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক দাবি । এটা অনেকটা হিন্দুদের অযৌক্তিক পুনর্জন্মের আকিদার নামান্তর ।

খ. স্বতন্ত্র নবী হওয়া সম্পর্কে তার কয়েকটি উক্তি :

১. “আমি সেই আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ, তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন এবং তিনিই আমার নাম নবী রেখেছেন।”

2.“আমি যে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে প্রেরিত তা প্রমাণ করার জন্য এমন অসংখ্য [বারাহীনে আহমদিয়ার বর্ণনা মত ১০ লক্ষাধিক] নিদর্শন দেখিয়েছেন যে, সেগুলো হাজার নবীর উপর বণ্টন করা হলেও এর দ্বারা তাদের সকলের নবুয়ত প্রমাণিত হতে পারত, কিন্তু এরপরও মানুষের মধ্যে যারা শয়তান তারা মানে না।”

৩. “আমি সেই আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ, তিনিই আমাকে প্রেরণ করেছেন, তিনি আমার নাম নবী রেখেছেন। তিনিই মাসীহে মাওউদ নামে আমাকে ডেকেছেন। তিনিই আমার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য বিরাট নিদর্শন পেশ করেছেন, যার সংখ্যা তিন লাখ পর্যন্ত পৌঁছেছে।”

৪. “এটা অত্যন্ত পরিষ্কার যে, এসব ইলহামের মধ্যে আমার সম্পর্কে বারবার বলা হয়েছে যে, এ ব্যক্তি আল্লাহর প্রেরিত, আল্লাহর আদেশপ্রাপ্ত, খোদার বিশ্বস্ত এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত । যা কিছু সে বলে, তার প্রতি তোমরা ঈমান আনয়ন কর। তার শত্রুগণ জাহান্নামি ।

৫. হযরত মসীহ মাওউদ [মির্জা সাহেব] নিজেকে স্পষ্টভাবে আল্লাহর নবী ও রাসূল হিসেবে পেশ করেছেন এবং নিজেকে নবী-রাসূলদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন।

পরিশেষে : কাদিয়ানী মতবাদ একটি কুফরী মতবাদ। যেহেতু তারা খতমে নবুয়তকে অস্বীকার করে সেহেতু ঐ মতবাদে যারা বিশ্বাসী, তারা সকলেই নিঃসন্দেহে কাফের। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী যে একজন বড় মাপের কাফের ছিল, তার প্রমাণ বহন করে তার মৃত্যু।

১৯০৮ সালে মির্জা কাদিয়ানী লাহোর শহরে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মলমূত্রের মধ্যে পড়ে মৃত্যুবরণ করে। অতএব কাদিয়ানী মতবাদ ইসলাম ধর্মের অন্তর্ভুক্ত কোনো বিভ্রান্ত মতবাদ নয়; বরং এটি একটি সম্পূর্ণ কুফরী ও বাতিল মতবাদ।

Leave a Comment